• Uncategorized
  • 0

গল্পে ঋতব্রত গুহ

জন্ম ১৯৮৮ সালের ১৫ ই সেপ্টেম্বর । বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত এবং বর্তমানে ব্যাঙ্গলোরেই বাস । প্রথম সম্পাদনা " নির্জনে বসে " । তারপর একটা লম্বা বিরতি । গত একবছর ধরে আবার লেখালেখি শুরু করেছেন । দেশ পত্রিকা সহ আরও কিছু পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি ।

জন্মদিন

১।

“ হ্যাপি বার্থ ডে ! ” আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলল শ্লোক । সময় যে কোথা দিয়ে চলে যায় কেউ ঠিক বুঝে উঠতে পারে না । সবাই এগিয়ে চলেছে গন্তব্যের দিকে , একদিন সবাই হারিয়ে যাবে । আবার নূতন প্রজন্ম আসবে , তারাও হারিয়ে যাবে । এ নিয়মের ব্যতিক্রম নেই , কোন আড়াল নেই । যত পরাক্রমী মানুষই হোক না কেন কোন কিছুর বিনিময়েই এর থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয় । দেখতে দেখতে চল্লিশ টা বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল । এ এক অদ্ভুত অনুভূতি । শ্লোক নিজেই নিজের দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে রইল । তেমন কি বদলেছে মুখ টা ! একই তো আছে । শুধু মাথার চুলগুলো উধাও হয়ে গিয়েছে । চোখের নীচে ডার্ক সার্কল বাসা বেধেছে , আর কি কিছু চেঞ্জ হয়েছে ! নিজের পরিবর্তন খুব একটা আন্দাজ করা যায় না । তবে হঠাৎ দশ বছর আগের নিজের ছবি দেখলে একটু চমক লাগে বৈকি । সব পরিবর্তন চোখের সামনেই হয় । প্রতিদিনের চর্চায় সেটা ধরা পড়ে না শুধু । শ্লোকের কাছে জন্মতারিখ টা একটু স্পেশাল । তার মূল কারণ এই দিনের আর দু দিন পরেই শ্লোকের বিয়ে হয়েছিল অনন্যার সাথে । এখন অবশ্য সেই দিনটি আলাদা করে মনে রাখবার প্রাসঙ্গিকতা নেই । কারণ বছরখানেক হল ওদের মধ্যে সেপারেশন চলছে । একটু পড়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছার ঝড় আছড়ে পড়বে । কাল অফিসে কেক কাটাও হবে । কিন্তু ঘুম থেকে উঠে মা কে হাসিমুখে আর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবে না শ্লোক । স্নান করে নূতন জামাকাপড় পড়ে হয়ত এখনও তৈরি হবে শ্লোক কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও কাউকে প্রণাম করতে পারবে না সে । বিয়ের পর অনন্যা প্রত্যেক বছর এই দিনে নূতন সারপ্রাইজ দিত শ্লোক কে । সেই পরম্পরাও বিগত হয়েছে ।