আজ শনিবার। পুঁটি, তোজো, হাম্বা আর মার্ভেল পুঁটিদের ছাদের ঘরে বসে আছে সেই কখন থেকে। বেশ কিছুক্ষন আগে পুরোনো বইয়ের তাক থেকে মার্ভেল গুলির কৌটো আর রংচটা একটা রবারের বল খুঁজে পেয়েছে। এখন ওদের সবারই ক্লাস সিক্স, এই রবারের বলটা দিয়েই বেশ কিছুদিন আগে পর্যন্ত ওরা ওদের বাড়ির নিচের গলিতে ক্রিকেট খেলেছে ঘন্টার পর ঘন্টা। তারপর তো অসুখের ভয়, বেয়াড়া ভাইরাসটার বদমাইশি আর সব তালাচাবি।ওই যে, বাবা খবর দেখতে দেখতে চোখ বড় বড় করে মা-কে যেটা এতদিন বলছে, ‘লকডাউন’ চলছে। পুঁটি জানলার বাইরে তাকিয়ে মাঝেমধ্যেই আনমনা হয়ে যাচ্ছে। তোজো একমনে আঁকার খাতার পাতার কোণায় একটা নীল রঙের বলপেন দিয়ে গোল্লা গোল্লা আর পুটকি পুটকি এঁকেই চলেছে। প্রায় দেড়মাস হতে চললো ইস্কুল বন্ধ, মিনিমাসি বাড়িতেও আর পড়াতে আসছেনা, পুঁটির গানের ক্লাসও বন্ধ, দিদিমনি ওকে বলেছে বাড়িতেই হারমোনিয়াম বাজিয়ে ‘প্যাকটিস’ চালিয়ে যেতে।যদিও ভটকেল, মানে পুঁটির ছোটভাই এই প্যাঁ-পুঁ সহ্য করতে না পেরে আজ সক্কাল সক্কাল দুমদুম করে ওর পিঠে বসিয়েছে কয়েক ঘা, পুঁটির গান শুনে তার আধপাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।ফলত, সামগ্রিকভাবে চারদিকেই একটা মনখারাপ-করা দমবন্ধ-হওয়া, বিচ্ছিরি অবস্থা, ওই ঠিক ভাতের পাতে মা যেমন জোর করে উচ্ছেসেদ্ধ খাওয়ায়, ঠিক সেরকম তেতো টেস্টের হয়ে যাচ্ছে দিনগুলো। আগের মতো সেই আইসক্রিমওয়ালাও আর ঢুকছেনা পাড়ায়, কিসব ব্যারিকেড করে তোতনদা আর সিধুদারা পাহারা দিয়ে যাচ্ছে পাড়াটা। সোম, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্রই বোঝা যাচ্ছেনা, তার আবার শনিবার।
তবে ওদের চারজনেরই মন বলছে আজ কিছু একটা ভালো খবর পাবে, ঠাম্মিও বেশ আনন্দে, মা-ও বাবার ল্যাপটপ-এ কি একটা দেখে মুচকে মুচকে হাসছে। কি জানি বাবা, হাম্বা একটু নাকিসুরে বায়না করার মতো বলে ওঠে, “আমাদের আজকের দিনটাও নষ্ট হলো বুঝলি, বেরোতে পারবোনা, খেলতেও পারবোনা, ধুর”,
আর ঠিক তখনই,
হ্যাঁ ঠিক তখনই,
টিভির এডভ্যাটাইসমেন্টের (পুঁটির কথায় এখনো শব্দগুলো ‘প্যাকটিস’ আর এডভ্যাটাইসমেন্টের গন্ডি ছাড়ায়নি)সেই খুব, খুব ভালো, একটুও-না-বকা, স্টাইলিশ বাবার মতো পুঁটির বাবা ওদের চারজনকে নিজের ঘরে ডাকলো,
“চারমূর্তি, তোমাদের জন্যে একটা সুখবর আছে, অনেকদিন তো গেছোমি হচ্ছেনা, মুখগুলো দেখে মনে হচ্ছে আমরা বাবা-মা-রাই অপরাধ করে ফেলেছি, এদিকে আয়, দেখে যা তাড়াতাড়ি,”
‘হ্যাঁ রে বাবা হ্যাঁ, এখন কয়েকঘন্টা এই ল্যাপটপ তোদের জিম্মায় থাকলো, তবে শুধু দেখবি না, তোরাও লিখবি, আঁকবি, গল্প তৈরী করে আবার সেই কাগজের নৌকোর মতো হৈচৈ করে ভাসিয়ে দিবি তোদের সব মুহূর্তগুলো।’
ওরা ভালো করে সময় নিয়ে পড়লো, ‘সাহিত্যহৈচৈ’| কোথায়?
কোথায়আবার? www.techtouchtalk.in
সক্কলে মিলে, ভটকেলকে সঙ্গে নিয়েই শুরু করে দিলো স্যাটারডে সেলিব্রেশন।
ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা যারা কবিতা লিখতে, আঁকতে, গল্প লিখতে, বেড়াতে যাওয়া নিয়ে লিখতে চাও, বা আরো অনেককিছু আমাদের সাথে বা আরো ছোট্ট বন্ধুদের সাথে ভাগ করে নিতে চাও, তারা সবগুলো পাঠিয়ে দাও আমাদের ঠিকানায়, সাহিত্যহৈচৈ, প্রত্যেকশনিবার, শুধুতোমাদেরজন্য।