• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে বিতস্তা ঘোষাল (পর্ব – ১)

কু ঝিক ঝিক দিন

১.

বাড়ি কাকে বলে এই প্রশ্নটা প্রথম মনে আসে তখন ক্লাস ওয়ান কিংবা টু।তার পিছনে লুকিয়ে নানান প্রশ্নমালা।আজ সেসব গল্পই বলব।
আমার জন্ম যে বাড়িটায় সেটা আসলে একটা ভাড়া নেওয়া বাড়ির একতলার দুটো ঘর।একটা ঘরে আমার জন্মের পর খাট আসে।আর একটা ঘরে বাবার মেঝেতে বাস।কিন্তু এটাই কি আমাদের বাড়ি!তোমার বাড়ি কোথায় কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি নাকি বলতাম বেলেঘাটা থানার পাশে।তখন সবে একটা দুটো কথা বলছি।বাবা বারবার জিজ্ঞেস করতেন,ওখানে কার বাড়িতে থাকতিস?আমি বলতাম,সে বিশাল রাজার বাড়ি আমাদের।বাবা ভাবতেন,আমি বুঝি পূর্ব জন্মের কথা বলছি।তা মেয়ের পূর্ব জন্মের কথা মনে আছে,সে বিশাল রাজার বাড়ির মেয়ে ছিল,এসব কথা শুনতে কোন বাবার না ভালো লাগে!তারও লাগত।তাই রোজ রোজ উৎসাহ নিয়ে আরো বেশি প্রশ্ন করত।বাড়িতে কে কে ছিল?আমি স্কুলে যেতাম কিনা?পড়াশোনা করতাম কিনা!রবীন্দ্রনাথ নজরুলের নাম নিশ্চয়ই জানি,আর তাদের লেখার সঙ্গেও নিশ্চয়ই আমার পরিচয় আছে।একদিন বিরক্ত হয়ে উত্তর দিয়েছিলাম,এরা কে জানব কি করে?আমি কী পড়াশোনা জানতাম!
বাবা মুখ কাঁচুমাচু করে জানতে চেয়েছিল, তাহলে তুমি কী করতে ?
আমি পুতুলের বাসন গোছাতে গোছাতে উত্তর দিয়েছিলাম,কেন বাসন মাজতাম,মায়ের মতো কাপড় কাচতাম,রান্না করতাম…।
আমার শিক্ষিত, জমিদার বাড়ির ছেলে, লেখক, অধ্যাত্মবাদী বাবা ভেবেছিল,তার মেয়ে পূর্ব জন্মে নির্ঘাত গার্গী মৈত্রী অপালা না হলেও বামাবোধিনী,কিংবা রাজসুন্দরী দাসীর মত,অথবা সরলাদেবী বা স্বর্ণকুমারী দেবী বা কাদম্বিনী গাঙ্গুলির মতো কোনো বিখ্যাত মহিয়সী নারী ছিল,তা না হয়ে একেবারে বাসন মাজা,ঘরমোছা কাপড়কাচা…
সেদিনের পর থেকে বাবা আর ভুলেও এই প্রশ্ন করেন নি আমার গত জন্ম নিয়ে।
কিন্তু বেলেঘাটা থানার পাশে আমার বাড়ি কেন বলতাম তা আজও বুঝতে পারি না।তবে নকসাল পিরিয়ডে ওই থানার লাগোয়া এক বাড়িতেই বাবা মা কলকাতায় এসে উঠেছিল। আর সেই সময় থানায় মেয়ে নকসালদের উপর খুব অত্যাচার হত।অনেকে মরেও যেত,আবার এনকাউন্টারও হত।ফলে হতেই পারে সেইসব অতৃপ্ত আত্মাদের কেউ একজন আমার বাবা মাকে পছন্দ করেছিল তাদের সন্তান হবার জন্য। আর তাই হয়তো হয়েছিল। তাই ভূত জন্ম থেকে মনুষ্য জন্ম নিয়ে আমি ওখানেই আমার বাড়ি ছিল বলেছি।
তাছাড়া নিশ্চয়ই মাকে ঘুম থেকে উঠে রান্নাবান্না, ঘর মুছতে,বাসন মাজতে, কাপড় কাচতে দেখে ওসব বলেছিলাম।
কিন্তু এগুলোর সঙ্গে বাড়ির কী সম্পর্ক! আসলে তোমার বাড়ি কোথায় খুকু?কাবলিওয়ালা যেমন মিনিকে প্রশ্ন করেছিল,আমাকেও তেমন ভাবে এক আজনবী প্রশ্ন করেছিল।আমি তখন রাস্তায় খেলছি।তাকে নাকি বলেছিলাম,আমার অনেক বাড়ি।তুমি কোন বাড়ির কথা বলছ?
সে জিজ্ঞেস করেছিল,তোমার বাবা যেখানে থাকে।
আমি খুব গম্ভীর মুখে বলেছিলাম,ও,সে তো শ্মশানে থাকে।সেটা এখানে নয়,অনেক দূরে।ট্রেনে করে যেতে হয়।
তিনি কতটা অবাক হয়েছিলেন,জানি না।তবে তারপরই আমার মা আমাকে পাখিপড়া করে মুখস্ত করিয়েছিল, আমাদের বাড়ির ঠিকানা। তবে এই একটি বাড়ির ঠিকানা মুখস্থ করলে তো আমার চলবে না।কারন তখন আজিমগঞ্জ, রামপুরহাটেও আমাদের সমান যাওয়া আসা।আর বাড়ি কী!যেখানে থাকি সেটা তো বাসা!পাশের ঘরের দিদা তো তাই বলে।এটা আমাদের বাসা।তাহলে ক্যামনে তা বাড়ি হয়!
এই বাড়ি কাকে বলে,কোন বাড়িটা আমার বুঝতে বুঝতে এতগুলো বছর কাটিয়ে ফেললাম।আজও জানি না আমার বাড়ি কোনটা!

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।