শিকড়ের সন্ধানেতে আজ “হেমিস গুম্ফা” – লিখেছেন প্রাপ্তি সেনগুপ্ত

১. শিকড়ের টানের আজকের বিস্ময় হেমিস গুম্ফা। তিব্বতিদের বৌদ্ধ মঠকে গুম্ফা বলে। সিন্ধু নদীর তীরে হেমিস গ্রামে অবস্থিত এই হেমিস গুম্ফা। বিস্ময় আর রহস্যের অন্তরালে থাকা একটুকরো ঐতিহ্য। হেমিস ভারতের সবচেয়ে বড় গুম্ফা।
২. লাদাখের বেশিরভাগ গুম্ফাই বেশ চোখে পড়ার মতো, দূর থেকেই দেখা যায়। কিন্তু এই হেমিস গুম্ফা এমনভাবে অবস্থিত, বাইরে থেকে দেখলে বোঝাই যায় না যে, এখানে এতো বড়ো, ঐশ্বর্যময় গুম্ফা লুকিয়ে থাকা সম্ভব।
৩. লেহ শহর থেকে মোটামুটি ৪৫ কি.মি দূরত্বে এই বিস্ময়কর হেমিস গুম্ফা অবস্থিত। ১৬৭২ সালে এই পুননির্মাণ করেন লাদাখের রাজা নামগিয়াল।
৪. এই গুম্ফার অনেকটাই পাহাড়ের সাথে মিশে আছে। মূল প্রবেশদ্বারে কিছু বড় চরতেন ও মণি রয়েছে।
৫. মণি হল পাথরের গাঁথনির স্তূপ যাতে ‘ওঁ মণিপদ্মে হুম’ মন্ত্র খোদাই করা থাকে। আর চরতেন হল লামাদের সমাধি।
৬. হেমিস গুম্ফার সবচেয়ে বড় মূর্তিটি তথাগত বুদ্ধের।সোনা ও মণিমুক্তো খচিত এই প্রশান্ত মূর্তির সামনে দাঁড়ালে নিজেকে বড়ো ক্ষুদ্র মনে হয়।
৭. গুম্ফায় বহু দেবী মূর্তিও আছে। তার মধ্যে একটি ব্যতিক্রমী মূর্তি হল কুমারদেবীর। যিনি পদ্মসম্ভবের স্ত্রী ও শান্তরক্ষিতের বোন।
৮. এই হেমিস গুম্ফাতে প্রতি বারো বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় নারোপা উৎসব। সাধক নারোপার উদ্দেশ্যে হওয়া এই পাহাড়ি উৎসবকে অনেকে হিমালয়ের কুম্ভমেলা বলেন।
৯. প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নারোপা ছিলেন কাগ্যু গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। তাই হেমিস গুম্ফাকে কাগ্যু বৌদ্ধগোষ্ঠীর প্রধান পীঠস্থান মানা হয়।
১০. আবার, তিব্বতিয় পঞ্জিকা মতে, চান্দ্রমাসের দশম দিনে গুরু পদ্মসম্ভব জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই প্রতি বছর সেই দিনে অনুষ্ঠিত হয় দু দিনব্যাপী হেমিস উৎসব।
১১. এই উৎসবগুলিতে যোগ দেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। রঙচঙে মুখোশের ব্যবহার এবং লামাদের ছামনৃত্য এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ।
১২. অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির জয়, এই নাচের মূল উপজীব্য।
১৩. এই গুম্ফা শুধু লামাদের বসবাসের জায়গাই নয়, স্থানীয় শিশুরা পড়াশুনাও করে এই গুম্ফায়। বহু প্রাচীন গ্রন্থ, পুঁথি, থাঙ্কা রয়েছে এই গুম্ফার লাইব্রেরিতে। এই মনেস্টারি থেকে নারোপার জীবনকাহিনী পাওয়া যায়, যা অনুবাদ করেন ঐতিহাসিক গ্রানওয়েভেল।