সকালে সাড়ে সাতটা নাগাদ ঘুম ভাঙতে, চারুবাবু দেখেন ঘরে তিনি একা। “চাঁপা, চাঁপা” বলে হাঁক পেড়েই মনে পড়লো গিন্নি ঘোষণা করেছিলেন সকালে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে বাপের বাড়ি যাবেন। আজ আর ফিরবেন না। মেজাজ বিগড়ে গেলো । সকালে চাঁপার হাতে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা না খেলে দিনটা শুরুই হয় না। চারুবাবু ঘরের কাজে বেজায় কুঁড়ে। কাজের মেয়ে চায়না নটার আগে ঢুকবে না। ওর কাছে চাবি আছে। চারুবাবু সাড়ে আটটার মধ্যে অফিসে বেরিয়ে যান। ঠিক করলেন বাসে ওঠার আগে পাড়ার দোকানে দাঁড়িয়ে এক কাপ খেয়ে যাবেন। সবে এক কাপ অর্ডার করেছেন, মোবাইলটা বেজে উঠলো। “তাড়াতাড়ি চলে এসো। আরজেন্ট মিটিং ডেকেছি।“ বস মিস্টার চাকীর গলা। অতএব অর্ডার ক্যান্সেল করে তড়িঘড়ি অফিসে পৌছোলেন চারুবাবু। দেদার কাজ শেষ করে সাড়ে বারোটা নাগাদ টি-ভেন্ডিং মেশিনের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন । এবার এক কাপ না হলেই নয়! বোতাম টিপতেই টুপ টুপ করে দুটি ফোঁটা পড়ে লাল আলো জ্বলে উঠলো। চা শেষ! লাঞ্চ করতে বেশ দেরী হলো। পেট গজগজ করছে আর কেমন ঝিমুনি আসছে। চারটে নাগাদ মরিয়া হয়ে টি-ভেন্ডিং মেশিনের সামনে যেতেই আবার ফোন! ছেলের গলা “বাবা স্কুল বাস আসেনি! আমায় নিয়ে যাও।“ বসকে বলে সেদিনের মতো ছুটি নিয়ে দৌড়োলেন ছেলের স্কুলে। বাড়ি ফিরে, চায়নাকে এক কাপ চায়ের কথা বলতে যাবেন – অমনি সে বললো “দাদাবাবু, আপনে তো আছেন বাড়িতে – আমি আইজ একটু আগে যাবো! ছেলেটার জ্বর!” সাতটা নাগাদ নিজেই রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন খালি চায়ের কৌটোর মধ্যে চামচটা ঠকঠক করে যেন ঠাট্টা করছে। কোথায় যে সব রেখে যায় চাঁপা! মাথায় কেমন জেদ চেপে গেলো! চা খাবেনই আর নিজেই বানিয়ে! চা পাতা কিনে এনে এক কাপ বানিয়ে স্বর্গীয় হাসি হেসে সোফায় আয়েস করে বসলেন চারুবাবু! এবার কে আটকায় তাঁর চা খাওয়া? “আঃ” বলে মুখের কাছে কাপটি তুলেছেন আর তাঁর চোখের সামনে দিয়ে চা শুদ্ধ কাপ উড়ে গিয়ে পড়লো উল্টোদিকের সোফায়! সঙ্গে একটা রবারের বল! ক্রুদ্ধ অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে চারুবাবু দেখেন ছেলে চাঁদু ভয় ভয় মুখে একটা ব্যাট হাতে কোণে দাঁড়িয়ে!