• Uncategorized
  • 0

ডাউন-সিন্ড্রোমে শুভ আঢ্য – ১

কলকাতায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা। লেখালিখি মূলত প্রিন্টেড ও ওয়েব ম্যাগে। প্রকাশিত বই তিনটি, ব্লেড রানার, আওকিগাহারা ও জোকিং – আ – পার্ট। বিষণ্ণতা ছাড়া আর ভালবাসা কিছু নেই

ডাউন-সিন্ড্রোম

তো, ওপর থেকে দেকে সব কিচু মালুম হয় বটে, তবে নিচ থেকে দেকতেও তো মন চায়! সব্বার সাতে সব্বার মাজে এসে দেকা এ’কদিন বেড়ালটার হয়নি কো। গেল পাঁচ সাদ্দিন ধরে সে জানলার কার্নিশ ছেড়ে নিচে নামার সুযোগ পেয়েচে। মাচের পিসটা জুটচে নে বটে, তবু এধার ওধার করে একনও খেতেপরতে সের’ম অসুবিদে হচ্চে নে কো। যদিও বেড়ালটা একুশে আইনের কতা জানে নে। সে খালি দেকচে লোকে বড় উতলা হয়ে টিভি চালাচ্চে এ’কদিন। খালি খপরের চ্যানেল ছাড়া আর কিচ্চু শুনচে নে কো।
        এরই মদ্দে দেকতে দেকতে সকাল হচ্চে, সকাল ছানা কাটার মতো করে কেটে যেতে যেতে বেলা হচ্চে, আর বেলা মেয়েদের জর্জেটের শাড়ির মতো করে কেটে যেতে যেতে দুপুর বিকেল সন্দে রাত্তির সবই হচ্চে, তবু লোকে রাস্তায় বেরুচ্চে নে কো। তবে একেবারেই যে বেরুচ্চে নে এমন কোনো কতা যে নয় কো, সে নিয়ে পরে খানিক আলোচনা করা যাবে’খন। খানিক ভ্যাবাচ্যাকা মেরে বেড়ালটা একন বড় রাস্তার মোড়ে পাড়া ঘুরতে বেরিয়েচে। যেসব ঢ্যামনারা তাকে দেকলেই তার ন্যাজ মুচড়ে নেবার কতা ভাবত, গায়ে জল দেবার কতা ভাবত তাদেরকে অনেক খুঁজেও সে দেকতে পাচ্চে নে। এ নিয়ে একদিকে তার চিন্তা যেমন কমেচে খানিকটা তেমন আবার গেরিলা ওয়ার চালু হয়েচে কি না জানতে পারচে নে বলে বেড়ালটার মনে তেমন শান্তিও নেই কো। এই গেরিলা ওয়ারের কতা অন্য দেশ বা অন্য প্রদেশের বেড়ালের মাতায় আসার কতা নয়। তবে এ বেড়াল খোদ কলক্কাত্তাইয়া কি না, সত্তরের নকশাল আমন আরও এটা সেটা দেকতে দেকতে সে পাকো পোক্ত হয়ে উটেচে বলে চেয়ারম্যান, ভাইরাস এসবের কতা শুনলেই তার মনে এসব চলে আসে।
        সক্কাল হতে না হতেই যারা বেরিয়ে পড়ে, সেই ঝাঁকামুটেওলাগুলোকেও রাস্তায় তেমন দেকা যাচ্চে নে কো। সক্কালবেলা উনুনের ধোঁয়া উড়িয়ে যে চায়ের দোকানগুলোতে কেটলি বসে, সেগুলো সব মাজা হয়ে ঘরের ভেতরে। শুদু যারা ঝাঁট দিতে বেরোয় তারা মুকে ফ্লুরোসেন্ট রঙের মাস্ক পরে বা রুমাল বেঁদে বেরিয়ে পড়েচে। হাফপ্যান্টের দড়ি বিচির কাচে ঝোলাতে ঝোলাতে কোনো কোনো লোক যে বেরোয়নি এমনও নয়। তবে এ যেন দোলের বাজারে সকালে কিচু লোক যেমন দেকে নিতে যায় পাড়ায় সব কিচু ঠিকঠাক আচে কি না তেমন। মুদির দোকানগুলো খুলবে খুলবে করে সোনাগাচির মাসিদের মতো দুলকি চালে দোকানের পানে এগিয়েচে। সেকানে কিচু খদ্দের আগে থেকেই দাঁড়িয়ে রয়েচে। আর কে না জানে খদ্দের লক্কী! প্রত্যেকের পায়ের তলায় একটা করে চুন দিয়ে কাটা গোল্লা। গোল্লাচোর খেলতে খেলতে বড় হয়ে যাওয়া কিচু লোক, বিড়ি মুকে সেই সব ক্যালানি খাওয়া দিনগুলোর কতা ভাবতে বসেচে। দোকানের সামনে একমিটার অন্তর অন্তর লোক দাঁড়িয়েচে, যা কলকাতা জব চার্নকের আমলের পর থেকে আর দেকেনি কো।
