পৃথিবীকুখ্যাত এক জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধানকে মার্কিন সেনাবাহিনী সিরিয়ায় এক অভিযানে খতম করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন,
“কাপুরুষ বাগদাদি কুকুরের মতো মরেছে।”
আচ্ছা এই যে “কুকুরের মতো মরেছে” বলে যে-উপমাটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিমান পুরুষ ব্যবহার করলেন, এতে কি কুকুরদের অপমান করা হল ?
একথা শুনলে কুকুরপ্রেমীরা কি প্রচণ্ড রাগ ও আপত্তি প্রকাশ করবেন ?
তাঁরা কি তারপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের গুষ্টি উদ্ধার করবেন ?
এমনকি তাঁদের কেউ-কেউ মার্কিন রাষ্ট্রপ্রতির দিকে সরাসরি আঙুল উঁচিয়ে বলবেন,
“হাও ডেয়ার ইউ !”
( যদিও সেকথা বলার জন্য একজন গ্রেটা থুনবার্গ লাগে কিংবা অ্যাসপারগার্স সিনড্রোম লাগে !)
প্রশ্নটা কিন্তু ভাবাচ্ছে।
কুকুরের অপমান বা তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের কথা হচ্ছে না। আর শুধু কুকুর কেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি যেকোনও প্রাণীর প্রতিই নিষ্ঠুর আচরণ সমর্থন করি না। এদিকে আমার শহরে পথকুকুরের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। কারণ পৌরসভা বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বীজকরণের কোনও উদ্যোগই কোনওদিন নেওয়া হয়নি। আর অন্য কোনও পশুপ্রেমী বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও এখনও পর্যন্ত এই কাজে এগিয়ে আসেননি। ফলত এই কুকুরদের যেখানেসেখানে মলমূত্রত্যাগ থেকে শুরু করে ডাস্টবিনের আবর্জনা মুখে করে রাস্তায় ছড়ানো বা রাত্রিকালীন সমবেত চিৎকারে নাগরিক জীবন বেশ খানিকটা নাজেহাল ও বিরক্ত।
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি , পশুপ্রেমীদের মধ্যে মূলত কুকুরপ্রেমীরাই সংখ্যায় বেশি। তাঁদের সারমেয়প্রেম নিয়ে আপত্তির কিছু নেই, কিন্তু তাঁদের কিছু-কিছু আচরণ অদ্ভুত লাগে।
কিছুদিন আগে পাড়ার কুকুরদের নিয়ে আমি একটি ফেসবুক-পোস্টে লিখেছিলাম, মাঝরাত্তিরে বাড়ির সামনে চিৎকারমুখর কুকুরদের তাড়াবার জন্য দোতলার বারান্দা থেকে আমি নুড়িপাথর ছুড়েছি। সেই পাথর নিপুণভাবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে এবং অক্ষত কুকুরকুল পুনরায় অল্প দূরে গিয়ে একইরকমভাবে চেঁচিয়ে পাড়া মাতিয়েছে।
তো আমার এই কুকুর-পোস্ট পড়বার পর কিছু কুকুরপ্রেমী ক্ষিপ্ত,উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।আমি যে কী নিষ্ঠুর ও নৃশংস প্রকৃতির মানুষ যে কিনা নিরীহ,অবলা কুকুরদের ঢিল ছুড়ে মারে, সেই দিকটির প্রতি তাঁরা অন্য কুকুরপ্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক দলবদ্ধভাবে আমাকে অনেক কটুকাটব্য করেন। তাঁদের দু’একজনের মন্তব্য তো সভ্যতা-শালীনতার সীমাও ছাড়িয়ে যায়।
যা-ই হোক, এই সমস্ত মন্তব্যে আমি যথেষ্ট আমোদিত হই এবং মন্তব্যকারীদের প্রতি অল্পবিস্তর আগ্রহী হয়ে পড়ি ও তাঁদের বিষয়ে কিছুদিন ধরে খোঁজখবর নিতে শুরু করি। ক্রমশ জানতে পারি, এই কুকুরপ্রেমীরা সকলেই বাড়িতে উচ্চ পেডিগ্রিজাত বিদেশি কুকুর পোষেন, অক্লেশে মাছ বা ছাগল,মুর্গির মাংস খান, পোষ্য কুকুরকেও খাওয়ান।নিজের বাড়িতে ঢোঁড়া সাপ ঢুকলেও কার্বলিক অ্যাসিড সাপের গায়ে ঢেলে তার ভবলীলা সাঙ্গ করেন,ব্যাঙের গায়ে ফিনাইল ও টিকটিকির গায়ে কেরোসিন তেল ছিটিয়ে তাদের নিষ্প্রাণ করেন, সজনে গাছের শুঁয়োপোকাদের আগুন জ্বেলে পুড়িয়ে মারেন এবং সবচেয়ে আশ্চর্যজনক যেটা তা হল, এঁদের মধ্যে দুজন কালীপুজোয় মানত-করা পাঁঠা বলি পর্যন্ত দিয়েছেন !
তথাকথিত কুকুরপ্রেমীদের এই রূপ ও বিকাশ অবলোকন করে আমি যারপরনাই আনন্দ ও পুলক বোধ করেছি।তাঁদের ‘ঘেউ-ঘেউ’ আমি মোটেই গায়ে মাখিনি।
আমি শেয়ারবাজারে টাকা খাটাই না কিন্তু রসের বাজারে রঙ্গরসের সন্ধান করে বেড়াই।
এই নশ্বর জীবন হল আমৃত্যু বিচিত্র অভিজ্ঞতার পাঠ। যে-পাঠে আনন্দ থাকে সেই পাঠ চিরকাল মনে গেঁথে থাকে।
ওইসব মহামানবের মহৎ কুকুরপ্রেম আমার পার্থিব অভিজ্ঞতার ঝুলি অতুলনীয় আনন্দপাঠে ভরিয়ে তুলেছে, এ বড় কম কথা নয় !
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন