• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ১৫)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৩৪
বিকেলবেলা। গ্রামের একটি বাস স্টপেজ। একটা পাড়াই বলতে গেলে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ কিছু মানুষ। একটা গাছের গোড়া গোল করে বাঁধানো। ঠিক তার পাশেই একটা ঠাকুরের বেদি। দু’একটা দোকান।
রাস্তার ওপারে একটা টাইম কল। মুখ দিয়ে অনবরত জল পড়ে যাচ্ছে। বেশ জোরেই। আমি এ নিয়ে দু’এক কথা বলতেই দু’একজন কথা বলে উঠল। তারা বললো, কল বন্ধ করে কিছু করতে গেলে পাইপ ফেটে যাবে। আমি অন্য টাইমকলের কথা উল্লেখ করে বললাম, কেন, অন্যান্য কলের পাইপগুলো তো ফেটে যাচ্ছে না। ওরা বললো, এই কলটা অন্য জাতের। আমি আর কথা বাড়ালাম না।
একটা জিনিস লক্ষ্য করে আমি অবাক হলাম। আশে পাশে কত মানুষ। এদের মুখে একবারেও জন্যেও আমি জল নিয়ে কোনো কথা শুনলাম না। আমি নিজে থেকে বললাম কিন্তু কেউ ব্যাপারটাকে বিশেষ পাত্তা দিল না। একজন শুধু বললো, মুখে প্যাঁচ একটা লাগানো হয়েছিল কিন্তু একদিন যেতে না যেতেই হাওয়া।
নিজেরটুকু ছাড়া দেশের অন্য আর সকল কিছুকে আমার বলে দাবি করার ইচ্ছাটা এদেশের মানুষদের মধ্যে জন্মাল না কেন? শুধু তাই নয়, কৃত কর্মের জন্য মানুষের কোনো অপরাধবোধ নেই, লজ্জা তো কোন কালে ত্যাগ করে ফেলেছে।
গ্রাম বলেই চিন্তাটা বেশি হয়। শহরের ইঁট কাঠ পাথরের মানুষ তো নয়। মাটির মানুষেরাও এসব নিয়ে ভাববে না ? আমরা তাহলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব ?
ওখানে যতক্ষণ ছিলাম কি অস্বস্তিটাই না হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, এখনই বাস চলে আসুক। আমি এখান থেকে পালিয়ে যাই।
৩৫
সন্ধে নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশ আস্তে আস্তে নির্জনতায় ডুবে যাওয়া, বাসায় ফেরা পাখিদের চিৎকার চেঁচামেচি। ঠিক এর পরেই কানে আসত কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম। আর কান পেতে শুনতাম সন্ধের আবহসঙ্গীত। একটু পরেই শুরু হতো সন্ধের আরতি। দেখতাম মা হাতজোড় করে ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো কোনো দিন দেখতাম মা ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কাঁদছে। আজও যখনই কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ কানে আসে তখনই ভেতর থেকে আমাকে কে যেন টেনে ধরে। সন্ধের আবহসঙ্গীতে আবিষ্ট হয়ে পড়ি। পার্থিব জগৎ থেকে আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাই।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।