• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় শাঁওলি দে

বাবার মতো 

(১)

জলপাইগুড়ির এই রাস্তাটা বর্ষাকালে যেন এক একটা জলাশয়। হাঁটু পর্যন্ত জল জমে সে এক একাকার কান্ড। একটাই আশার কথা সারা সকাল বৃষ্টি হলেও বিকেল হতে হতে জল নেমে কোথায় যে উধাও হয়ে যায় তার আর খোঁজ পাওয়া যায় না। তবে তখন শুরু হয় কাদার অত্যাচার। হাঁটা পথের লোকজনের পা কাদায় গেঁথে গেঁথে গিয়ে সে এক বিশ্রি অবস্থাবাইক, সাইকেলের চাকার দাগ ডিজাইন হয়ে বসে থাকে রাস্তায়।
সুজন পারতপক্ষে এই রাস্তা এড়িয়ে চলে বর্ষাকালে। ওর বাড়ির পেছনের পথটাই বেছে নেয় এসময়, যদিও তা অনেকটাই ঘুরপথ। আসলে এই সুন্দর রাস্তাটা বর্ষায় যখন জঘন্য রূপ নেয় সুজন তা সহ্য করতে পারে না। মনে হয় নিজে হাতে সব ঠিক করে দেয়। আঁচলা ভরে তুলে তুলে দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে আসে এইসব জল, কাদা। কোদাল দিয়ে খুঁড়ে সাফসুতরো করে দিতে মন চায় সুজনের। 
যদিও দু’বছর আগেও এই রাস্তার হাল এমন ছিল না। জল অবশ্য আগাগোড়াই জমত। সুজনদের বাড়ি থেকে শুরু করে লম্বা রাস্তাটা চলে গিয়ে একেবারে হাই ওয়েতে মিশেছে। এই রাস্তায় গাড়িঘোড়া তেমন চলেই না, তবু প্রতি বছর বর্ষায় পাকা রাস্তাটা কিভাবে যে বেহাল হয় সুজনের তা মাথায় ঢোকে না। 
সারা পথ জুড়ে হাজারো স্মৃতি সুজনের, কত যে ঘটনা সব বুকের ভেতর লুকিয়ে রেখেছে ও। জল কাদায় ডুবে থাকা এ পথে এলে সেই স্মৃতিগুলো বারবার উঠে উঠে আসে। 

(২)

লেফটেন্যান্ট শশাঙ্ক শেখর রায়, সুজনের বাবা। ১৯৯৯ এ কার্গিলের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তিনি। সুজন তখন ক্লাস ফাইভ। বাবা কী বোঝার আগেই সে হারিয়ে ফেলেছিল সবকিছু। কফিনে বন্দি দেহটা ওই রাস্তা দিয়ে যখন বাড়িতে এসেছিল বাবার শরীরটা কেউ দেখতে দেয়নি ওকে। সুজন বারবার কাঁদছিল, পাড়ার চেনা কাকুদের বলছিল বাবার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। নাহ কেউ রাজি হয়নি সেদিন। সেদিন থেকেই বাবার জন্য বুকের ভেতর তোলপাড় করে সুজনের। বাবার আঙুলের সঙ্গে আঙুল জড়িয়ে হাঁটতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু কোথাও বাবাকে খুঁজে পায় না সে। 
পরের বছর ওর বাবার নামে নাম রাখা হয় বাড়ির সামনের রাস্তাটার। শশাঙ্ক শেখর সরণি। হঠাৎ করেই ওই সরণিতেই যেন নতুন করে বাবাকে খুঁজে পায় সুজন। ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলেই মনে হয় বাবা জড়িয়ে আছে ওকে, সামলে রাখছে। এতটুকু হোঁচট যেন না খায় সুজন।  
 বর্ষাকালে কর্দমাক্ত, নোংরা জল জমে থাকা রাস্তাটা এড়িয়েই চলে সুজন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।