পৃথিবী নামক গ্রহেই একমাত্র প্রাণের অস্তিত্ব দেখা যায় । এ পর্যন্ত আর অন্য কোন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি । গাছেরও প্রাণ আছে সেটা প্রমাণিত । যাদের প্রাণ আছে তাদের প্রাণী বলা হয় । প্রত্যেকটি প্রাণীর একদিন জন্ম হয় আবার একদিন মরেও যায়, এটা চিরন্তন সত্য । আর এই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রত্যেকটি প্রাণীর খাবার অর্থাৎ খাদ্যের প্রয়োজন হয় বেঁচে থাকার জন্য ।
প্রাণীদের মধ্যে মানুষই একমাত্র যে কাঁচা ও রান্না করে খাবার খায় । মানুষ ছাড়া বাকি সব প্রাণী কাঁচা খাবারই খায় । অন্য কোন প্রাণী নিজেদের জন্য কোন খাবার তৈরি করতে পারে না । তারা সম্পূর্ণই পরনির্ভরশীল । একে অন্যকে খেয়ে জীবন নির্ভর করে । মানুষ হলো সবচেয়ে উন্নত প্রাণী । তারা নিজের খাবার নিজেই তৈরি করে নিতে পারে । মানুষ তার নিজের প্রয়োজন মতো খাবারকে তৈরি করে নেয় ।
প্রত্যেকটি মানুষেরই খাবার খাওয়ার অধিকার আছে । তাকে কোন অবস্থাতেই খাবার খাওয়ার থেকে কেউ বিরত করতে পারে না । কোন মানুষ যতই অন্যায় কিংবা অপরাধ করুক না কেন । কেউ তাকে খাবার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না । খাদ্যের অধিকার আইন সংগত ও সংবিধানে লেখা আছে প্রত্যেকটি মানুষের জন্য । কেননা খাদ্য ছাড়া মানুষ জীবন অতিবাহিত করতে পারে না ।
তবে শুধুমাত্র খাবারের জন্য আমাদের বেঁচে থাকা কখনই উচিত নয় । বেঁচে থাকার জন্যই আমাদের খাবার খাওয়া উচিত । খাদ্য আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে । শরীর ভালো থাকলে তবেই আমরা যে কোন কাজ করতে পারি সহজে । খালি পেটে অভুক্ত অবস্থায় আমরা কোন কাজই করতে পারি না । আর খিদের জ্বালায় কোন কিছুতেও মন বসাতে পারি না । খিদের জ্বালা সহ্য না করতে পেরে, অনেক সময় মানুষ অন্যায় কাজ করতেও বাধ্য হয় ।
অনেক কষ্ট ও শ্রমের ফলে খাদ্য উৎপাদন করা হয় । সেই খাদ্যকে কোন অবস্থাতেই অপচয় করা উচিত নয় । খাদ্য অপচয় করা হলো একটা জাতীয় অপরাধ । আমরা অনেকেই হয়তো অভুক্ত থাকি না ও ঠিক সময়ে খাবার পেয়ে যাই । তাই খিদের কি জ্বালা ? আমরা অনেকেই সহজে বুঝতে পারি না । কিন্তু এখনো সারা বিশ্বে অনেক মানুষ আছে, যারা সারা দিনে এক বেলাও খাবার খেতে পায় না । অভুক্ত অবস্থাতে তাদের দিন কাটে আর তারাই বোঝে খিদের কি জ্বালা ।
বিভিন্ন ঘরোয়া ও সামাজিক অনুষ্ঠানে এছাড়া হোটেলেও আমরা অনেক খাবার নষ্ট করি । প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার তৈরি করে, পরে সেই খাবারগুলো নষ্ট করে দিই । এই খাবারগুলো আমরা যদি নষ্ট না করে, অভুক্ত মানুষদের দান করে দিই ; সেটা অনেক ভালো কাজ হবে । এছাড়া আজকাল অনেক জায়গায় ” ফুড ব্যাংক ” তৈরি হয়েছে সেখানেও আমরা দান করে দিতে পারি । এতে মূল্যবান খাবার অপচয় অনেকটাই রোধ করা যাবে ।
সামর্থ্য থাকলে অত্যাধিক খাবার ক্রয় করে সেটা অপচয় করা একদমই সঠিক নয় । খাদ্য অপচয় করতে থাকলে, একদিন এমন সময় আসবে যখন অর্থ দিয়েও খাবার ক্রয় করা যাবে না । তাই প্রয়োজন অনুসারে খাদ্যের ব্যবহার ও সঞ্চয় করে রাখা আমাদের সবার কর্তব্য । খাদ্যই প্রত্যেকটি প্রাণীকে জীবিত রাখে, তাই খাদ্য ভগবান স্বরূপ । খাদ্যকে কোন সময়ই অবহেলা করা উচিত নয় । যদি সম্ভব হয় তবে অভুক্তকে খাদ্য দান করা হলো একটা মহান পূণ্যের কাজ ।