• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় রাজদীপ ভট্টাচার্য্য

একটা ফোন কল

না, আজও ওপার থেকে সেই এক কথা, “এই ফোন নাম্বারটির কোন অস্তিত্ব নেই – দিস ফোন নাম্বার ডাস নট এক্সিস্ট”। লাল বিন্দুতে স্পর্শ করে ফোন কেটে দিল সজল।
ঘটনা পরশুদিন রাতের। প্রায় দশটা বাজে। ডাইনিং টেবিল থেকে ডিনার সেরে পড়ার টেবিলে এসে বসেছে। রান্নাঘর থেকে বাসন ধোয়ার আওয়াজ ভেসে আসছে। পৃথা ধুয়ে মুছে গুছিয়ে রাখছে তার সংসার। ওদিকে দুই ভাই-বোনে মিলে টিভিতে দেখে চলেছে দাদাগিরি। টুকরো টুকরো শব্দ উড়ে আসছে এখানে। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল। অচেনা নাম্বার রিসিভ করে কানে নিতেই উত্তেজিত একটা নারীকন্ঠ,
— কে? সজল?
— হ্যাঁ, বলছি। কে বলছেন?
— আমি… আমি জুঁই বলছি।
ভদ্র মহিলার গলা শুনে মনে হলো গভীর সমস্যায় আছেন। কণ্ঠে ঝরে পড়ছে আতঙ্ক ও উত্তেজনা।
— হ্যাঁ বলুন। আমি কি আপনাকে চিনি?
— কি বলছ তুমি? আমি জুঁই… তোমার জুঁই-
— হ্যাঁ, মানে ঠিক…
— আমাকে এরা বাঁচতে দেবে না! তুমি নিয়ে যাও, প্লিজ!
— কোথা থেকে বলছেন আপনি? বুঝতে পারছি না-
— প্লিজ আর রাগ করে থেকো না, আমাকে নিয়ে যাও! ওই ওরা আসছে, আমি রাখছি এখন।
ফোনটা কেটে গেল। কিন্তু সজলের উপর আছড়ে পড়ল তীব্র ঝড়। কে জুঁই? কোনো পরিচিত মানুষের এমন নামতো মনে পড়ছে না কিছুতেই! অথচ ‘সজল’ নামটাতো ভুল নয়! জুঁই সজলকে এত কাছ থেকে চেনে, কিন্তু সজলতো তাকে চেনে না। কি অদ্ভুত!
রিং ব্যাক করেও কোনও লাভ হচ্ছে না। পড়ার ঘরের চেয়ারে বসে উথাল পাতাল ভাবতে শুরু করলো সজল। তবু কিছুতেই নিজের পরিচিতির মাঝে ‘জুঁই’ নামে কাউকেই খুঁজে পেল না। অনেকগুলো সম্ভাবনা মাথায় ঘাই মারলো, কোনটা ঠিক?
প্রথমত, এটা একেবারে উটকো একটা ফোন। কোনো চেনা মানুষ বদমাইশি বা মজা করছে। পরে হয়তো আবার ফোন করে স্বীকার করবে।
দ্বিতীয়ত, জুঁইকে সে হয়তো অন্য নামে চেনে, তাই বুঝতে পারছে না। তবে ফোনের কণ্ঠস্বর কিন্তু চেনা নয়।
তৃতীয়ত, জুঁই সজলকেই ফোন করেছে। সজল তার প্রেমিক বা ওরকম কেউ। কিন্তু সে অন্য কোনো সজল। এই নামটা তো বেশ প্রচলিত, তাই অন্য কাউকে করতে গিয়ে ওকে করে ফেলেছে।
এই রকম আরো কিছু ভাবনা মাথায় এলো। কিন্তু সবকিছুর পরে ভেঙে খানখান হয়ে যাওয়া রাতের নিস্তব্ধতাকে কিছুতেই ফিরিয়ে আনতে পারল না সজল। সারারাত পৃথার পাশে এদিক ওদিক করে কেটে গেল। সেভাবে ঘুম এলো না। পৃথা জিজ্ঞেস করলেও ও কিছু ভেঙে বলতে পারলো না। এমন একটা ফোন যা নিজের বউকে বলতে গিয়েও কোথাও বাঁধলো।
পরের দিন অফিসে পৌঁছে ওই নাম্বারটায় আবার ফোন করলো কয়েকবার। প্রতিবার অপেক্ষার শেষে শুনতে পেল, “এই ফোন নাম্বারটির কোনো অস্তিত্ব নেই”। উৎকণ্ঠার অবসান হলো না কিছুতেই।
তার পরের দিনও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। আচমকা একটা অস্তিত্বহীন ফোন নাম্বার যেন গরম চাটুর ওপর বসিয়ে দিয়ে গেল সজলকে। সে কিছুই করতে পারল না।
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল ওর। এতক্ষণ বিছানায় শুয়ে স্বপ্নের মধ্যেও সজল সেই অলীক কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছিল, “আমাকে এরা বাঁচতে দেবে না, প্লিজ নিয়ে যাও!”
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ওর মনে হল যেন টাইম ট্রাভেল করছে। এক অন্য যুগের সজলকে ফোন করেছে তার খুব কাছের প্রিয়জন জুঁই। যাকে এখনো সজলের কাছ থেকে চেনা হয়নি। যে ফোন নাম্বারের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে হলে স্থান আর কালকে লাফ দিয়ে পেরিয়ে যেতে হবে অনেক দূরে, একটা অন্য পৃথিবীতে!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *