• Uncategorized
  • 0

ছোটদের জন্যে বড়দের লেখায় সহেলি চট্টোপাধ্যায়

বাংলা শিশু কিশোর সাহিত্যে পরিচিত নাম। কাগুজে এবং ওয়েব বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করেন নিয়মিত। সহ সম্পাদক ম্যাজিক ল্যাম্প ওয়েব ম্যাগ এর। ভয় জাগানো ৯ তাঁর প্রথম গল্প সঙ্কলন। (অরণ্যমন প্রকাশনী)

ফুচকাওয়ালার বিপদ 

আমাদের শহর খুব অদ্ভুত জায়গায়। ভূত মানুষ এক সঙ্গে সহাবস্থান করে। শহর যেমন আছে তেমনি পুরানো পরিত্যক্ত কিছু হানাবাড়িও আছে। ঘন জঙ্গলও আছে। সেখানে ঢুকলে মনে হয় আমাযন না হোক ডুয়ার্সের ঘন জঙ্গলে চলে এসেছি। অনেকে ওই জঙ্গল থেকে অজগরের দেখাও পেয়েছে। হায়না বা বাঘরোল থাকে। ঝিঁঝিঁপোকা ডাকে সব সময়। সেখানে নাকি ভূত ও থাকে। জঙ্গলের গল্প আরেকদিন করা যাবে না হয়। তা, আমাদের পাড়ায় কিশোরদা খুব বিখ্যাত ছিল। না না গান বাজনার জন্য নয়। বিকেল পাঁচটা নাগাদ মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে ফুচকা বিক্ক্রি করত। ঘন্টি বাজিয়ে পাড়াগুলো টহল ও দিত। দু রকম জলে সে ফুচকা বানাতো। তেঁতুল জলে গন্ধরাজ লেবুর রস দিয়ে ফুচকা
আর আলুমাখার স্বাদ এখনও লেগে আছে জিভে। আর পুদিনা পাতা লেবুর রস দিয়ে আরেকটা সবুজ জল বানাতো। সেটাও ফুচকা দিয়ে খুব ভাল লাগত। আলুকাবলি চুরমুর দুটোই খুব ভাল বানাতে পারত কিশোরদা। ওরকম আর কখনও খাইনি। সেই কিশোরদাকে অনেকদিন দেখা যাচ্ছে না। তা প্রায় সাতদিন বেরুল না। অন্য ফুচকাওয়ালাদের পোয়াবারো। অন্যদের বানানো ফুচকা খেয়ে মনটা আরও খারাপ হয়ে যেত। টক জল কারোরই ভাল হত না। হয় নুন বেশি বা নুন কম বা ঝাল বেশি এই রকম লাগত। একদিন আবির বলে বসল, কিশোরদার বাড়ি গিয়ে কেমন হয়?
ওর বাড়ি কোথায় তুই জানিস?
হ্যাঁ।  শুনেছি যে ওর মন খারপ হয়ে গেছে। বাড়িতেই বসে থাকে। ওর মা কান্নাকাটি করে।
কী করে জানলি?
আমার মায়ের সঙ্গে ওর মায়ের চেনা জানা আছে তো। ওর মা জামাটামা বানাতে পারে।
ওহ আচ্ছা। তাহলে কাল স্কুল থেকে ফেরার পর যাব।
পরের দিন মাকে বললাম আজ ফিরতে দেরি হবে মা। এক্সট্রা ক্লাস আছে।
আবীর ও মাকে এটাই বলবে। ছুটির পর হাঁট তে হাঁটতে আমরা কিশোরদার বাড়িতেই এলাম। টালির চাল হতে পারে কিন্তু খুব রুচিসম্পন্ন। চারিদিকে সন্ধ্যামণি, নয়নতারা, রঙ্গন, টগর ফুটে আছে। দরজা খোলাই ছিল। ভেতরটাও খুব পরিস্কার। টিপটপ চারিদিক। একজন চশমা পরা মহিলা সেলাই করছে ঘরে। কিশোরদা শুয়েছিল। আমাদের দেখে উঠে বসল, আরে তোমরা এসেছ!
তুমি আর বেরোয় না কেন! কি হল তোমার!
