এই প্রথমবার শিঙাড়া বানাতে বসেছে তনু। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রোজই ভাবছে, আজই বানাব! কিন্তু সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর, বিকেলে উঠেই শিঙাড়ার জন্য উঠেপড়ে লাগতে ইচ্ছে করে না। চা, বিস্কিট দিয়েই চলছে। আজ বিকেলে আকাশে কোথা থেকে যেন মেঘ ধেয়ে এলো খানিকটা। কিছুটা বৃষ্টিও হল। তাই আজই শিঙাড়া ভাজতে বসেছে তনু। যেমন যেমন ইউটিউবে দেখেছে, ময়দার তাল বানিয়েছে সেভাবেই। পুর বানিয়েছে। এবার শিঙাড়ার পকেটে পুর ভরতে গিয়ে দেখছে, বানানোর পরে নাকটা ধেবড়ে যাচ্ছে। চোখা থাকছে না কিছুতেই। এই নিয়ে অশান্তি আর খুঁতখুঁতানি চলছে তো চলছেই ওর। এই স্বভাবটা ওর বোধহয় মজ্জাগত। কিছুতেই কিছু চট করে পছন্দ হতে চায় না। সবকিছু নিখুঁত না করলে ওর স্বস্তি নেই যেন! এখন যেমন এই নাক নিয়ে ওর ভেতরে একটা যুদ্ধ চলছে। সামান্য এইটুকুতে ওর ভেতরে যে ঝড় বয়ে চলে, আপাতভাবে সেটা কেউ বুঝবে না অবশ্য। কপালের কুঞ্চনরেখা, নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম তার সাক্ষ্য দেয় কেবল।
অনেক কসরত করে তবু নাক ঠিক হল কিছুটা। কিন্তু এই ‘কিছুটা’ ঠিক করলে যে ওর মন ভরে না। ভাজতে ভাজতে সুন্দর গন্ধ উঠেছে। রুকু ছোঁকছোঁক করছে কড়ার পাশে। এই লকডাউনে কতদিন যে এই সব ভাজাভুজি থেকে ও বঞ্চিত রয়েছে…আপাতত মায়ের রান্নাই সম্বল ওর। বারান্দায় ফোন ঘাঁটছে অনিমেষ। মগ্ন হয়ে আছে কোন ভিডিওতে। তাই চায়ের তাগাদা দিচ্ছে না। রুকুকে খেতে দেখে ও নিজেই এগিয়ে এল টেবিলের দিকে এবার। আর তখনই অনিমেষের নাকের ডগাটা চোখে পড়ল। ভোঁতা নাকটা যেন ওকে ভেঙচি কাটল এই মাত্র! রুকুর দিকে চোখ ফেরাল তনু। ওর নাকটা অবশ্য তনুর মতোই খানিকটা। টিকলো। সিঙ্কে কাপ ধুতে ধুতে ভাবছিল, অয়নের কথা। অল্প বয়সের অনেক চাহনেবালার মধ্যে অয়নের মতো কাউকে দেখেনি তনু। আর ওই অয়নকেই সব থেকে হ্যাটা করত ও! একদিন তো মুখের ওপর বলেই দিয়েছিল ওকে, ‘আয়নায় নিজের মুখ দেখেছ? নাকের ওপর দিয়ে তো ট্রাক্টর চলে গেছে!’ শুভদৃষ্টির সময়ে মোটা মাইনের পাত্রের ভোঁতা নাক দেখে তনু চোখ বুজে ফেলেছিল—এ ঘটনা একমাত্র অনিমেষই জানে অবশ্য।