সম্পর্ক গুলো আজকাল কত সহজে ভেঙে যায় ! অনুভূতি গুলো সব আধুনিকতার ব্ল্যাকহোলে হারিয়ে গিয়েছে । শ্লোকও কি পালটে যায় নি ! এই সেপারেশনে তো তার প্রভাবটাই বেশী ছিল । মা অ্যালজাইমার্সের রুগী । তিনজন লোক রেখে দিয়েছে শ্লোক মা এর জন্য । কিন্তু প্রায় ছ মাস হয়ে গেল মাকে তো সে নিজে দেখতে যায় নি । অফিস , টার্গেট , প্রফিট এসবের গোলকধাঁধায় সে তো নিজেও হারিয়ে গিয়েছে । আয়নার দিকে তাকিয়ে আবার একটু হাসল শ্লোক । বয়সের সাথে কি শুধু শরীর বদলায় ! তার অধিক হারে মন টাও তো বদলে যায় ।
মোবাইল টা ইচ্ছে করেই সাইলেন্ট করে রেখেছে শ্লোক । জীবনের রেসে ছুটতে গিয়ে জীবন থেকে ক্রমাগত প্রিয় জিনিসগুলো হারিয়ে যাচ্ছে । কাল অফিস যেতেও মন চাইছে না শ্লোকের । কালকের দিনটা নিজের সাথে কাটাতে ইচ্ছে করছে ।একদম নিজের সাথে । এমন ইমোশনাল ব্রেকডাউন শ্লোকের আজকাল হামেশাই হয় । শ্লোক মোবাইল টা হাতে নিয়ে চেক করল । অনন্যার তো নিশ্চয় মনে আছে আজকে শ্লোকের জন্মদিন । কোন মেসেজ পাঠিয়েছে কি !
আজকে মাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে শ্লোকের । মা এর কি মনে আছে আজকে তার একমাত্র ছেলের জন্মদিন ! কিছুই তো আজকাল আর মনে করতে পারে না ।
শ্লোক ল্যাপটপ টা খুলল । সকাল নটায় একটা ফ্লাইট আছে । আজ বাড়ি গেলে মন্দ হয় না । জন্মদিন মা এর কাছে কাটানোর থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে কি ! অফিসে এক দুদিন না গেলে এমন কি আর হবে ! শ্লোকের মনে ভীষণ একটা জেদ তৈরি হল । জীবন টা খুব বেশী সময়ের জন্য তো নয় । এই তো সপ্তাহ খানেক আগে অনিমেষ , শ্লোকের থেকে বছর খানেক ছোট হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা গেল । সারা জীবন ছুটেই গেল বেচারা । টাকা পয়সা নিয়ে তো আর পরপারে যাওয়া যায় না । ছোট ছোট মুহূর্ত গুলো বরং অনেক বেশী সুখ দেয় মানুষকে । টিকিটের দাম প্রায় এগারোহাজার । আজকে এই টাকাটা শ্লোক অনায়াসে অ্যাফরড করতে পারে ।সে টিকিটের দাম যতই হোক না কেন মাকে দেখবার আনন্দের তুলনায় তা অতি নগণ্য ।

