• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৫৩)

পর্ব – ৫৩

তার মানে হল আপনি আপনার আপনজনকে বাঁচাতে ব‍্যস্ত, কিন্তু আসলে সমস‍্যাটি কি ও কেন, সেটা জানার ব‍্যাপারে আপনার আগ্রহ কম।

দ‍্যাখো শ‍্যামলী, আমি কাজের ভাগাভাগিতে বিশ্বাস করি। কাজের ভাগাভাগি না হলে সমাজটা গড়েই উঠতে পারত না। গুরুদেব একটা সমস্যায় আছেন। ওঁর সমস্যা উনি এক পলকে নিজেই মিটিয়ে নিতে পারেন। শুধু আমাদের একটু সুযোগ করে দিচ্ছেন, যাতে আমাদের একটু পুণ‍্য সঞ্চয় হয়।
তো অরুণদা, কাজের ভাগাভাগির সূত্রে আপনার দায় পড়েছে টাকা যোগাড়ের। তাই তো?
গম্ভীর মুখে অরুণ বললেন, ধরে নাও তাই।
তো অরুণদা, আপনার গুরুদেবের উপর এই উপদ্রব কেন, কি করে, কি ভাবে, এইসব প্রশ্নে মাথা গলাবার দায় কার উপর বর্তেছে?
সে নিয়ে আমি ব‍্যতিব‍্যস্ত ন‌ই। গুরুদেব একটা ষড়যন্ত্রের শিকার। একটা মেয়েঘটিত ব‍্যাপার না তুললে এমন হ‌ই হ‌ই পাকাতো না মোটেও।
শুনেছি পুলিশ ওঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের কেস দিয়েছে।
অরুণ বললেন, তুমি এই শব্দটাকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছ বুঝতে পারছি। কিন্তু কেন বলো তো?
অরুণদা, এটা একটা মারাত্মক ধাঁচের অপরাধ তাই। আইপিসি’র  তিনশো পঁচাত্তর আর তিনশো ছিয়াত্তর ধারা বলছে যে, ধর্ষণ একটি কগনিজেবল মানে গুরুত্বপূর্ণ, নন বেইলেবল মানে জামিন‌ অযোগ্য, আর নন কমপাউণ্ডেবল অফেন্স। মানে, যে মেয়ে দুজন ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন, ওঁদের ভয় দেখিয়ে, বা বাড়ির লোকজনকে কিনে নিয়ে মামলা তুলে নেওয়া যাবে না।
দ‍্যাখো, আমি আমার শ‍্যালিকার কাছে আইনের পাঠ নিতে তো আসি নি। আর তোমার পার্সোনাল রোজগারের টাকার বখরা চাইতেও আসি নি।
এমন সময় শশাঙ্ক পাল এসে ঢুকলেন। জামাইয়ের দিকে চেয়ে বললেন, দ‍্যাখো অরুণ, আমার সময়কালে আমি এই আশ্রমে কম দেওয়া থোওয়া করি নি। সে হিসাব আমি রাখি নি। কিন্তু আমার সামর্থ্য ডিঙিয়ে আমি অনেক কিছু করেছি। আমার এখন বিপদ চলছে। বাড়ি থেকে বেরোনো বারণ, তোমরা আমাকে আর হিসেবের মধ‍্যে ধোরো না।
হুঁ। বুঝতে পারলাম। লেবারকে বোনাস দিলেন। এ তল্লাটে আর কোনো কারখানায় এখনো বোনাস হয় নি। কিন্তু গুরুদেবের জন‍্য আপনার কোনো কর্তব্য নেই।
শুনুন অরুণদা, বাবার কারখানা চালায় আসলে ওই লেবারগুলো। আমি সব পার্টস এর নাম পর্যন্ত জানি না। কিভাবে ফিট করতে হয়, তার প্রশ্ন‌ই ওঠে না। কলেজের ক্লাস সামলে কারখানায় ঢুকে এটা ওটা বোঝার চেষ্টা করছি। লেবার দের যথাযথ বোনাস দেওয়া আমার নৈতিক দায়বদ্ধতা। ও টাকা ওদের। এটা আসলে বকেয়া মজুরি। আমরা পরে মেটালাম।
বাসন্তী পায়ে পায়ে প্লেটে কিছু মিষ্টি সাজিয়ে ঢুকলেন। নিজের মেয়েকে বললেন, কটা টাকার জন্য এত তর্ক করিস কেন মা? জীব দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি। কিছু কষ্ট করে হলেও আমাদের চাঁদাটা দিয়ে দে।
অরুণ মিষ্টি মুখে তুলতে তুলতে বললেন, আপনি তবু একটু মেয়েটাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। আমাদের শ‍্যামলিমা বুদ্ধিমতী মেয়ে ঠিকই। কিন্তু সবাই মিলে ওকে মাথায় তুলে নৃত‍্য করলে ওর মাথা ঘুরে যাবে।
শশাঙ্ক পাল বললেন, কতটা টাকা দিলে এ যাত্রা আমরা রেহাই পাব অরুণ?
শ‍্যামলী বলল, দাঁড়াও বাবা, ওঁরা তোমার কটা টাকার জন‍্য এত দরবার করছেন না। ওঁরা শ‍্যামলী পালের মধ‍্যে বিপদ দেখছেন। শ‍্যামলীকে পক্ষে না পেলে ওঁদের শান্তি নেই।
অরুণ মিষ্টি চিবুতে চিবুতে বললেন, হ‍্যাঁ বটেই তো, নিজেদের ঘরের এমন ডাকাবুকো বলিয়ে ক‌ইয়ে মেয়েকে আমরা পক্ষে তো চাইব‌ই। ঘরশত্রু বিভীষণ হয়ে তো থাকতে দিতে পারি না।
শ‍্যামলী বলল, বিভীষণ কিন্তু রাজভোগ ছেড়ে, স্ত্রী পুত্রের মায়া ছেড়ে নিঃসম্বল হয়ে ধর্মের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল।
অরুণ বললেন, তুমিও গুরুদেবের পাশে দাঁড়াও। তিনি ধর্মপ্রাণ ব‍্যক্তি।
অরুণদা, আমার শেষ কথা শুনে নিন। আমি সমস্ত মন প্রাণ দিয়ে ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে দাঁড়ালাম। একটা খুনি মানুষের শুধু শরীরটাকে খুন করে। একজন ধর্ষক খুন করে মানুষের শুভ্র আত্মাকে। সে একটা মেয়ের প্রতিদিনের জীবনটাকে ছারখার করে দেয়। শুভবোধটাকেই নষ্ট করে দেয়।
একটা গুরুর আসনে বসে, পিতার মতো সম্মানিত জায়গায় থেকে এহেন কাজ যে করতে পারে, আমি তার চূড়ান্ত শান্তি কামনা করি।
রাগে উত্তেজনায় শ‍্যামলী থরথর করে কাঁপছিল। তারপর সে টের পেল তাকে কে যেন জাপটে ধরল। তারপর সে আর কিছু টের পেল না।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।