হাফেজ খাঁ ও সেলিমা বিবির মাজারে র পাশে শাল পিয়াল আর সোনাঝুরি গাছের ছায়ায় অনেক বছর পর আবার মুখোমুখি বসেছে আকাশ আর নীলিমা।শেষ চৈত্রের ফুলেভরা লাল কৃষ্ণচুড়া গাছটি যেন গাইছে।বহুদিন পরে ভ্রমর এসেছে এই লগনে।
আকাশ আর নীলিমা আজ এসেছে হেতমপুরে।নীলিমার ঠাকুমাকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিতে।ওরা দুজনেই পাশাপাশি কোয়ার্টার এ বেড়ে উঠেছে দুর্গাপুরে স্টীল টাউনশিপে।আকাশ সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে পড়েছে আর নীলিমা স্টীল কারমেলে।দুজনের বিষয় ইংরেজি।আকাশ যাদবপুরে এম এ করে উত্তাল ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে প্রায় জেলে চলে যাচ্ছিল।ওর বাবা মি মিত্র কারখানার আধিকারিক।কোনরকমে ছেলেকে এখান থেকে ছাড়িয়ে দেরাদুনে রামকৃষ্ণ মিশনের এক মহারাজ এর সাহায্যে ওখানে একটি কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেয়।
নীলিমা ও ইংরেজি তে অনার্স পড়তো তখন।আকাশের কাছে নোটস নিতো।আর দুজনে দুজনকে মনে মনে ভালোবাসতো।আকাশের এই রাজনীতি করা তারপর চলে যাওয়া নীলিমাকে বিহ্বল করে দেয়।এম এ পাশ করে দুর্গাপুরে স্কুলে চাকরি পেল।এদিকে আকাশের বাবা রিটায়ার করে কলকাতায় চলে গেলেন।নীলিমার মা চলে গেলেন না ফেরার দেশে।ক্যানসার সারলো না।বাবা গাঙ্গুলী বাবু মেয়ের পাত্র পেলেন।চেনাশোনা ঠাকুর বাবুর ছেলে ডাক্তার।মৃন্ময় খুব মেধাবী ছেলে।কিন্তু মৃন্ময় এর মধ্যে নীলিমা যেন আকাশ কে পেল না।মৃন্ময় অত্যন্ত কনজারভেটিভ আর রুড।মেনে নিতে পারলো না সংবেদনশীল নীলিমা।দুমাসেই ছাড়াছাড়ি ডিভোর্স।মৃন্ময় বিয়ে করে দুর্গাপুরেই আছে বিধাননগরে।আর নীলিমা বাবার সঙ্গে থাকে কবিগুরু তে।ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপে ছাত্র পড়িয়ে ভালো ই কাটছিল।হোলি এলেই আকাশ কে খুব মনে পড়ে নীলিমার।আকাশ ওকে লুকিয়ে রং মাখিয়ে দিতো।একবার ও আকাশ কে জড়িয়ে ধরেছিল আবেশে।হঠাৎ ওর মনে পড়লো।আকাশ কি ফেসবুকে আছে।ও ল্যাপটপ খুলে ফেসবুকে লিখলো আকাশদীপ মিত্র দেরাদুন।অমনি প্রথমেই ওর চেনা আকাশ কে দেখতে পেয়ে গেল।ও ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ওর প্রোফাইল এ দেখলো।ও রিকোয়েস্ট পাঠালো।আকাশ ও অনলাইন ছিল।সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকসেপ্ট করলো।ওরা কথা বললো।মেসেঞ্জারে।রাতে ভিডিও কল করলো।না আকাশ এখন ও একলা।সে পড়াশুনা নিয়ে আছে।বাবা মা একবছর হল অ্যাকসিডেন্টে চলে গেছেন হরিদ্বার যাবার পথে।ও সম্পূর্ণ একলা।সব জেনেশুনে আকাশ নেমে এল পাহাড় থেকে সমতলে।দুর্গাপুরে ওরা রেজিষ্ট্রি করলো।বিয়ের পর আকাশ আর নীলিমাকে নিয়ে ওর বাবা গ্রামের বাড়িতে এলেন।মায়ের আশীর্বাদ নিতে।আজ বিকেল টা হাফেজ খাঁ আর সেলিমা বিবির মাজারে ওরা গান গেয়ে কাটালো।আকাশ গাইলো অনেক দিন পর ওলির ও কথা শুনে…আর নীলিমা গাইলো আমার প্রাণের পরে চলে গেল..সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করলো নীলিমা।ক্যাপসন দিল থ্যাঙ্কু ফেসবুক।