অণুগল্পে প্রকল্প ভট্টাচার্য
by
TechTouchTalk Admin
·
Published
· Updated
অসুখ
রাস্তার এই মোড়টা অন্ধকারই থাকে। এদিকে লোকজন কম বলেই হয়তো বিশেষ কেউ গা করেনা।
সুব্রত জানে। সাবধানেই বাইক চালায় রোজ, আজও চালাচ্ছিল। তবে হর্ণ দেয়নি মোড়টায় ঘোরার আগে। একটু অন্যমনস্কও ছিল, ফলে হঠাৎই একটা ছায়ামুর্তির সাথে লাগলো ধাক্কা। লোকটা হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেল।
টাল সামলে একটু দূরে বাইকটা দাঁড় করিয়ে সুব্রত নেমে এল। অন্ধকারেও ঠাহর হচ্ছে যে লোকটা বেশ বয়ষ্ক। এখনো রাস্তায় পড়ে আছে। হাত-পা ভাঙ্গলো নাকি! তাহলে বাড়তি ঝামেলা।
-কী দাদু, বাইকের আওয়াজে সরে যাবে তো! আহা, দেখি, হাতটা ধরে ওঠো…
-কানে ভালো শুনিনা বাবা… হাঁফাতে হাঁফাতে বলল লোকটা।
-লাগেনি তো বেশী?
-আমার ওষুধের শিশিটা ভেঙ্গে গেল বাবা… আবার কিনতে হবে, কিন্তু আর তো পয়সা নেই…
-ওষুধ? কই দেখি?
সুব্রত আধো অন্ধকারে দেখতে পায়, সত্যিই মাটিতে একটা শিশি ভেঙ্গে পড়ে আছে, কিছুটা তরল ছড়িয়ে আছে চারদিকে।
প্রথমেই ওর মনে হল, যাক বাবা, তাও শুধু ওষুধ। বুড়োর হাত-পা ভাঙ্গলে আজ ভালো গচ্চা যেত ওর।
-আহা রে! কতো দাম দাদু তোমার ওষুধের?
-দুশো টাকা বাবা! এই যে প্রেস্ক্রিপশন, সামনেই দোকান…
কথা না বাড়িয়ে সুব্রত প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে, গাড়ি ঘুরিয়ে ওষুধটা কিনে আনে। সঙ্গে আনে এক প্যাকেট বিস্কুট আর গ্লুকোন-ডি।
-এই নাও। এগুলো সাবধানে নিয়ে যেও। পারবে তো?
-খুব পারব বাবা! ভগবান তোমার মঙ্গল করুন!
সুব্রত আর দাঁড়ায় না। বাইক স্টার্ট দেয়। দেরী হয়ে যাচ্ছে অহেতুক।
লোকটাও আর দাঁড়ায় না, বাড়ির দিকে এগোয়। বুড়ির তার এমন অসুখ, প্রতি মাসে এই টনিকটা কিনতে হয়। কোথায় পাবে এত টাকা!
ভাগ্যিস কয়েকটা পুরনো শিশি ঘরে আছে, তাতেই জল ভরে আবার আসবে সামনের মাসে।