সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ২৮)
আঠাশ
জ্ঞান আমার চিরতরে হারায়নি। আবার ফিরে এল চারিদিকে তাকিয়ে বুঝলাম আমি কোনো একটা হসপিটালে ভর্তি।স্যালাইন চলছে। একটু নড়াচড়া করতে গিয়ে দেখি সারা শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা। বাঁ হাতের প্লাস্টার দেখে বুঝলাম যে সেটা ভেঙেছে কোমরও তুলতে গেলেই লাগছে। কোমরটাও ভাঙলো কিনা কে জানে !মাথায় ব্যাণ্ডেজ। ওটাও বোধহয় ফেটেছে। না, এভাবে বৃথা আন্দাজ করে লাভ নেই। কারোর কাছ থেকে ক্ষতির খতিয়ান নিতে হবে। কিন্তু আমি যেখানে আছি সেটা একটা কেবিন। আমি ছাড়া আর কেউ নেই এখানে। নার্স বা কোনো অ্যাটেন্ডেন্ট রাখেনি? হ্যাঁ, একজন নার্স দেখি ঢুকছেন। আমার চোখ খোলা দেখে একটু হাসলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম। ‘সিস্টার আমার কি হয়েছে? খুলে বলুনতো। উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে বললেন,,” ব্যথা করছে না? দাঁড়ান স্যালাইনের মধ্যে পেনকিলার টা পুশ করে দিই। “আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম ‘আর সঙ্গে যে আরও দুজন ছিল তারা কেমন আছে?’নার্স ধীরে সুস্থে তার কাজ সেরে বললেন, ‘আপনি প্লিজ বেশি কথা বলবেন না। আপনার লেফ্ট এলবো ফ্রাকচার হয়েছে। মাথায় দুটো স্টিচ পড়েছে। ভাগ্য ভাল যে ইন্টারনাল হ্যামারেজ হয়নি। ইনজুরিও নেই। আজ সকালেই ডাক্তারবাবু স্ক্যান রিপোর্ট দেখে বলেছেন, আপনার কোমরও ফ্র্যাকচার হয়েছে। আপনি চব্বিশ ঘন্টা অজ্ঞান ছিলেন। ‘আমি বুঝলাম যে এ যাত্রা অল্পের ওপর দিয়েই গেছে। আমি বাকি দুজনের কথা জিজ্ঞাসা করলাম কিন্তু উনি যেন শুনেও শুনলেন না। হাতের ট্রে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
সিস্টার ওদের কোনো খবর দিলো না কেন সেই কথাই অবাক হয়ে ভাবছি এমন সময় দরজায় নক করল কেউ। দেখি এক ভদ্র মহিলা ঢুকলেন। মুখের দিকে তাকিয়েই মনে পরে গেল আরে ইনি তো মিসেস বিজয়ন। উনি হেসে আমার বেডের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, ‘হাউ আর ইউ নাউ? হাউ আর ইউ ফিলিং মিঃ চৌধুরী? আমি হেসে ভালো আছি বলতে গিয়ে চমকে উঠলাম কারণ আমারা তো ওনাকে পুলিশের লোক বলে পরিচয় দিয়েছিলাম। আমার নাম তো কিছু বলিনি। আমার মুখের ভাব দেখে মিসেস বিজয়ন বুঝতে পেরে বললেন, ‘আরে মিঃ অর্ক ডোন্ট ওরি. আমি আপনাকে পুরো বেপারটা বুঝিয়ে বলছি। আপনি আমায় নাম্বারটা দেওয়ার পর বাড়ি ফিরে কল করে নিজের নাম্বারটা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। বার দুই তিনেক ফোন করে দেখলাম আপনি আপনি ফোন ধরলেন না। হয়তো ঠিক পরেই আপনাদের অ্যাক্সিডেন্টটা হয়েছিল। স্থানীয় মানুষ আপনাদের দুজনকে এই হসপিটালে নিয়ে আসে। হয়তো আপনার ফোনে লাস্ট মিসড কল দেখে। মানে আমার নাম্বারটা পেয়ে আমাকে কেউ ফোন করে ঘটনাটা জানায়। আপনার পার্স থেকে ওরা আপনার পরিচয় পেয়েছিলো বোধহয়। আমি ঘটনাটা শুনেই ছুটে আসি এখানে। কাল থেকে এখানেই আছি। একটাই আশায়, আমার মন বলছে আপনিই আমার স্বামীর হদিশ পেতে হেল্প করতে পারেন। আমার তো আর কিছু করার নেই।’আমি সবটা বুঝলাম। ‘কিন্তু শ্রেয়ান কই? ও কেমন আছে? ‘মিসেস বিজয়ন কেই প্রশ্ন করলাম। উনি বললেন, ‘আপনার বন্ধুটি সিরিয়াস কন্ডিশনে আছেন। উনি এখন আই.সি.ইউতে আছেন। ডাক্তার বলেছে মাথায় ব্লাড ক্লট করে আছে। স্ক্যানে ইন্টারনাল হেড ইনজুরি। ডাক্তার বাহাত্তর ঘন্টার অবজারভেশনে রেখেছে। তার মধ্যে সেন্স না এলে কি হবে বলা যায়না। ‘আমার বুকটা কেঁপে উঠল। চোখে জল আসার উপক্রম। অনেক কষ্টে ইমোশন চেপে বললাম, ‘শ্রেয়ানকে একবার দেখতে পারি?’উনি বললেন নো ওয়ে আপনার উঠে বসার পারমিশন নেই। প্লিজ স্টে লায়িং।’আমি আর ওঠার চেষ্টা না করে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আমাদের সাথে একজন তৃতীয় ব্যক্তি ছিল তার কন্ডিশন কি? ও তো গুলিবিদ্ধ ছিল। ওর নাম জগা। সে কেমন আছে? ‘ভদ্রমহিলা ভুরু কুঁচকে বললেন, ‘না আপনারা দুজন ছাড়া আর তো কেউ ছিল না। ‘
ক্রমশ…