২।

বাইশ বছর আগে নিজের বাড়ি ছেড়ে প্রথম অন্য শহরে পড়তে যাওয়া শ্লোকের । খুব মনে পড়ছে পূজার ছুটিতে সেই প্রথম বাড়ি ফেরার কথা । বহুদিন বাদে সেই একই রকম অনুভব হচ্ছে শ্লোকের । মাঝখানে শ্লোক বিভিন্ন সময় কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় থেকেছে । ধীরে ধীরে একটা অন্য লাইফ স্টাইলে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে । প্লেনের চাকাটা মাটি ছুঁতেই শ্লোক বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠল । শেষ কোন বছর মা এর সাথে সে তার জন্মদিন কাটিয়েছিল মনে নেই শ্লোকের । মা যদি শ্লোককে চিনতে পারতেন তবে তিনি নিশ্চয় আজ খুব আনন্দ পেতেন ।
“ দাদা বাবু আপনি ! ”
শ্লোক কে দেখে বেশ অবাক হলেন প্রমীলা দি । প্রমীলা দি বহুদিন থেকেই এ বাড়িতে থাকে । বাড়ির সব কাজ কর্মের দেখভাল করে । এমন ভালো মানুষ চট করে আজকাল পাওয়া যায় না ।
“ হুম চলে এলাম ! মা কেমন আছে ! ”
“ ওই মা যেমন থাকে ! খুব পুরনো কথা বলেন । বিশেষ করে আপনার ছোটবেলার কথা ! “
শ্লোক এগিয়ে গেল মা এর ঘরের দিকে । ছোটবেলায় এই দিনটি ঘিরে বাড়িতে বিশেষ ব্যস্ততা থাকত । ছেলের জন্মদিন বলে কথা । তখন এই বাড়িতে বাবা , কাকা দের পরিবার একসাথে থাকত । তারপর সময়ের সাথে সাথে সবাই আলাদা হয়ে গেল । বাড়ির ভাগ বাটোয়ারা হল । দুই কাকা নিজেদের অংশ বেচে দিয়ে অন্য জায়গায় সেটলড । শ্লোকের বাবাই শেষপর্যন্ত এখানে থেকে গিয়েছিলেন । মাঝখানে শ্লোক ভেবেছিল মা কে ব্যাঙ্গালোরে নিয়ে যাবে আর এই বাড়িটা বেচে দেবে । মা অবশ্য রাজি হন নি । আজ সবই একটু অন্যরকম লাগছে শ্লোকের । নিজের রুটের কাছাকাছি যেতে ইচ্ছে করছে খুব ।
মা এর চেহারা আরেকটু খারাপ হয়েছে । ক্রমশ যেন শেষের দিকে এগিয়ে চলেছে মা । শ্লোক একটা চেয়ার নিয়ে মা এর বিছানার সামনে বসল । মা শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্লোকের দিকে ।
শ্লোক হাসল ।
“ চিনতে পারছ মা ! ”
“ টুবাই ! স্নান করেছিস ! ”
“ মা তুমি চিনতে পারছ আমাকে ! আমি টুবাই ! ”
“ আজ তো তোর জন্মদিন বাবা । স্নান করে বাবা কে প্রণাম করে নে । আমি আবার তোর নামে পূজা দিতে যাব ! তিতলি কোথায় বল তো ! “
শ্লোক গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোল না । মা এর মন এখন অতীতে পড়ে রয়েছে । তবে কি অদ্ভুত সমাপতন ! না কি মা এর মনে ছিল আজ শ্লোকের জন্মদিন । শ্লোকের চোখে জল ! ডাক্তার বাবু বলছিলেন এই রোগে এমনটা হয় । শ্লোকের গলাটা ধরে এল । অস্ফুট স্বরে একবার বলল
“ মা ! ”
“ তোর বাবাকে অনেকদিন দেখি না ! হারিয়ে গেছে নাকি ! “
শ্লোক মায়ের মাথায় হাত টা রাখল ।
“ তুমি ঘুমোও মা । আমি বাবাকে খুঁজে নিয়ে আসব । চিন্তা করো না ! “
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল মা । এই বিশেষ দিনগুলোতে কাছের মানুষগুলোকে সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে । অনন্যার সাথে একবার দেখা করতে খুব ইচ্ছে করছে শ্লোকের । পাশের পাড়াতেই তো থাকে । অবশ্য এখন গিয়ে লাভ নেই ! এখন অনন্যার স্কুলে থাকার কথা । একবার কি স্কুলে যাবে ! অন্যসময় হলে শ্লোক হয়ত এতটা ডেস্পারেট হত না । কিন্তু আজকে আর কোনকিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না । শুধু মনের কথা শুনতে ইচ্ছে করছে শ্লোকের ।

“ ভালো আছ ! ”
কাল রাত থেকে শ্লোকের মনের মধ্যে যেন একটা প্রবল অস্থিরতা চলছে । মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না । স্কুলের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছে প্রায় আধঘণ্টা হল । খবর পাঠিয়েছে । কিন্তু অনন্যা পুরো ক্লাস না করিয়ে যে আসবে না শ্লোক তা বিলক্ষণ জানে ।

