পর্ব – ১৪২
শ্যামলী বলল, মা, শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত উপন্যাসটা কি তুমি পড়েছ?
বাসন্তীবালা বললেন, তা একসময় পড়েছি। কিন্তু তুই পড়া ধরলে কিচ্ছু বলতে পারব না, সে কথা বলে রাখছি।
সবিতাপিসি বললেন, পড়েছি অনেক আগে। আর ভুলেও গেছি। তুই বল্ না, মনে পড়বে।
শ্যামলীর বাবা চোখে মুখে জল দিয়ে এসে বললেন, অ্যাডাল্ট এডুকেশন? তা ভাল। তোরা তখন ছোটো ছোটো। কোলে নিতে হয়। সে সময় আমার কারখানায় মাঝে মধ্যে দুজন সরকারি অফিসার আসত। বলত, সন্ধ্যায় তোমার মজুরদের পড়াব। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম অ আ ক খ শেখাবেন?
ওঁরা বলেছিলেন, না না, তা কেন, আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে একটু আধটু চিন্তাভাবনা ধরিয়ে দেওয়া। আমি ওঁদের বলেছিলাম, শরৎচন্দ্রের গল্পগুলো পড়ান। ওরা একটু বুঝতে পারবে। শক্ত শক্ত জিনিস বললে শুনতে চাইবে না। শুনলেও বুঝবেনা।
শ্যামলী বলল, বাবা, তোমার কারখানায় অ্যাডাল্ট এডুকেশন কতদিন চলেছিল?
শশাঙ্ক পাল বললেন, প্রথম প্রথম উৎসাহ নিয়ে শুরু হল। তারপর আস্তে আস্তে মজুরদের উৎসাহ কমতে থাকল। যে দু চারটে লজ্জার খাতিরে বসে থাকত, সেগুলোও ঘুমের ঘোরে ঢুলতে থাকত। আমি বলতাম, স্যার, ছুটি দিয়ে দেন গো। ছুটি পেলেই মজুরদের ঘুম যেত কেটে। লেখাপড়া, বিশেষ করে অঙ্ক শিখতে ওরা চায় না। কিন্তু কাজের সময় কাজের যন্ত্রপাতি হাতে নিয়ে যখন আমি কিছু বলতাম, শেখাতাম, ওরা শুনত। কিন্তু একটু অন্য কিছু বললেই মন দিতে পারত না।
সবিতা হেসে বললেন, আমারো সেই দশা। বই হাতে নিলেই রাজ্যের ঘুম মাথায় এসে ভিড় করবে। বই রাখো ঘুম হাওয়া। বাসন্তীবালা বললেন, আমিও তো রোজ গীতা পড়ি। কিন্তু সেদিন শ্যামলীর কাছে ধরা পড়েছি। বই দেখে দেখে রোজ পড়ি, অভ্যাসে বলেও যাই। কিন্তু কিছু একটা জিজ্ঞাসা করো, মুখ দিয়ে কিচ্ছু বেরোবে না। শ্যামলী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে গেল।
ক্রমশ…