• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় দেবানন্দ মুখোপাধ্যায়

অচেনা সময় ও ডালগোনা কফি

এই লকডাউনের বাজারে ডালগোনা কফি করাটা শিখে নেবো ভেবেছিলাম, কিন্তু দেখলাম বড় ঝামেলার ব্যাপার।দুধ,বরফ কফি চিনি ইত্যাদি ইত্যাদি লাগবে।সে নাহয় সবই আছে বাড়িতে।
নেই যেটা সেটা হোলো ধৈর্য্য, যেটা আমার সবচেয়ে কম।কাজেই ডালগোনা কফি শুধু ফেসবুকে দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।
বাইরে টো টো করে ঘুরে বেড়ানো যার কাজ তাকে যদি গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হয়,তার ছটফটিয়ে ওঠাটাই স্বাভাবিক, তবুও থাকছি,নিজের স্বার্থে ও দেশের স্বার্থে।ভাবতেই কেমন যেন লাগছে।
একটু আগেই বললাম ধৈর্য্য কম অথচ এখন পরম ধৈর্য্যশীল হয়ে একটানা ঘরের মধ্যে কতদিন হোলো বসে আছি।
তা যাক্,ডালগোনা কফি করতে পারি বা না পারি,এখন শুধু সময় কাটানো,আর সময় কাটানো।দরজা বন্ধ, বাইরের মুখ দেখা বন্ধ, সব কিছুই কেমন অন্যরকম,একদম অচেনা এক সময়ের মধ্যে দিয়ে এই যাওয়া।সময় তো কাটতো আগেও, কিন্তু এখন তো জোর করে সময় কাটানো।
একটু ঘোরাঘুরি করে ভাতৃপ্রতিম বন্ধু নির্বানকে ফোন করলাম — কি রে ডালগোনা কফি বানাতে পারলি?
–না দাদা,বড় ঝামেলা,সবচেয়ে বড় কথা খুব ধৈর্য্যর দরকার।আমার দ্বারা হবেনা।
এবার ফোন করলাম সম্পাদক অশোক মণ্ডলকে।সেই একই প্রশ্ন।
একই উত্তর — অত ধৈর্য্য নেই।
অগত্যা হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিলাম,কেউই কি পারেনি ডালগোনা কফি করতে?
অবশ্য কেউ পারলেই বা কি হোতো? এই লকডাউনের বাজারে খেতে যাওয়া তো যেতো না।নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়ে যখনই লিখতে বসবো বলে পেন খুলে বসলাম ওমনি মোবাইলটা পিড়িং করে উঠলো।দেখি মেসেজ এসেছেঃডালগোনা কফি তৈরীর ট্রেনিং নিতে চান?
এই নং এ যোগাযোগ করুন। **********
আমার ধৈর্য্য খুবই কম জেনেও কেনো যে এ সব বিজ্ঞাপন পাঠায় কে জানে?রাগের চোটে হাতের ফোনটা ছুঁড়ে ফেলেই দিচ্ছিলাম,ভাগ্যিস ছুঁড়িনি,কারন এই সময়ের একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে সবেধন নীলমনি ঐ মোবাইলটিই।
কৌতুহল বশতঃ ফোন করলাম ঐ নম্বরে।– এটা কি ********** নং?
— হ্যাঁ।বলুন কি দরকার?
— আচ্ছা আপনারা কি ডালগোনা কফি তৈরীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছেন?
— হ্যাঁ, আপনি আগ্রহী?  কিছুনা,পে টিএমের মাধ্যমে টাকা ভরে বসে পড়ুন ফোন নিয়ে।
— শুনুন আমি ট্রেনিং চাইনা, আমি বানাতে পারবো,শুধু আমার ধৈর্য্য কম।সেটার জন্য কি করতে হবে বললে খুশী হবো।
— ও,তার জন্য আমাদের সিস্টারকনসার্ন পেশেন্স ফর পেশেন্ট
এর সাথে যোগাযোগ করুন। নাম্বার হোলো ১২৩৪৫৬৭৮৯০
–ধন্যবাদ।
আবার ফোন,এবার ধৈর্য্য বাড়ানোর জন্য ট্রেনিং। নিজেকেই নিজে বললাম লাগে রহো মুন্নাভাই।
— এটা পি এফ পি?
–হ্যাঁ। কি চান বলুন?
— আমি,আমি কেনো, আমরা তো এখন গৃহবন্দী। এই সুযোগে আমার ধৈর্য্যটা বাড়িয়ে নিতে চাই।
— আপনি পে টিএমের মাধ্যমে একশটাকা আগে ভরুন এই নম্বরে #########,তারপর আপনার কাছে মেসেজ যাবে, কি করে ধৈর্য্য  বাড়াতে হবে।
ভরলাম টাকাটা,মেসেজ এলো প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।খুলে দেখলাম লেখা আছে : ঘরে বসে বোর হচ্ছেন?
নতুন কিছু করুন।ধৈর্য্য বাড়াবার পক্ষে  আদর্শ, ঘরে বসে ডালগোনা কফি বানান।
আমি ধপ্ করে বসে পড়লাম সোফায়।
এখন দিনগোনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই! ডালগোনা কফি না হয় না হোক্, যাক,জীবনটা আগে ভেসে উঠুক পুরোনো ছন্দে,তারপর সব শিখে নেবো একে একে।।
(পুঃ ডালগোনা কফি ছাড়া সবই কাল্পনিক।)
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।