শীতের সকালটা বেশ মনোরম এখানে। যে ক’দিন হ’ল এসেছি,রোজই এই সময়টা প্রাতঃভ্রমণে বেরোই।ডাক্তারের নির্দেশে চেঞ্জে এসেছি এই পাহাড়ি গ্রামে।এদিকে সকালটা বেশ তাড়াতাড়িই হয়।সন্ধেও।
প্রাতঃভ্রমণ সেরে আজ ফিরছি যখন তখন মিষ্টি একটা রোদ উঠেছে।সামনের দোকানটায় গেলাম চা খাব বলে।বাইরে বসার জন্য খুব সুন্দর বাঁশের বেঞ্চ।সেখানে বসলাম।দোকানদার সাদা কাচের কাপে ধোঁয়া ওঠা চা দিয়ে গেল।সঙ্গে লেড়ো বিস্কুট।বিস্কুটে কামড় দিতে দিতেই কিছু বাচ্চার গলার আওয়াজ পেলাম সামনের দরজাটার ওপারে।চা টা শেষ করে দোকানদারকে চায়ের দাম মিটিয়ে উঠে পড়লাম।
কৌতূহলবশত দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।দরজাটা খোলাই ছিল।দেখলাম ভেতরে জনা পাঁচেক ছয়-সাত বছর বয়সী আদিবাসী ছেলে মেয়ে খেলনাবাটি নিয়ে খেলছে।কেউ কাঁকড় বালি দিয়ে ভাত বানাচ্ছে,কেউ গাছের পাতা ছিঁড়ে শাক ভাজছে কড়ায়,কেউ জল দিয়ে পাতলা ডাল তৈরি করছে,কেউ বা কাগজছেঁড়া টাকা নিয়ে কাল্পনিক দোকানে গেল মশলাপাতি আনতে।কেউ বা ফুল তুলছে।আমি চিনতে পারলাম ওদের।ওই তো রুমি,ওই তো মনোজ,ওই তো ঝন্টু,ওই যে মিতা আর ওই তো…টাকা নিয়ে দোকানে যাচ্ছে…ওর মুখটা ওদিকে ফেরানো।আমি এখান থেকে দেখতে পাচ্ছি না,কিন্তু বুঝতে পারছি ওটা সত্তর বছর আগের আমিই।
আমার ছোটবেলার কোনো ছবি নেই।আজ থেকে সত্তর বছর আগে ছবি তোলার হুজুগও তেমন ছিল না।তাই জানাই হয়নি সেই বয়সে কেমন দেখতে ছিলাম আমি।খুব ইচ্ছে করে সেই সময়ে ফিরে গিয়ে নিজেকে একবার দেখতে।কিন্তু উপায় নেই।আজ কী যে হল! আমি নিজের অজান্তেই যেন নিজের নাম ধরে ডেকে ফেললাম, ‘শ্যা–ম–ও–ও–ল’! ওরা সকলে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।আমি ওদের কাউকেই আর চিনতে পারলাম না।