• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় বনশ্রী রায়

ভিন্ন

একান্নবর্তী পরিবারের বউ হয়ে আসার পর থেকে মল্লিকার ঘরকন্না সামলাতে এক যুগ কেটে গেল… মলি মানে মল্লিকার স্বামী কুন্তল এক বেসরকারী হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক, ছেলে অনি ও মেয়ে কনি ,দুজনেই শহরের নামকরা ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলে পড়ে,কেতাদুরস্ত বনেদী পরিবারের ঘরণী হয়ে মলির দম মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায়…
বাড়ির বয়স্কদের দেখাশোনা রান্নাঘরের বাইরে জগতটা তার জন্য স্তব্ধ.. ডাক্তারবাবু কাজের ফাঁকে দিব্য পার্টি করেন ,বেড়ানোর শখে বিদেশে পাড়ি জমান বন্ধু-বান্ধবের সাথে,কখনো মলিকে বলেন না… কারণ ছাপোষা মধ্যবিত্ত মানসিকতার মেয়েটি যেন বড্ড বেমানান এ জগতে। ছেলেমেয়েরাও গার্জেন মিটিং এ মা কে নিতে চায় না কেতাবী পরিবেশে,
মলি সব কাজের শেষে দুপুরে বিশ্রামের সময় রবিঠাকুর, আশাপূর্ণা দেবী কতশত বই পড়ে।মনে পড়ে বাবা বলতেন বই সবচেয়ে ভাল সঙ্গী, বিকেলে ছাদের ঘরে দরজায় খিল দিয়ে সেতারে আশাবরী রাগ তোলে….
পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর মলির মানসিকতা, সংসার থেকে একটু ছুটি মিললেই দুদন্ড বেরিয়ে পরে…
সেদিন হঠাৎ সন্ধ্যেতে অঝোরে বৃষ্টি, মলির ফিরতে রাত নটা গড়িয়ে গেল, কুন্তল ফিরে এসেছে, ডাইনিং টেবিলে শাশুড়ির গম্ভীর মুখদর্শন.. কোনমতে রান্নাঘরে যেতেই কুন্তল চিৎকার করে ডিশ ছুঁড়ে ফেলল.. অনি-কনি মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল.. মলি বুঝে উঠতে পারলো না অপরাধ…তার আগেই বিচার হলো …”
“ওকে খোকা বাপের বাড়ি দিয়ে আয়!”
আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন চেষ্টা না করে মলি চলে এল হাজারিবাগে…
সে প্রায় বছর পাঁচেক আগের কথা, শুনেছে তার চিকিৎসক স্বামীটির তপতীর সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে…
আজ বাইশে শ্রাবণ… জীবনানন্দ সভাগৃহে নিমন্ত্রিত ডাঃ কুন্তল চ্যাটার্জী, সাথে রয়েছেন তপতী দেশমুখ… ষ্টেজের নিয়ন আলোর ফোকাসে লালপেড়ে গরদের শাড়ি,খোঁপায় জুঁইমালা দেওয়া সেতার শিল্পী মল্লিকা চ্যাটার্জী… কুন্তল মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল… অনুতপ্ত সে, হীরে চিনতে ভুল করেছে ডাক্তারবাবু…
অনুষ্ঠান শেষে মলি ফিরে যাচ্ছে হাজারীবাগের পলাশের জঙ্গলে… কুন্তল শত চেষ্টা করেও মলির শিল্পী অভিমান ভাঙাতে পারে নি,অনি কনি মায়ের কাছে মাঝে মাঝে চলে যায়, ব৷ঙলা ভাষা সংস্কৃতিকে তারা শ্রদ্ধা করতে শিখেছে…
জীবন বহমান, ভিন্নপথে বয়ে চলল…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।