• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় মৌসুমী চৌধুরী

গোপন চাবি

মুখার্জী বাড়ির অতীব রক্ষণশীল, দমবন্ধ করা পরিবেশে আমার ঠাকুমা-শাশুড়ি  করুণাবালা দেব্যা ছিলেন আমার খোলা জালানা, যা দিয়ে আমি আকাশ দেখতাম। প্রথাগত শিক্ষায় বিশেষ শিক্ষিত না হলেও করুণাবালা সমাজ নিয়ে, পরিবেশ নিয়ে,  জাতীয় ও বিশ্ব রাজনীতির উত্থান-পতন নিয়ে বিশেষ ভাবিত হতেন। রক্তদান কর্মসূচি, থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা, পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক সচেতনতা, জল সংরক্ষণ কর্মসূচি প্রভৃতি আমার সব কার্যকলাপেই তাঁর সমর্থন ছিল। “মোহর” এন.জি.ও তে আমার চাকরিটা করায় মুখার্জী বাড়ির সবার তীব্র আপত্তি ছিল। একমাত্র ঠাম্মাই তখন আমার হয়ে লড়েছিলেন।
বিয়ে হয়ে এসে থেকে শুনেছি যৌবন -কালে করুণাবালা নাকি খুব জাঁদরেল মহিলা ছিলেন। একা হাতে ছড়ির ডগায় পরিচালনা করতেন মুখার্জী বাড়ির যৌথ পরিবারকে।  তাঁর একটি মেহগনি কাঠের পেল্লাই হাতবাক্স ছিল। কিন্তু সেটার  ভেতরে কি যে ছিল কেউ কখনও জানতে পারেন নি। বাক্সের চাবিটা সবসময় ঝোলানো থাকত তাঁর কোমড়ের দড়িতে। জীবদ্দশায় তিনি কখনও কাছ ছাড়া করেন নি সেই চাবি।
আমার শাশুড়ি মা মানসী মুখার্জীর দু’ চক্ষের বিষ ছিল ঠাম্মার এই চাবি-গোপনী য়তা। মুখার্জীবাড়ির সবাই সন্দেহ করতেন বাক্সের ভেতরে বোধহয় বুড়ির সোনা, হীরের প্রচুর গয়না আছে, আর আছে বাপের বাড়ি থেকে পাওয়া দশ বিঘে চাষের জমির দলিল। সব দিয়ে যাবেন নিজের মেয়েদের, তাই বুড়ির এত গোপনীয়তা।
যাইহোক, দীর্ঘ পাঁচ বছর বার্ধক্য জনিত অসুখে ভোগার পর আজ গত হলেন করুণা- বালা। তারপরই বাড়ি সুদ্ধ সকলের কৌতুহল গিয়ে পড়ল করুণাবালার কোমড়ের চাবির ওপর। শ্মশান যাত্রার আগে বন্ধ ঘরে পুত্র-পুত্রবধূ, নাতি-নাতনীদের সামনে ঠাম্মার কোমড় থেকে  চাবিটি নিয়ে খোলা হল মেহ- গনি কাঠের  বাক্সটি। খুলতেই দেখা গেল তার ভেতরে একটি গোলাপী খাম। দর্শকগণের কৌতুহলের পারদ তখন তুঙ্গে!…দেখা গেল তাতে রয়েছে তাঁর দেহদানের অঙ্গীকার পত্র আর অনাথ আশ্রমকে তাঁর দশ বিঘে জমির দানপত্র।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।