পেসেন্ট দেখতে দেখতেই ফোনটা ধরে কেকা। কে? কাঁপা গলায় উত্তর,”মা আমি রাজীব, গোয়ার পথে হাইওয়েতে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, এখন মুম্বাইতেই থাকব,তেমন কোন ক্ষতি হয়নি, তুমি চিন্তা কোরো না”। ফোনটা কাটতেই কেকা ছুটলো এয়ারপোর্টের দিকে| যে কোন উপায়ে পৌঁছোতেই হবে মুম্বাই| পরের দিনের জন্য টিকিটও পাওয়া গেল| কিন্তু টিভিতে খবরটা দেখেই চমকে উঠল কেকা| সারা দেশ জুড়ে লকডাউনের জেরে সমস্ত যানচলাচল বন্ধ হয়ে যাবে আগামীকাল থেকে| ভয়ে কুঁকড়ে গেল সারা শরীর| এখন উপায়? গত সপ্তাহে সৌমিকের একটা সাক্ষাৎকার বেরিয়ে ছিল নামকরা কাগজে| সঙ্গে সঙ্গে ফোন করল পত্রিকার দপ্তরে| সমস্ত কিছু বুঝিয়েও রাজি করানো গেল না সম্পাদককে| এভাবে কারো নম্বর ঠিকানা কোনকিছুই দেওয়া তাদের কর্মপন্থার বিরুদ্ধে| বারান্দায় পায়চারি করতে করতেই মাথায় এলো শ্বশুরবাড়িতে একবার গেলে কেমন হয়? কিন্তু কোন্ মুখে যাবে সে? একদিন তো ঐ বাড়ির সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছিল কেকা। সে এক ভয়ঙ্কর ইতিহাস? সোনোগ্রাফির রিপোর্টে ধরা পড়ল, গর্ভজাত শিশুটির সম্পূর্ণ বিকাশ কোনো ভাবেই সম্ভব নয়, সিঁড়ি থেকে পরে যাওয়ার কারণে যে রক্তপাত হয়েছে তাতেই ভ্রুণের ক্ষতি হয়েছে। এদিকে সবাই জানে, কেকার পক্ষে মা হওয়া প্রায় অসম্ভবই ছিল, অনেক চিকিৎসার পর সে গর্ভবতী হয়েছে। কোন ভাবেই তাই সে গর্ভপাত করাতে রাজি হলো না। বেঁকে বসল সৌমিক।
রাজীব এমনিতে সুস্থ,শুধু কথা বলায় জড়তা আছে। কেটে কেটে কথা বলে। তবে বুদ্ধিতে তুখোড়। দিল্লির একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে ওখানেই চাকরিতে নিযুক্ত রয়েছে। কেকা স্বাস্থ্যকর্মী। দক্ষিণ চব্বিশপরগনার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পোস্টিং। ভীষন কষ্টে ছেলেকে মানুষ করেছে। আজ সেই ছেলের বিপদের সময় সে পাশে নেই এটা ভেবেই গলা শুকিয়ে আসছে যেন। ওবাড়িতে কেকাকে দেখে তো সবাই অবাক। কোন কথাই শুনল না, এককথায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল। কেকার হঠাৎই মনে পড়ল সৈকতের কথা, যে সৈকত ওদের কলেজের বন্ধু, যে কেকার ডিভোর্সের পরেও নিঃশর্তে ঘর বাঁধতে চেয়েছিল সুদূর মুম্বাইতে। ফেসবুক-এ রিকোয়েস্ট পাঠাতে কিছুক্ষনের মধ্যেই একসেপ্ট করল সৈকত। তারপর মেসেঞ্জারে সব খুলে বলতেই, সৈকত সঙ্গে করে নিয়ে এলো রাজীবকে। এখন শুধুই লকডাউন ওঠার অপেক্ষা..