–“ভাত দেয় কি ভাতারে
ভাত খাই গতরে–”
সকাল থেকে গজগজ করছে চাঁপি।নাম চম্পাবতী।অপভ্রংশে চাঁপা থেকে চাঁপি।একটু দূরে মাটির মেঝেতে কাঠি দিয়ে আঁকিবুকি করছে স্বপনা।চম্পাবতীর ভাতার।সোয়ামী।
“রেতে তো খুব চাঁপু-চাঁপু ।তো,গতর লাড়াতে খুব কষ্ট বল্।ব্যাতে তো খুব সোয়াদ ।ইটা খাব নাই,উটা খাবে নাই।তিন তিনটা মেঁয়া,আরো একটা আসছে ।আর পারি নাই বাবা।খাটে খাটে অষ্টাঙ্গে কালি।”
হাঁফাতে হাঁফাতে বকতে থাকে চাঁপি।স্বপনা মেঝেতে কাটাকুটি খেলে ।আনমনা ।
“খেঁদি, পুঁটি,নেড়ী গেল কুথায়?উয়াদের তো লজর রাখতে পারুস্ ।মাটি খঁটরায়ে কি প্যাট চলবেক্?”
হাতের ঝাঁটাটা দুম করে ছুঁড়ে ফেলে চম্পাবতী দুম দুম করে কাজে বেরোল।যাবার আগে স্বপনের দিকে আগুন নিক্ষেপ করে।
“কিসের মরদ রে তুই?দু’মুঠা ভাত জুটাতে পারুস্ নাই!বিয়া করা ক্যানে?”
স্বপনদের ঘর গুলো যেন খোঁয়াড়।
বাতা, মাটি আর খড়ের ।বিছে,সাপ,পোকা,মাকড় আর পুজোর আগে থেকে শীত পর্যন্ত শ্যামাপোকার সাথে সহাবস্থান ।জনমজুর,মুনিস,কামিন,ঠিকে ঝি হিসেবে সংসার চালায় স্বপন-চাঁপা সহ আরো দশটা পরিবার ।
এই বস্তিটা নতুন ।একটু দূরে নদী ।পারাপারের জন্য নতুন ব্রীজ হয়েছে ।পাশের গ্রামকে বাঁ হাতে রেখে পিচ রাস্তা বয়ে গেছে দক্ষিণে।
বস্তির পাশে ছোট ডোবা।মানুষের প্রয়োজনের সব কাজেরই জন্য এই ডোবা।কচুরিপানা সবুজ করে রাখে এই ডোবার জল।
বস্তির ডান দিকে চিলতে জমি।ঝোপ,ঝাড়,আগাছায় ভরা।ওখানে খেলা করে খেঁদি, পুঁটির দল।ওখানে ওরা ভাঙে,গড়ে ।শরীর মন শানায়।
কিছুক্ষণ পরে স্বপনা ওঠে ।গামছার খুঁট থেকে বিড়িটা বার করে।আগুনের সন্ধানে রাস্তায় নামে ।
দূরে নদীর চরে শ্মশান ।ভাঙা মালসা,মাটির হাঁড়ি,পোড়া কাঠ,ছেঁড়া বিছানায় ভরা।
হঠাৎ হরিধ্বনি কানে এল।আবার একজন গেল ।এবার মুখাগ্নি হবে, চিতা জ্বলে উঠবে দাউদাউ ।
বিড়িটা দাঁতে কামড়ে হাঁটতে শুরু করল সে।দেশলাই নেই কাছে ।কিন্তু ওখানে অনেক আগুন ।
চাঁপার আগুন, খিদের আগুন, নেশার আগুন ।তবু স্বপনের মনে কেন আগুন নেই?স্বপন ভাবে।কোমরের গামছাটা আঁট করে স্বপন হাঁটা দেয়।কাজের খোঁজে ।গতরটা লাড়াতেই হবেক্ আজ।বিড়িটা কানে গোঁজে ।আজ গতর খাটিয়ে রোজগারের টাকায় একটা দেশলাই কিনবে সে।