• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় সাধন চন্দ্র সৎপথী

শেষ বিকালের আলো

তারাফেনী পুকুরের শান বাঁধানো স্নান ঘাটে সিঁড়ির ধাপে বসে আছে সুদাস। তারাফেনীর জলে শেষ বিকালের সূর্যের প্রতিবিম্ব ঝিকমিক করছে।পুকুর এখন জনশূন্য।পাড়ের রাস্তায় কোনো লোক চলাচল করছে না।শেষ চৈত্রের মৃদু বাতাসে দুলছে পাড়ের আকন্দ গাছগুলি।এই সময় আকন্দ ফুল ফোটে।আকন্দ ফুল ফুটলেই মনে হয় শিবের গাজন আসছে।
সুদাসের বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এল; মাথার উপর এক ঝাঁক পাখি মালার মতো হয়ে উড়ে গেল।এবছর শিবের গাজন নাকি হবে না! সুদাসের মন খারাপ হয়ে গেল।এবছর তাহলে শিবের ভক্ত হওয়া হবে না?সেই ছোটোবেলা থেকে প্রতিবছর পায়ে হেঁটে কান্তোড় যায় বাবার ভক্ত হতে।এবারই প্রথম ছেদ পড়বে?
কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল?মানুষ ভাবতে পারেনি-এমন দিন কোনোদিন আসতে পারে।
বাবার মুখে শোনা কথাটাও মিথ্যা হয়ে গেল!বাবা বলতো-“মানুষের সঙ্গে যত মিশবি তত শিখবি; তাই মানুষের সঙ্গে দূরত্ব করিস না।”
কিন্তু এখন যে মানুষের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে হচ্ছে ,ঘর বন্দী থাকতে হচ্ছে। মানুষের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করতে হয়েছে।
বন্ধ হয়ে গেছে রুজি রোজগারও। প্রতিদিন ভোরবেলায় উঠে পাড়ায়- পাড়ায়,গ্রামে-গ্রামে যেতো ‘নাম’ দিতে। । সংক্রান্তির দিন হাসিমুখে গৃহস্থের বাড়ির দরজায় গিয়ে দাঁড়াতো।যে যা দিত, খুশি মনে তাই নিয়ে আবার অন্য বাড়ির দরজায় হাজির হতো।
ওতেই কোনোরকমে সংসার চালিয়ে নিত বউ-মালতি।
পুরুষানুক্রমে চলে আসা সেই ‘নাম’ দেওয়া বন্ধ করতে হয়েছে।
পাশের বাড়ির পরান কাকা মোড়ে পানের দোকান করে,আর দোকান খোলেনি।কাকা সেদিন বলছিল-“বুঝলি রে সুদাস, আমাদের মতো গরিবরা বোধহয় আর বাঁচবে না; কেমন করে সংসার চালাবো রে?”
কাল সন্ধ্যাবেলায় পরান কাকার ছোটো ছেলেটা খুব চিৎকার করে কাঁদছিল- একটু দুধের জন্য।টাকা নেই বলে পরান কাকা দুধওয়ালাকে ‘না’ বলে দিয়েছে।
সুদাসের বুকের ভেতর থেকে আবার দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এল।পরান কাকার ছেলেটা দুধের জন্য কাঁদছিল, দুদিন পরে তাঁর ছেলেটা এক মুঠো ভাতের জন্যে কাঁদবে।এই দুঃসহ অবস্থা থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে?কবে আবার সব কিছু স্বাভাবিক হবে?
কী একটা পাখির ডাকে চমকে উঠল সুদাস।দেখল-সূর্য এখনও অস্ত যায়নি; সূর্যের আলো পাখায় মেখে পাখিরা উড়ছে,শিস দিচ্ছে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *