• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় পূর্বা দাস

খনিজ

অটোর জন্য দাঁড়িয়েছিলাম সাউথসিটি মলের সামনে। হঠাৎ –
           যুগান্ত পার হয়ে
           যেই রেখেছি চোখটি তোমার
           চোখের পালক ছুয়ে
তনিমাই এগিয়ে এসেছে। “ইস তোকে একদম তসলিমা লাগছে রে!” একথাটা প্রচলিত। পাশ কাটিয়ে ব্রেকিং নিউজে যেতে চাই। “ওফ! কতদিন পরে বল! তোরা এখনো নেদারল্যান্ডেই
আছিস, নাকি-”  যদিও ওকে দেখে খানদানি ঘটিবাড়ির বৌই মনে হচ্ছিল; তবু অনেকদিন আগে ফেসবুকে দেখা শর্টস্কার্ট আর স্প্যাগেটি টপের তনিমা ভাবনায় আসছিল।  “নারে, আট বছর হল এদেশেই। স্পন্দন বলল, ওখানে থাকলে ছেলে, মেয়ে ভ্যালুজ শিখবে না; ফ্যামিলি, রুট বুঝবে না। তাই – “
“তো দাঁড়িয়েই সব কথা বলে ফেলবো নাকি আমরা? ফুডকোর্টে বসি। তোর বেঁচে যাওয়া ডলারগুলো সদ্গতি হবে, চল।”
” না রে, আজ না। আজ আমার জয় মঙ্গলবারের উপোষ।” আমি হা মুখটা জোর করে বন্ধ করি। সেই তনিমা, স্কুল ফেরত ফুচকা না খেলে যার মুড খারাপ হত। বললাম, লস্যি তো খাই, নিদেনপক্ষে ফ্রুটজুস। এসকেলেটরে ওপরে উঠে ছোট্ট টেবিলে মুখোমুখি। আমি অতীতাচারি। “মনে আছে তনিমা, অমিতাদির উচ্চারণ! ভূগোল ক্লাসে দিবারাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি কে হাসবৃদ্ধি বলাতে তুই মুরগিবৃদ্ধির কথা জিজ্ঞেস করেছিলি? এক সপ্তাহ সাসপেন্ড হয়েছিল গোটা এ সেকশন তোর জন্য।”  তনিমা কিন্তু বর্তমানে বেশি আগ্রহী। ” দেখ না, বাড়ির গাড়িতে এসেছি তাও দেড়টার মধ্যে না ফিরলে ও ভীষন চিন্তা করবে। চিন্টু টা আবার  দুটোয় ফেরে স্কুল থেকে। ” হীরের নাকছাবি আর ভারী বালা, হুল্লোড়ে তনিমাকে আড়াল করছিল ভীষণ। হঠাৎ চারদিকের লোকজনকে চমকে দিয়ে ও আমার দিকে ঝুঁকে আসে, “এ কিরে, নোয়া পরিস না ? শাঁখা পলাও – এঃ এয়োতির চিহ্নই রাখিস নি।”
” মানে, ঘড়ির ব্যান্ডটা তো স্টিলের। মানে, লোহারই তো।” আমার মিয়োনো স্বর।
ভয় পাচ্ছিলাম,  চুল সরিয়ে সিঁদুরও খুঁজবে নাকি?
” তোর বর, ইয়ে, মানে কোথায়?”
” কলকাতাতেই আছে। ছোটখাটো ব্যবসা করে।”
” ব্যবসা! ও আচ্ছা। চলিরে আজ।”
 গজেন্দ্রগামিনীকে লিফটে উঠিয়ে  এবারে মোবাইলে দেবলকে ধরলাম। ও প্রান্তে হৈ হৈ ” ইয়ার তুমি তো গোটা দিন গায়েব করে দিলে।  ক্লায়েন্টের সাথে আজ বহুৎ ক্যাচাল। ফিরছ?” একটু সময় নিয়ে বলি, “আধঘন্টায়। গিয়ে রিপোর্ট অ্যানালাইসিসটা নিয়ে বসব।
” না না সিস্টেম শাটডাউন করে দিয়েছি। কোথায় আছো? তোমায় পিক করেই লাঞ্চ। হেব্বি খিদে পেয়েছে।” নিচে নামতে পাঁচ মিনিটেই হাজির মহারাজ। নীল ওয়াগনার থেকে একটা শক্ত হাত চেপে ধরে আমার কব্জি। দরজা খুলে ভেতরে বসতে বসতে ভাবি লোহার ওজন কি এই হাতের থেকেও বেশি?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।