• Uncategorized
  • 0

মুড়িমুড়কি -তে শুভশ্রী ভট্টাচার্য

৫) একটি ‘আদ্যন্ত’ সত্যি ঘটনা-


অনেকেই দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতে, দাঁত তুলতে ভয় পান, মায়া করেন দুটোই স্বাভাবিক কিন্তু তাঁদের একটাই কথা জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে, এগুলো সময় থাকতে মনে ছিল না?
দাঁতের রোগ সাধারণত একদিনে হয় না প্রথমে ছোট্ট গর্ত দিয়ে শুরু হয়ে দীর্ঘদিনের অবহেলার ফলে গর্ত ছড়িয়ে পড়ে ক্রমে শিরশির শুরু হয় খাবার আটকানো, দুর্গন্ধসব এড়িয়ে চলেন তারপর একদিন পাল্প এক্সপোজার হয়ে তীব্র কনকনানি, ঝনঝনানি শুরু হয় দু চারটে পেন কিলার দোকানে গিয়ে খেয়ে নেন সাময়িক উপশমে ভেবে নেন সেরে গেল নিশ্চিন্ত না কমলে পাশের বাড়ির দিদিমা বলেন পেয়ারা পাতা বেটে গরম জলে দিয়ে কুলি করতে, করেন মাসি শাশুড়ির বোনঝি জামাই বলেন রাস্তার ধারের চলমান মাইক লাগানো গাড়ি থেকে একটা সর্বব্যথাহর তেল নিয়ে দাঁতের গোড়ায় লাগাতে তা লাগান তাতে ঠোঁট পুড়ে যায়, সে যাক, ক্ষতি নেই তবু দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা আপনার মনে পড়ে না আবার চলল কিছুদিন মনে মনে ভাবছেন, এই তো গেলেই আরসিটি না কী করতে চাইবে এক কাঁড়ি টাকা খরচা তার চেয়ে আর যে কদিন টেঁকে, চালিয়ে নিই এদিকে দিক দিয়ে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বহুদিন ব্রাশ ঠেকাতেও ভয় পান ফলে অন্য দাঁতের ওপর পলেস্তারা জমতে শুরু করেছে তবু সাবধানে রেখেছেন
এদিকে পাল্প ক্রমে ক্রমে পচতে লাগল দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমতে শুরু করল আপনি ফিটকিরি দিয়ে গার্গল করলেন হারুনের খুড়তুতো পিসির কথা অনুযায়ী একটু কমলও কাজের মাসি বলল, গুড়াকু টিপে ধরলে কমে যায় তার কাছ থেকেই নিয়ে সেটাও ট্রাই করা গেল কিন্তু দাঁতের গোড়া ক্রমে ফুলে ঢোল হতে লাগল গাল ফুলে, পুরো মুখটাই ফুটবলের মত হয়ে গেল সেঁক টেক দিতে আরো বেড়ে গেল ফোলা দোকান থেকে আন্দাজে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে ফেললেন আপনার অফিসের কলিগের যখন এরকম হয়েছিল, তাকে যে ওষুধটা ডাক্তার লিখেছিলেন সেইটে আপনার ব্যথাকে সাময়িক কমাল ফুল কোর্স না খেয়েই ওষুধ খাওয়ায় ক্ষ্যান্ত দিলেন ভাবলেন, যাক ডাক্তারের ফিজটা তো বেঁচে গেল আর যে কদিন চলে চলুক তারপর আবার একদিন একই ভাবে ব্যথা মধ্যরাত্রে ঘুম ভাঙানিয়া, দুখজাগানিয়া ব্যথা আগামীকাল আপনার ভাইয়ের মেয়ের অন্নপ্রাশন ইতিমধ্যে এই ব্যথা পেন কিলারেও বশ মানছে না সেই শেষ না হওয়া ওষুধগুলো খুঁজে দেখলেন ডেট পেরোয়নি আবার টকাটক খেয়ে নিলেন কিন্তু এবারে আর এতে ব্যথা কমল না চতুর্গুণ বেড়ে গেল ব্যাকটিরিয়াগুলো এতদিনে ওষুধে রেজিস্ট্যাণ্ট হয়ে গেছে যেহেতু মাঝে বার কয়েক ওষুধটা যখন তখন খেয়ে ব্যথা কমিয়েছেন
পরদিন অন্নপ্রাশন বাড়িতে যাঁরা যাঁরা এলেন, তাঁরা তাঁদের নিজেদের দাঁত তোলার ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর সব বৃত্তান্ত বলতে লাগলেন কার দাঁত তুলতে গিয়ে চোখে পাওয়ার এসে গেছে কার ভুল করে ডেণ্টিস্ট পাশের দাঁত তুলে দিয়েছে কার সেই থেকে মাইগ্রেনের ব্যথা ধরে গেছে কার প্রেসার হাই হয়ে গেছে মোট কথা, দাঁত তোলার পর থেকে যা কিছু শরীরে হয়েছে তার জন্য তাঁরা সকলেই দায়ী করলেন ডেণ্টিস্টকে তার সঙ্গে যোগ থাক আর না থাক এসব শুনে একটু একটু যে আপনার দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ইচ্ছে জাগছিল, সেটাও মরে গেল
