–pragmaticplay–pragmatic77 – দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৪১)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ৪১
১৪০
মুশকিলের কথাটা হল মানুষের এই পৃথিবীটা রোজ রোজ বদলাচ্ছে ।
বিরস বদনে নকুড় নন্দী বললেন “না রে মা, আসলে কিছুই বদলাচ্ছে না । আমাদের সমস্তই তো তিনি ঠিক করে রেখেছেন । তোমার বয়স হোক, ঠিক বুঝবে।“
চেষ্টা করে মুখে হাসি ফুটিয়ে শ্যামলী বললো “আমার বয়স তো হয়েছে জ্যেঠু, আমি এখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি। বয়স কুড়ি ছুঁই ছুঁই ।“
নকুড় গিন্নির এত কথা পছন্দ হচ্ছিল না। তিনি বললেন “কুড়ি বছর বয়স আবার একটা বয়স?”
শ্যামলী তাঁর দিকে তাকিয়ে বললো “তা বললে চলবে কেন? পুরোনো দিনের সেকেলেপনা কথায় বলতো মেয়েরা কুড়িতেই বুড়ি !”
নকুড় নন্দী বললেন “ আমরা তো একটা সেকেলে বুড়ির সাথে সম্পর্ক করতে আসি নি। আমরা এসেছি একটা ঝকঝকে স্মার্ট কলেজে সায়েন্স পড়া ইয়ং লেডির কাছে।“ নিজের কথায় নিজেই হো হো করে হেসে ওঠেন তিনি।
“কলেজে সায়েন্স পড়া, কলকাতার হোটেলে দু দুটো ছেলের সাথে রাত কাটানো মেয়ে বলুন!” তেতো গলায় শ্যামলী বলে ওঠে ।
নকুড় নন্দী ও শশাঙ্ক পাল দুজনেই থমকে যান। শুধু রমানাথ বলে ওঠে “ কি বলছো কি তুমি শ্যামলী? এর আগেও ফোনে কথা বলার সময় তুমি এই সব আবোল তাবোল বলেছো !”
নকুড় গিন্নি বলেন “কেন তুমি এ রকম করছো ? আমরা কেউ তোমায় এসব বলেছি?”
“ না, কেউ কিছু বলেন নি!” অদ্ভুত শান্ত গলায় বলে শ্যামলী ।
“ তাহলে তুমি এ রকম বলছো কেন মা? আমরা যখন তোমাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করি, তখন তো তোমার এসব কথা তোলা উচিত নয়! তাই নয় কি?” নকুড় নন্দীর গলায় বেশ মুরুব্বির চাল।
অ্যাপ্রন এর ভিতর থেকে একটা খাম বের করে শ্যামলী। খামের ভিতর থেকে একটা চিঠি বের করে শ্যামলী। নকুড় বাবুর হাতে সেটা দিয়ে বলে এই যে, আপনি দেখুন, আপনি মুখে কিছু না বললেও চিঠিতে কি লিখেছেন!”
নকুড় চিঠিটি নিয়ে আশ্চর্য হয়ে উলটে পালটে দেখে বললেন, “হ্যাঁ এটা তো আমারই সই। কিন্তু কি লেখা আছে এতে?”
“কার চিঠি শ্যামলী? কে লিখেছে রে মা?” শ্যামলীর বাবার কণ্ঠে গভীর উদ্বেগ ।
শ্যামলী চোখের ইঙ্গিতে দেখিয়ে দেয় নকুড় নন্দীকে।
শশাঙ্ক পাল উঠে গিয়ে নকুড়ের হাত থেকে চিঠিটি টেনে নিয়ে দেখতে থাকেন। দেখতে দেখতে কান্নায় শশাঙ্কের চোখ মুখ বিকৃত হয়ে যায়। “দাদা, এতো দিনের যোগাযোগ আপনার সাথে। লক্ষ্মী প্রতিমার মতো মেয়ে আমার । ও যাদের সাথে গেছিল, তারাও খুব ভদ্র। না গেলে আমায় আর বেঁচে আসতে হতো না।“
নকুড় অসহায়ের মতো বলেন “কি বলছো পাল ভাই, আমি তো কিছুই বুঝছি না? কি আছে চিঠিতে?”