• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিকে মৃদুল শ্রীমানী

জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর। বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন। চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।

বৃহন্নলা কথা

সেই যে হারমাফ্রোডাইট এর কথা বলে ছিলাম, একই দেহে নর ও নারীর যৌন বৈশিষ্ট্য , এবং জীবনের এক এক সময়ে পৃথক পৃথক যৌন বৈশিষ্ট্য, এবং প্রয়োজন মত নিজের যৌন অস্তিত্ব পাল্টে নিতে পারার ব্যাপার গুলি আমাদের মহা প্রাচীন ভারতে ছিল। আমাদের তিন তিনটি এলিট দেবতা, ব্রহ্মা বিষ্ণু ও মহেশ্বর, এই ত্রিদেব এই অসামান্য যৌন বৈশিষ্ট্যে ভূষিত ছিলেন।
প্রথমে ব্রহ্মার কথায় আসি। মনুর বিবরণ অনুসারে ব্রহ্মা নিজেকে দুই অংশে বিভক্ত করেন, নর ও নারী। নর ও নারীর সঙ্গমের ফলে মনুর জন্ম হয়।
বিষ্ণুর যৌনবৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়েছিল। সেই গল্পে মহেশ্বরের বড় ভূমিকা ছিল। নারদ গান শিখেছিলেন। শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং ব্রহ্মা। কিন্তু তার পরেও আরো সংগীতচর্চার দরকার ছিল। তখন বিষ্ণুর কাছে গিয়ে তাঁর সভার এক গন্ধর্ব সংগীতজ্ঞ তুম্বুরু এর কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন যে তিনি গানের গ শেখেন নি। তখন বিষ্ণু দয়া করে উলুকেশ্বর নামে আরেক বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ গন্ধর্বের কাছে নারদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেন। এত শত ব্যবস্থার পরেও রাগ রাগিণীরা নারদের বশে আসেন না। নারদের খুঁটিনাটি ত্রুটি থেকে যায়। তালভঙ্গ হয়। নারদ নিজের অনভিজ্ঞতা টুকুও ধরতে পারেন না। তখন রাগ রাগিণীরা জোট বেঁধে ঘোট পাকিয়ে নারদের গর্ব খর্ব করার জন্য স্বর্গের রাস্তায় অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। বিকলাঙ্গ নর নারী সেজে লোকের সহানুভূতি আদায় করতে থাকে। বলে নারদের ভীষ্মলোচন মার্কা গানের গুঁতোয় রাগ রাগিণীরা বিকলাঙ্গ। বেকায়দায় পড়ে নারদ তাদের হাতে পায়ে ধরেন, ও কি করলে সমস্যার সমাধান হবে জানতে চান। উত্তরে তারা দেবর্ষি নারদকে জানায় যে স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব যদি তাদের সামনে এসে গলা সাধেন, তবে ধর্মঘট উঠবে। নারদের পাবলিক রিলেশন ভালোই ছিল। কিন্তু গোল পাকালেন মহাদেব নিজেই। একালের মহাকবিকে নকল করে তিনি বললেন, একাকী গায়কের নহে তো গান। বললেন, গান যে গাইব, সমঝদার শ্রোতা কই? নারদ বললেন, কোন লেভেলের শ্রোতা মহাদেব চাইছেন। মহাদেব গোঁ ধরলেন যে গান তিনি গাইবেন, যদি ব্রহ্মা ও বিষ্ণু সেই গান শুনতে আসেন। দেবর্ষি নারদ মহাদেবের গান শোনার জন্য ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুকেও পটিয়ে ফেললেন। এইবার শুরু হল শিবের গান। সে যে কি গান, কি গান। গান শুনে বিষ্ণু গেলেন গলে। একেবারে দ্রবীভূত অবস্থা। সেই দ্রবীভূত বিষ্ণুই গঙ্গা নামে খ্যাত। ব্রহ্মার চতুর্মুখে আটখানা কান। তিনি সেই সাংঘাতিক গান এক কান দিয়ে শুনে আর এক কান দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন। তাই ব্রহ্মা ঠিকঠাক ছিলেন। ব্রহ্মা তাঁর কমণ্ডলুতে গঙ্গাকে পুরে ফেললেন। ছিল বিষ্ণু, গান শুনে হল গঙ্গা। যৌন অস্তিত্বের রূপান্তর বলব না?

এই ধারাবাহিকটি এখানেই শেষ হল। 

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।