অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় যজ্ঞেশ্বর ব্যানার্জী
by
·
Published
· Updated
ভালো সিনেমা ও চশমা পরা অমিতাভ
সময়টা আটের দশকের শেষের দিক, সবে জ্ঞান হয়েছে, বাড়িতেও নতুন টিভি এসেছে, পাড়ার এটা দ্বিতীয়, ফলে সন্ধ্যেতে রীতিমত আসর বসে যেতো। আর সাপ্তাহিক সিনেমার দিনে তো যাকে বলে মেলা। তখন শনিবার হিন্দী আর রবিবার বাংলা, আমাকে কি জানি হিন্দীই বেশী টানতো, রাষ্ট্রভাষা বলে হয়তো। বসে বসে গিলতাম সে সব, ছোট তাই খুব সামনে বসার মানা ছিল। তো এরমধ্যেই একদিন দূরে বসে চিত্রহারে পেছন ফেরা নায়ককে বিনোদ মেহরা বলে চেঁচিয়ে ওঠার পর দেখা গেল সত্যিই সেটা বিনোদ মেহরাই। কিন্তু যা হয় প্রশংসার জায়গায় জুটলো তিরস্কার, ওই হবে তোমার, পড়াশোনায় মন নেয়, শুধু টিভি, পিছন থেকে আবার নায়ক চিনে ফেলা। হয়তো সেদিন কোন গার্জিয়ান এর মনে হওয়া বিনোদ খান্না বা নবীন নিশ্চল এই ছোট বালকের কাছে হেরে গিয়েছিল।
এর মধ্যেই আমি তখন অমিতাভ বচ্চনের শোলে, ডন, কুলি, দিওয়ার দেখে ফেলেছি এবং এর অ্যাকশনও রপ্ত করে ফেলেছি, বিশেষত সেটা মারার ঢিসুুম ঢিসুম আওয়াজটা। তো একদিন টিভিতে দিলো সিনেমা ‘আনন্দ’। প্রথম সিন এই চশমা, শাল পরিহিত ডাক্তাররুপী অমিতাভকে স্টেজের উপর দেখে শিউরে উঠলাম, এ অবস্থায় মারপিট করবে কি করে। ওটার জন্যই তো সিনেমা দেখতে বসা, মনে মনে চাইছি কোন ভাবে যেন তার কলেজ জীবনে ফিরে যায় সাথে মারপিট। উপায় আছে কিনা বড়দের জিজ্ঞেস করাতে যা বকুনি খেলাম তা আর বলার নয়, ভালো একটা সিনেমা দিয়েছে আর এই তোর বকবক শুরু হলো। সেই আশায় সারা সিনেমা দেখে ফেললাম,সিনেমা শেষে দেখলাম বড়দের চোখে জল,সাথে আমারও ছোট মন কেমন ভারী হয়ে গেছে, কখন মাসির কোলে বসে পড়েছি টেরই পায়নি। সেই মন খারাপটা কয়েকদিন শিশু মনে জাঁকিয়ে বসে ছিল, সেদিনই বুঝেছিলাম মারপিট ছাড়াও সিনেমা হয়।
আর এখন অব্ধি কতোবার যে আনন্দ দেখেছি তার ঠিক নেই, হ্যা ঋষিকেশ বাবুর ‘আনন্দ’। তার সব ছবিই বহুবার দেখা, যদিও শেষ সিনেমা ‘ঝুট বোলে কউয়া কাটে’ ভীমরতি ছাড়া আর কি। সত্যিই ঋষিকেশ বাবু বা বাসু বাবু কি সুন্দর ভাবে, সহজ ভাষায় মধ্যবিত্ত সমাজ জীবনকে তুলে ধরেছিলেন যা আমাদের নাড়িয়ে দিয়েছিল, কিন্তু সেটা যে কতোটা কঠিন তা এখন বুঝতে পারি। আমার প্রথম প্রেমই যে সিনেমা, ছোটোতে প্রথম মা বলার পরই বলেছিলাম সিনেমা।