অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় অঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়
করুণা
সকাল সকাল অর্নবের হাতে একটা লিস্ট আর কয়েকটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো শ্রীপর্না। আজ পয়লা বৈশাখ। এই দিনটাতে প্রতি বছর ভালোমন্দ খাওয়াদাওয়া হয়; ছুটি থাকলে যাওয়া হয় কোনো বাঙালী রেস্তোরায় আর ছুটি না থাকলে বাড়িতেই। রাঁধুনি মাসিকে দিয়ে জোগাড়যন্ত্র করিয়ে নিয়ে এই দিনটাতে নিজেই রান্না করে শ্রীপর্না। তবে এখন লকডাউনের ঠেলায় ঠিকে-ঝি আর রাঁধুনি মাসি অনন্তকালের জন্য ছুটি নিয়েছে। তাই শ্রীপর্না একাহাতেই ঘরের কাজ, রান্নাবান্না সব সামলাচ্ছে। অর্নবের যদিও এখন ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’, কিন্তু তাতেও দম ফেলার সময় নেই। একে তো কাজের চাপ, তার সাথে আবার জুড়ে গিয়েছে কলিগদের সাথে ফোনে ফোনে কো-অর্ডিনেট করা। তাই ইচ্ছে থাকলেও শ্রীপর্নাকে কোনো ভাবেই ঘরের কাজে সাহায্য করতে পারছে না।
লিস্টটাতে একবার চোখ বুলিয়ে নিল অর্নব। না, দামী কিছুই আনতে বলেনি শ্রীপর্না; চাল, ডাল, তেল, নুনের মতো কয়েকটা অতি প্রয়োজনীয় জিনিসের কথাই লেখা রয়েছে ফর্দতে। গতকাল ওদের বেশ কয়েকজন সহকর্মীর চাকরি গিয়েছে। লকডাউনের সুযোগ নিয়ে দেদার ছাঁটাই করছে কোম্পানিগুলো। সামনের মাসে চাকরিটা থাকবে কি না তা এখনও জানে না অর্নব। ফ্ল্যাট কেনার জন্য হাউসিং লোন নিতে হয়েছিল আর ফ্ল্যাট সাজাবার জন্য নিতে হয়েছিল পার্সোনাল লোন। চাকরি চলে গেলে লোনের কিস্তি কিভাবে দেবে ? না, তা জানা নেই অর্নবের। মাথার ভেতর দুঃশ্চিন্তারা ঘুরপাক খেতে খেতে ঘূর্ণিঝড় তৈরী করছে। আর দেরী না করে মাস্কটা পরে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল অর্নব।
পাড়ার মোড়ে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা দুঃস্থদের মধ্যে প্রয়োজনীয় খাবারদাবার বিলি করছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়েছে সাহায্যের আশায়। দোকানের দিকে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালো অর্নব। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেল লাইনের শেষপ্রান্তে। কেউ না জানলেও ও তো জানে ওর আর্থিক অবস্থা কতোটা খারাপ; মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবী হলেও অর্নবের বর্তমান অবস্থা ওই দিন-আনা-দিন-খাওয়া নিম্নবিত্ত মানুষগুলোর থেকে কিছু ভালো না…