        কলকাতা বেশ অনেক এমন কিচুই দেকেনি যা একন দেকচে। বুধবার সন্দে সাত্তার সময় হাওড়া ব্রিজে কার্ফিউ সে কবে দেকেচে মনে করে বলতে পারবে নে কো। বেড়ালটা খুব এসময়ে বার কয়েক রাস্তা কেটে ফেললে। চাকার তলায় চলে যাবার ভয় নেই কো বলে সে বেশ সাহসী হয়ে উটেচে। তার থাবার ভেতরের নখও প্রখর হয়ে উটেচে। সে নিজেকে খানিকটা তার বোনঝির মতো মনে যে করচে নে কো এমন কতাও হলপ করে বলা যাচ্চে নে কো। বাজারে বাজারে লোকে মুক চাওয়াচাওয়ি করে নাকের ওপর মাস্ক সেঁটে দাঁড়িয়ে আচে। গুলতানি বলতে ক’জন বাড়লো –  এ ছাড়া আর যে কতা শুনতে পাওয়া যাচ্চে তা হল এই একুশে আইন কি বিয়াল্লিশে বা তেষট্টিতেগিয়ে থামবে কি না! মাজখানে কলকাতায় এ রোগ কি করে ছড়ালো এ নিয়ে কানাঘুষো কতা উটেচিল বটে, তবে এই করোনা একন যে ভঙ্গিতে ব্যাট করচে তাতে করে আর সে সব দিকে লোকেদের মাতা দেবার সময় নেই কো।
ঘরের মহিলাদের হয়েচে সামান্য ঝামেলা। যেসব মাসিমারা বাড়িতে শুক্তুনিতে ফোড়ন বা রাঁধুনি দেবার পর, মাচের আঁশ ছাড়াতো, তারা একন দিগগজ হয়ে উটেচে। তাদের এতদিনকার গলার ঘাম কাপড়ে চোচার কতা শুনিয়ে শুনিয়ে বাড়ির ছেলে ও মেয়েটাকে পেড়ে ফেলচে। যে মামুনিরা কি না সকালবেলা একটা সেলফি তুলে এককাপ ব্ল্যাক কফি খেয়ে গায়ে বডি-স্প্রে দিয়ে বেরিয়ে পড়ত, তাদের হয়েচে মহা ঝামেলা। এই জেলের ভেতর থাকা যে কি কষ্টকর তা, তারা হাড়ে ও হারে টের পাচ্চে। তাদেরকে একন আর ম্যাস্কির ওপর ওড়না বা গামচা দিয়ে দোকানে পাঁচশো গ্রাম তেল কিনতে দেকা যাচ্চে নে কো। তারা সবাই সেঁটে গেচে বাড়িতে। তবে তার মানে এই নয় কো যে তারা বাড়িতে সবাই মাতায় হেনা, চোকে শশা আর মুকে প্যাক লাগিয়ে বসে আচে। তার মানে এটাও নয় কো যে তাদের ঘরে ওসব মাল নেই কো, তবে ব্যাপার হল এই একুশ দিনের মজুতের চক্করে ঘরে থাকলেও তারা ওসব মাকতে আর সাহস পাচ্চে নে কো, পাচে না খেয়ে মরতে হয়! তাদের রূপচচ্চায় বেশ খানিকটা ছেদ পড়েচে বলে অনেক ছেলে ছোকরারা যে আনন্দ পায়নি এমন কতা আনন্দ নামের কোনো চ্যানেলে বলা হয়নে কো। তবে তাদের আস্তর খসে পড়েচে বলে একন ফেসুবুক, ইনস্ট্রাগ্রামের সার্ভার কিচু কম হ্যারাস হচ্চে নে কো, সেকানে নানা গুজব ছড়িয়ে পরচে মহামারীর মতো। যদিও টিভিতে, খপরের কাগজে খরবখত বলা হচ্চে – গুজব না ছড়াতে বা কান না দিতে। সরকার থেকে এমন ঘোষণা করতে করতে তাদের কম্মচারীদের মুকে ফেনা উটে যাচ্চে।
        বেড়ালটা দেকতে পাচ্চে এসময় তাকে নিয়েও মানুষের তেমন মাতা ব্যতা নেই কো। তবে সে এটাও দেকচে যে আকাশে পাকি উড়ে চলেচে, বক টকও এই কলকাতায় সে এইক’দিনে দেকে ফেলেচে। রাস্তাঘাটে কুকুরগুলোও হেদিয়ে পড়েচে। তারা চিৎকার করার মতো কাউকে পাচ্চে নে কো। যে সব আদপাগলা মালগুলোকে বা কাগজকুড়ুনিগুলোকে দেকে চিল্লিয়ে তারা মাত করে রাকত পাড়া, তাদেরও এসময় দেকা যাচ্চে নে কো। একন কাজ বলতে ছায়া দেকে জিরিয়ে নেওয়া। এই জিরিয়ে নিতে নিতেও তারা কেলান্ত হয়ে পড়চে। বাজারে সবই আক্কারা। চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে সব কিচুর দামই একটু একটু করে বেড়েচে যেভাবে গেরস্তের এঁটোটা কাঁটাটা খেয়ে কুকুরের বাচ্চাগুলো বড়ো হয়, এবং একটা সময় কেঁদো বাগের মতো হয়ে ওটে। সেই বাগ, বাগমারি বাজার থেকে মানিকতলা বা সোঁদরবনের কতা না হয় পরে কইব’খন। একন গামচা পড়ে, তেল থাবড়ে এট্টু চান করে আসুক গেরস্ত। খানিক গিলুক কুটুক, তবে না বেড়ালটার উদরে কিচু একটা পড়বে! মা ষষ্টির জীব, তার পেটে পিত্তি পড়ে যাবে, বাঙালি একনও অতটা ছোটোলোক হয়নি কো।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।