আমাদের বাড়িতে কেবল ছোটোকাকার একটি নিজস্ব আয়না ছিল। আমাদের ছিল যৌথ। ছোটকা আদর করে তার নাম দিয়েছিল, আয়নামতি। আমরা কাকাকে বলতাম, আয়না কি পোষা পাখি নাকি? ছবি আকঁতে আঁকতে কাকা হেসে বলতো, বোকা, খাঁচার ভেতর অচিন পাখি, শুনিসনি। আমার আয়নার ভেতর তেমনই অচিনপাখি।
আমরা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতাম আয়নার দিকে। পাখি কই! শুধু আমি, আমার পিছনে জানালা আর তার পিছনে আকাশের মুখ দেখা যেত।
সেই ছোটোকাকা হঠাৎ নিরুদ্দেশের দেশে। সেই যে গেলেন ফিরে এলেন না আর। তবে গৃহত্যাগের পর প্রতিদিন মাঝরাতে তার শোবার ঘরের থেকে একটি পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ ভেসে আসতো। বাবা দরজা খুলে দেখতেন, সব কিছু ঠিকঠাক শুধু আয়নাটি পড়ে আছে মেঝের উপর। আয়না নয়, যেন এক খাঁচা পড়ে আছে!
একদিন বাবা দুহাতে আয়না ধরে দিলেন মেঝেতে আছাড়। ঘরময় টুকরো টুকরো ছড়িয়ে পড়লো কাচ। আমি অবাকের চোখে খুঁজছি অচিন পাখি। পাখি কই! আয়নার প্রতিটা টুকরোতে লেগে আছে শুধু মেজোকাকার কানের লতি ঠোঁটের মন্তাজ আঙুলের শিল্প মুদ্রা আর অস্থির দীর্ঘনিঃশ্বাস।