গত তিন দিন ধরে মাছ কেন প্রায় কিছুই পেটে পড়ে নি ফুলমণির। তিপ্পানোর বি বাড়ি থেকে যা রোজকার উচ্ছিষ্ট পেত তাতে পেট না ভরলেও মনকে চুপ করিয়ে রাখা যেত। কিন্তু তিন দিন ধরে ওরা নেই। সম্ভবত বিয়ে বাড়ি গেছে। বাজারের যা আগুন দাম, গেরস্থের কলাটা মূলোটা যে পড়ে থাকবে তার জোও নেই। অগত্যা ডাস্টবিন!
কিন্তু যে গুলো পড়ে আছে সে গুলো সব খাবার অযোগ্য! সত্যিই পেলাস্টিকের দৌরাত্ম্যে বাদবাকি কিছুই আর ডাস্টবিন সাজায় না। হঠাৎ ঝুপ করে একটা শব্দ হতেই ঘোলাটে চোখ তুলে তাকাল ফুলমণি আওয়াজের দিকে।
গলি পেরিয়েই বড় রাস্তাটার মোড়ে কি যেন একটা পেলাস্টিকের মতো ঝুপ করে পড়ল। চোখ সরু করে দেখেই কেমন যেন একটা মনে হতে লাগল, পেলাস্টিকটা নড়ছে! আলো! আলো! আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে! মাছ না? হ্যাঁ মাছই তো! এখনো নড়ছে! ছুট লাগালো ফুলমণি, ওই ধ্বসে যাওয়া পাঁজর বের করা শরীর নিয়েই ছুট লাগালো ফুলমণি।
আহা মাগুর বা সিঙ্গি হবে! গদাইয়ের মা কালো জিরে কাঁচালংকা দিয়ে একটা মাগুরের ঝোল বানাতো! অমিত্তোর থেকে কম নয় সেটা! গদাইয়ের মা গেছে তা প্রায় ছ মাস হল! তার সঙ্গে মাগুরের ঝোলও চলে গেছে ফুলমণির।
আর চার কদম! রাস্তাটা এসেই গেল। চিলে ছোঁ মেরে নিলে, বা কুকুরে মুখে তুললে আর দেখতে হবে না! রাস্তা ঘাটে ভিখিরির সংখ্যাও তো কম নয়! হেই ভগমান! আর পাঁচ সাত সেকেণ্ড যেন কেউ দেখতে না পায়! উত্তেজনায় হাঁপাতে হাঁপাতে পেলাস্টিকটাকেই পাখির চোখ করে বড় রাস্তায় ঝাঁপালো ফুলমণি!
একটা মোটর বাইক ডান দিক দিয়ে আর একটা ভ্যান রিক্সা বাঁ দিক দিয়ে তেড়ে আসছিল। দেখতেও পায় নি ফুলমণি, শুনতেও পায় নি! কিন্তু কে কাকে ছাড়বে এই করতে গিয়ে দুজনেই জট পাকিয়ে গিয়ে তেড়ে গালাগাল লাগাল! ভ্যানের চাকাটা ডান হাঁটুর কাছটায় ঠুকল! লাগল বোধহয়, অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় পাস কাটিয়ে পড়ন্ত মোটবাইকের হ্যাণ্ডেলের উপর দিয়ে লাফ দিয়ে গিয়ে পৌঁছল প্যাকেটটার কাছে। খুব বাঁচান বেঁচে গেছে বোধহয়! কিন্তু সে সব দেখার সময় নেই তার। পেলাস্টিকটা তখনো খলবল করছে। পিছনে বাইকটা আর ভ্যানওলাটার গলা আর পাঁচটা জিজ্ঞাসু নজরের আওয়াজ ক্ষিণ হয়ে এসে সবুজ রঙের পেলাস্টিকটাই সারসত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য ফুলমণি পেলাস্টিকটা তুলতেই বুঝতে পারল মাছ নয় ইঁদুর। ইঁদুর? এ পাড়ায় ইঁদুর আছে নাকি? জানতো না তো আগে! কিন্তু তাই সই। এ মাগ্যির বাজারে ইঁদুরই রাজভোগ। পেলাস্টিকটা তুলে ঘুরতেই সম্বিত ফিরে পেল! কোমরের কাছটায় অসম্ভব ব্যথা। অত ভ্রুক্ষেপ করলে কি চলে? খুব খুব জোর বাঁচান বেঁচেছে বটে! কিন্তু তাতে কি? ইঁদুরটাকে এক ঝটকায় মেরে পেলাস্টিকটা তুলে নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে গলির দিকে হাঁটা লাগালো ফুলমণি! বেড়ালদের যেন কটা জান থাকে?