• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় রুমেলা দাস

একা ভালবাসি

আড়মোড়া ভেঙে রান্নাঘরে ঢোকে মহুয়া। দেরি হয়ে গেছে। কোনমতে আধঘন্টা সময়। বাইরে খাওয়া যাবে না। পেটটা বেশ কিছুদিন ধরে ভোগাচ্ছে। পেটেরই বা দোষ কোথায়? সকালে পাওভাজি, ধোসা, নয়ত তেল চুপচুপে পরোটা আলুর ঝোল। রাতে মুরগীর কারি দুটো করে রুটি। বাইরের খাওয়া তো বাইরেরই।
পরশু অফিস মিটিংয়েই গুলগুলিয়ে উঠেছিল পেটটা। তারপর থেকে দশ কি বারোবার…। পাশের ঘরে রান্নার একটা বউ আসে দেখেছে; কিন্তু লোকজন মানেই হাবিজাবি কথাবার্তা। আরও নানা বিরক্তির একশেষ।
ঘরের গুমোট কাটাতে রান্নাঘরের জানলাটা খুলতেই ভক করে একটা পচা গন্ধ এসে ঝাপটা মারে নাকে!
‘উফ মাগো কী বিটকেল গন্ধ!’ নাক চেপে এদিকওদিক তাকায়। সাংঘাতিক! উদোম বাথরুম? পচা গন্ধটা তার মানে ওদিক থেকেই আসছে।
মানুষ না জন্তু?
সাতবছর হয়ে গেল হায়দ্রাবাদে। এই ফ্ল্যাটে শিফট করেছে বছরখানেক। সকাল ন’টায় বেরিয়ে রাত দশটায় বাড়ি ঢোকা। ব্যস্ত শিডউল। আগে অতটা খেয়াল করেনি। তাছাড়া সে সময়টাই বা কোথায়? এই সমস্ত আইটি বেসড শহরে ওর মত চাকুরে লোকজন যে যার কাজে থাকে। প্রতিবেশীর দিকে ফিরেও চায় না।
ইশ! সকালটা পুরো ঘেঁটে গেল। মানুষের এই হ্যাংলামো অসহ্য লাগে। আসলে ম্যানার্স ব্যাপারটাই নেই। লোকগুলো পাশের বাড়ির ছাদে প্লাস্টিক ঘিরে থাকছে। নীল প্লাস্টিকে ঘেরা বাথরুম পায়খানাও বানিয়েছে। কিন্তু দেখো টিভির কেবল লাইন ঠিক আছে। ছাতার মত একখানা ধাঁচা ঝুলছে। মেয়েদের হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোনও ঘোরাফেরা করে। পয়সার অভাব যদি হত তাহলে এসব এল কোত্থেকে? লোন করে নয় নিশ্চয়ই?
ওদের ছাদ আর মহুয়ার রান্নাঘর মুখোমুখি। হায়দ্রাবাদে বাড়িগুলো ঘেঁষাঘেঁষি।
মহুয়া কটমট করে তাকায়। দেখো কী বেআক্কেলে! বাথরুমের প্লাস্টিক সরিয়ে ছাদে এসেই ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। মনে আছে প্রথম প্রথম একবার মহুয়ার বর, ছেলেপুলে কোথায় জিজ্ঞেস করেছিল! গা পিত্তি জ্বলে যায়। মুখের ওপর রান্নাঘরের জানলাটা দিয়ে দেয় ও।
পেটটা গুলিয়ে ওঠে। গ্যাস ওভেনের নবটা ঘুরিয়েই বাথরুম দৌড়য়।
অফিস যেতে পারবে তো?
***
কানের কাছে একটানা বিরক্তিকর আওয়াজ! মশা!
চোখের পাতা ভারী হয়ে আছে। দুপুরে এমন ঘুম? ভাবাই যায় না।
এবার একটু ওঠা যাক।
দরজাটা খুলে বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। সকালের সেই গন্ধটা তখনও আশেপাশে। পিচ রাস্তা থেকে গরম হলকা এসে পুড়িয়ে দিচ্ছে চামড়া। সাড়ে চারটে। পেছন ফিরে ঘরে ঢুকতে গিয়েও চোখ আটকে যায়।
ওরা হাফ ল্যান্ডিংয়ে শুয়ে?
ছাদের ঘর ছেড়ে নেমে এসেছে। পাশ দিয়ে ওদের বাড়ির আরও ভাড়াটেরা যাতায়াতও করছে। ওদের ওসবের ভ্রূক্ষেপ নেই। মেয়ে মা মাদুর পেতে পাশাপাশি শুয়ে। ছাদ তেতে গেছে বলে হয়ত…!
বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে।
আজ কতদিন মা দিদির পাশে এভাবে…!
ছোটবেলায় লোডশেডিং হলে এভাবেই…!
দুই বোনে লুটোপুটি খেয়ে মায়ের আদর নিত।
আজ সাতবছর কলকাতা যায়নি। খুব রেয়ার, ফোনে কথা বলে। মহুয়া যে একা থাকতে ভালবাসে। একা এগোতেও! বেশ তো কেটে যাচ্ছে।
ঘরে চলে আসে। ভ্যাপসা গন্ধটাও হাওয়ায় পাক খেতে খেতে ঢুকে আসে ওর সঙ্গে।
মহুয়া কি সত্যিই সুখী?
ওভাবে জড়াজড়ি করেও তো থাকা যেত!
সমীরকেও কি ‘হ্যাঁ’ বলা যেত না?
বুকটা টনটন করে। পেটের ব্যথাটা কি বুকে আটকেছে?
টেবিলে রাখা ফোনটা তুলে নেয় ও।
মা, দিদি, সমীর কাকে ফোন করবে?
কাকে বলবে?
‘তোমার কাছে যেতে বড্ড …!’
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।