আমি জিজ্ঞাসা করলাম। আবির বলল, আমি এসেছি আমার মা কে যেন বলো না তোমরা। কিশোরদার মা বলল, কিশোর কেন বেরুচ্ছে না আমাকেও বলেনি। কতবার জিজ্ঞাসা করেছি কিন্তু মুখে যেন চাবি দিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ নানা অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা হবার পর আবিরই এক সময় বলল, চলো না নদীর ধারে গিয়ে বসি। আমরা তিনজনেই বাইরে এলাম। একটু এগুলেই নদী।  ছোটো একটা পার্কের মত করা আছে। বসে বসে আমরা নদী দেখছি। একজন চানাওয়ালা বসেছে। আমরা তিনটে ভুট্টাপোড়া নিয়ে বসলাম। আবীর খাওয়াচ্ছে। কিশোরদা বলতে শুরু করে, আমি জানি তোমরা জানতে চাও আমি কেন আর বেরোই না। আমি গত সপ্তাহে লাস্ট বেরোই। রোজকার মতই সন্ধের পর বেরিয়েছি। মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে বেরিয়েছিলাম। খুব কষ্ট হচ্ছিল। আনমনে অনেকটা পথ চলে এসেছি। কিন্তু কেউ এখনও ফুচকা কিনল না। একটা বাংলো বাড়ির মত সুন্দর বাড়ির সামনে দেখলাম একজন দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে হাত নেড়ে ডাকল। আমি গাড়ি নিয়ে এগুলাম। ফুচকা দিতে শুরু করলাম মেয়েটিকে। বোরখার মত কালো পোশাক পরা সেই ছায়ামূর্তিকে মেয়েই মনে হয়েছিল।
প্রায় দশটা বারোটা ফুচকা দেওয়ার পর দেখলাম ফুচকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলো কালো কালো হাত এসে যাচ্ছে। আমি বুঝতে পারলাম কাদের পাল্লায় পড়েছি। বুঝতে দিলাম না যে আমার ভয় লাগছে। টপ টপ হাত পাততে লাগল আর আমি ফুচকা দিতে লাগলাম। কুলকুল করে ঘামছি। এদিকে পিঠে বরফের মত হিমেল স্রোত বইছে। তারপর দেখি যে অনেকগুলো কালো কালো ছায়া হাতে শালপাতা নিয়ে ফুচ কা খাচ্ছে টপাটপ। আবার অনেকে বলছে আঁরও দাঁও। তেঁতঁউল জঁল দাঁও।  দাঁরুণ খেঁতে। এইসব বলছে। আমি দিয়ে কুলাতে পারছি না। কিশোরদা থামল। আমার মনে হচ্ছিল কিশোরদা হয়তো হ্যাসিস খাওয়া ধরেছে। আবীর বলল, তারপর কী হল?
তারপর ওরা খুব খুশি হয়ে বলল মাঝে মাঝে যেন এসে ওদের ফুচকা খাইয়ে যাই। আর ওরা আমাকে সোনার মোহর দিয়েছে। বলে পকেট থেকে একখানা গোল চ্যাপ্টা মত জিনিস বার করল। চোখ ঝলসে যাচ্ছিল। আবীর বলল , কেউ যদি দেখে ফেলে। তাড়াতাড়ি পকেটে ঢোকাও।
কিশোরদা বলল, কী করি বলো তো।
আবীর বলল, সেলিব্রেট।
কিশোরদা খুব ভয় পেয়েছিল কিন্তু কিছু হয়নি। সোনার মোহর বিক্রি করে একটা ফুচকা, ঘুগনি, দই ফুচকা, আচার ফুচকার স্থায়ী দোকান দেয়। লোকে বসে খেত। তারপর একটা রেস্টুরেন্ট খোলে। শুনেছি নবাবী আমলের এক ভূত সেখানে বিরিয়ানি রান্না করত। ফুচকার খদ্দেরগুলোর বেশির ভাগই নাকি… নিন্দুকেরা যে কত কথা বলে! এসব কত দিন আগেকার কথা! মনে হয় এই তো সেদিন এর কথা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *