শুনেএসেছি বাবার সাথে মেয়েদের টান নাকি নাড়ির বা ভালোবাসার। যদি কোথাও খোঁজা হয় ফুলের সাথে তার সুগন্ধ বা ফলের সাথে তার মিষ্টতার যেমন সম্পর্ক, বাবা মেয়েও নাকি ঠিক সেরকমই। শুধু শোনা নয় চাক্ষুষ দেখেওছি বটে। বাবা মেয়ের অপূর্ব মেলবন্ধন, কখনো বা মেয়ের চোখ-রাঙানি তো কখনো বাবার ভালোবাসা। কোথাও এতটুকু ফাঁকের অবকাশ নেই।
আমি বাবা এবং মা-এর এক এবং অদ্বিতীয় কন্যা সন্তান। কিন্তু সেরম ভাবে কোনো দিনও বাবা মেয়ের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি নি। সে বাবা হয়েও শুধু অধ্যাপক হয়েই রয়ে গেছে, আর আমিও ‘মেয়ে’ হয়েও শুধু ‘মেয়েই’ রয়ে গেছি। গড়ে ওঠে নি এই মেলবন্ধন, সৃষ্টি হয় নি সেই ভালবাসা। জানি না কার অক্ষমতা, হয়তো আমারই। ওই যে কথায় আছে না “কু সন্তান যদি বা, কু মাতা-পিতা কদাপি নয়”। ওই আরকি। তাই এই ‘বাবা’ নিয়ে কাব্য রচনা আমার সম্ভব নয়।
যদিও বা
“একলা পুরুষ কর্তব্যে
একলা পুরুষ পিতায়” তথাপি পিতা বড়ই অপ্রাসঙ্গিক আমার সাথে। তাই পিতা কে নেহাতই অগ্রাহ্য করে শুধুই পুরুষকে বেছে নেওয়া টাই শ্রেয়।
এখানে পিতার ছন্দপতন হলেও, পুরুষ নিয়ে দু-এক কথা বলাই যায়।
পুরুষ হলো ঠিক একটা বট গাছের মতো। একটা বট গাছের ছত্র ছায়ায় যেমন বেড়ে ওঠে হাজারো ছোট ছোট গাছ, শাখা প্রশাখায় লালন পালন করে ভিন্ন ভিন্ন পাখি থেকে নানারকম কীট-পতঙ্গ, আবার সেই বট গাছেরই কোটর এ বাসা বানিয়ে প্রাণ ধারণ করে বিভিন্ন প্রাণী। ঠিক সেরকমই একজন পুরুষের ছত্র ছায়ায় বেড়ে ওঠে একটা পরিবার। সেই পুরুষ এর দ্বারা প্রতিপালিত হয় পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্য। পুরুষ ও নিজেকে গড়ে তোলে একজন পালক এর ভূমিকায়। প্রতিটা সূক্ষ্মাতি সূক্ষ দায়িত্ব কর্ত্যব্যে রতো হয়। নিজের চাওয়া পাওয়া আকাঙ্ক্ষা ভালোবাসা সব ভুলে মেতে ওঠে পরিবার পালনে।
একটা বট গাছ যেমন বছর এর পর বছর এক জায়গায় একই ভাবে হাজারো বৃষ্টি দুর্যোগের মধ্যেও তার লালন পালন বন্ধ করে না, ঠিক সেরকমই একজন পুরুষ ও হাজারো অসময়, ঝড়-ঝাপটায় তার পালক সত্তা বন্ধ না করে একই সূত্রে আগলে রাখে সেই পরিবার টিকে।
পাশাপাশি বট গাছকে যেমন গাছেদের পিতা হিসাবে দেখা হয় ঠিক সেরকম ভাবেই পুরুষ ও সর্বোপরি পিতা, এছাড়াও কখনো দাদা, মামা বা কাকা ইত্যাদি হিসাবে পালকের ভূমিকা নিভিয়ে চলে। সময়ের সাথে সাথে বটের ঝুড়ি থেকে যেমন আর একটি বটের সৃষ্টি হয় ঠিক তেমন এক পুরুষের থেকেও জন্ম নেয় আরেক টা পরিবার। পুরুষের ছোয়ায় গড়ে ওঠে পারিবারিক আবধ্যতা।
তাই একজন পুরুষের সংজ্ঞা কখনই ধর্ষক বা প্রতারক হওয়া উচিত নয়। কারণ ধর্ষক বা প্রতারক পুরুষ হয় না। যারা নারী কে ভোগ্য পণ্য মনে করে বা যারা ভীড় বাসে-ট্রামে নারীর সুযোগ নেয়, তারা আর যাই হোক পুরুষ হতে পারে না। কারণ বট গাছকে আমরা শুধুই লালন এবং পালন করতে দেখেছি, বটের ঝুড়িতে প্রাণ হানি হয়েছে কোনো প্রাণীর এমন টা হয় নি কোনোদিনও।
তাই সবসময় নারিবাদিত্যের ঝড় না তুলে পুরুষের পাশে দাঁড়ান, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। একজন নারীর সন্মান রক্ষায় যেমন একজন পুরুষ এগিয়ে আসে সবসময়, ঠিক তেমনি একজন নারীরও উচিত পুরুষের সমান রক্ষায় এগিয়ে আসা।