এভাবে একই চক্র ঘুরেই চলল চক্রবৃদ্ধি হারে ব্যথাটাও
একই ঘটনা বার সাতেক ঘটার পর একদিন ছোলাভাজা চিবুতে গিয়ে দাঁতটার ক্রাউন অর্থাৎ মাড়ির ওপরের অংশটা মুট করে ভেঙ্গে পড়ে গেল আপনি ছোলা ভেবে চিবোতে গিয়ে না পেরে বার করে দেখলেন দাঁতের অংশ এইবার আপনি হাসলে দন্তহীন অংশটা সকলকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে লাগল অফিসের এক দাদা বললেন, অমুক ডেণ্টিস্ট খুব ভাল সব দাঁত না তুলে রাখতে পারে এখন আধুনিক সব ব্যবস্থা বেরিয়েছে আরসিটি, ক্রাউন, পোস্ট কোর গুগল করে দেখ আপনি দেখলেন
ঠিক করলেন আবার যেদিন ব্যথা করবে ঠিক তার কাছে যাবেন দাঁতের গোড়া তুলতে নিশ্চয়ই খুঁড়েফুঁড়ে তুলতে হবে না তুলে রাখার চেষ্টা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে যতই হোক নিজের দাঁত বলে কথা দাঁত থাকতে যত্ন নেননি বলে আফশোসও হল একটু আরেকটু আগে গেলে তো কম টাকার ফিলিং করলেই হয়ে যেত খরচা হবে সে আর কী করা ব্যথা শুরু হতে ভাবলেন, এমাসের মাইনেটা পড়লেই যাব মাইনে পড়তে ব্যথা খানিক কমে গেল তা গেলেন
ডাক্তারকে বললেন, আমার দাঁতে তেমন ব্যথা নেই, বুঝলেন আমি দাঁতটা তুলতে চাই না ডাক্তার বললেন, কিন্তু এখন তো শুধু গোড়াটা পড়ে আছে আপনি বললেন, কেন এখন তো পোস্ট কোরটোর কিসব বেরিয়েছে আপনি করেন না? ইণ্টারনেটে দেখলাম ডাক্তার বললেন, করব না কেন, কিন্তু আপনার দাঁতের যতখানি আছে তাতে পোস্টকোর আটকানোর মত রিটেনশন পাবে না আপনি তবু পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন আপনি তুলতে একেবারেই চান না ডাক্তার বললেন, আমি তুলব মনে করেছি যখন তুলব রাখার মত হলে আমি রাখতেই বলতাম
আপনি বাড়ি গেলেন বিষণ্ণ হয়ে কলিগ দাদাকে ফোন করে বললেন, কেমন ডাক্তারের কাছে পাঠালে, কিস্যুই কাজ টাজ জানে না খালি গোঁয়ারের মত তুলে দিতে চায় তখন আরেকজন কলিগের মামাতো দেওর দক্ষিণ ভারতে গিয়ে ট্রিটমেণ্ট করাতে বললেন আপনি পুজোর ছুটিতে ঠিক করলেন ভেলোরে বেড়াতে গিয়ে দেখাবেন রথ দেখা কলা বেচা দুইই হবে
পুজোয় হল না তবে বড়দিনের ছুটিতে গেলেন ভেলোরে সেখানে একটি জায়গায় সঙ্গে সঙ্গে এক্সরে করে এক সিটিং রুটখানার যত্ন করে আরসিটি করে দিল ততদিনে আপনার ছুটি শেষ ফিরে এসে হরিণঘাটায় আপনার ভাগ্নের মামার শালার চেম্বারে গেলেন সে একটি সেফটিপিনের মত সরু ছুঁচের সঙ্গে ক্রাউন লাগিয়ে কী করে যেন গোড়াটার মধ্যে ফিট করে দিল টাকা নিল অনেক সে নিক আপনি খুশি এই জন্য বাড়িতে সেদিন বন্ধুদের ডেকে পার্টি দিলেন
কিন্তু এই গল্পের শেষটুকু বড় নিদারুণ একদিন মাংসের হাড্ডি চিবোতে গিয়ে আপনার সেই ক্রাউনে লাগানো ছুঁচটি খুলে গেল আপনি সেটা হাতে নিয়ে সেই আগের ডাক্তারের চেম্বারে গেলেন লাগিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি লাগাতে রাজি হলেন না উপরন্তু আপনাকে ভয় দেখালেন এটা লাগালে এরপরের বার ঘুমের মধ্যে সেটা গলায় বা শ্বাসনালীতে চলে যেতে পারে আপনি তাকে বলে এলেনআপনার কাছে আসাই আমার ভুল হয়েছে আপনি যে কিচ্ছু কাজ জানেন না, আগেই বুঝেছিলাম নেহাত এমার্জেন্সি তাই ফিজ না দিয়ে আপনি গটগট করে বেরিয়ে এসে স্কুটারের আয়নায় দেখে নিজেই সেটা দাঁতের রুটের গর্তের মধ্যে বসিয়ে নিলেন
তারপর… (আর কিছু লিখতে আমার সাহসে কুলোচ্ছে না আপনারা যা খুশি ভেবে নিন )
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।