হঠাৎ বহুদিন পরে শোনা এই কণ্ঠস্বরে একটু যেন স্বস্তি পেল শ্লোক ।
“ ভালো নেই অনু ! ভালো নেই ! একটু সময় দেবে ! অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করছে তোমার সাথে ! ”
“ তোমার জীবনে স্বার্থ ছাড়া আর কখনই কিছু ছিল না শ্লোক ! আজও নেই । আমি একটা চাকরি করি এখানে । যখন তখন বেরিয়ে যেতে পারি না । ঠিক যেমন তুমি তোমার মা এর স্ট্রোকের পর আসতে পারো নি বা আমার …”
শ্লোক আর অনন্যার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখে নি ।ক্রিটিকাল কেস ছিল । শ্লোক তখন অফিসের কাজে এদেশ ওদেশ ঘুরছে । এক মুহূর্তের জন্যও শ্লোককে কাছে পায় নি অনন্যা ।
“ আমি আর পারছি না ! তোমার কখন হবে ? আমি ওয়েট করছি ! ”
“ এখানে সিন ক্রিয়েট আর করো না । ঠিক আছে ! আমি যাবো বিকেলে তোমাদের বাড়ি ! তখন কথা হবে !”
“ তোমার যদি অসুবিধে হয় , আমিও আসতে পারি ! ”
“ আমার বাড়ি এলে তোমার অভিজ্ঞতা বিশেষ ভালো হবে না । আমিই যাব ! ”
“ আজকের দিনটা মনে আছে ! ”
অনন্যা কোন উত্তর দিল না । নিস্তব্ধতা কিছু সময় শব্দের থেকেও তীব্র ভাবে আঘাত করে ! তবু শ্লোকের মনে একটা ক্ষীণ আশা এখনও রয়েছে । অনন্যা অনেক মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল শ্লোকের দ্রুতগতির জীবনের সাথে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেনি । কেরিয়ার আর অফিসের বাইরে তখন যেন শ্লোকের জীবনে আর কোন বিষয় ছিল না । অনন্যা যখন কাছে ছিল শ্লোকের অনন্যাকে নিয়ে আদৌ কোন কনসারন ছিল না ।কিন্তু সেপারেশনের পর শ্লোক ক্রমশ অনুভব করতে পারল জীবনের কত বড় অংশ জুড়ে অনন্যা উপস্থিত ছিল । দুজন মানুষের দূরত্ব যখন বাড়ে ইগো তখন খুব ক্ষতিকারক অনুঘটক হিসেবে কাজ করে । মাঝে মাঝে মেসেজে ফর্মাল কথা হত অনন্যার সাথে । কিন্তু শ্লোক কখনও অনন্যাকে “ সরি” বলে উঠতে পারে নি ।
“ মা এর শরীর টা দেখেও সুবিধের লাগল না অনু । কি যে হবে ! খুব অসহায় লাগছে জানো । “
“ জানি ! তুমি যদি তখন কাছে থাকতে এত টা অবনতি নাও হতে পারত ! “
শ্লোক জানে সে ওয়ার্ক আর লাইফ ব্যালেন্স করতে পারেনি । ভুলের পর ভুল করেছে । সময়ের সরলরেখা ধরে পেছনে হাঁটা যায় না ।
“ এখন বাড়ি যাও ! আমি যাবো বিকেলে ! “

৩।

বিকেল গড়িয়ে এখন সন্ধ্যা ।কাজের লোক গুলো খুব ভালো বলতে হবে । খুব সুন্দর গুছিয়ে রেখেছে বাড়িটা । সবটাই খুব যথাযথ । কিন্তু মন খুলে কথা বলার লোক নেই ! তবু আজ এখানে এসে অনেকটা ভালো লাগছে শ্লোকের । বাইরে বৃষ্টি পড়ছে । ক্লাস টুয়েলভের পর শিলিগুড়ি নিয়ে তেমন স্মৃতি নেই শ্লোকের ।পাড়ায় বেরোলে চেনা লোকজন খুব একটা দেখা যায় না । বড় বড় ফ্ল্যাট হয়েছে । নূতন লোক এসেছে । অনেককেই চেনে না শ্লোক । তবে পুরনো যারা আছে তাদের মধ্যে এখনো আন্তরিকতার কোন অভাব নেই । পুরনো মানুষ ছায়া দেয় । যত বয়স বাড়ছে তত যেন জীবন টা সহজ হচ্ছে । আগে এতটা অনুভব করতে পারত না শ্লোক । এখন পারে । বাবার সাথে সারা সপ্তাহে হয়ত একবার কথা হত শ্লোকের ।কিন্তু বাবা চলে যাওয়ার পর শ্লোকের পৃথিবী টা হঠাৎ করেই যেন অর্ধশূন্য হয়ে গিয়েছিল । অনেক পুরনো কথা মনে পড়ছে শ্লোকের । এই বৃষ্টিতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজের শৈশব কে জীবন্ত করার মধ্যে একটা অপার্থিব সুখ রয়েছে ।
কথা রেখেছে অনন্যা । এই বৃষ্টির মধ্যেও এসেছে । অনন্যাকে দেখেই নিচে নেমে গেল শ্লোক ।
“ ধন্যবাদ অনু ! আজ কতদিন বাদে এ বাড়িতে এলে ! খুব ভালো লাগছে আমার ! ”
শ্লোকের কথা শুনে প্রমীলা দি একটু যেন অবাক হল ।
“ দাদাবাবু ! বৌদিমণি তো প্রায়ই এ বাড়িতে আসেন ।মা এর দেখাশোনা তো উনিই করেন ! ”
“ মানে ! ” শ্লোক অবাক চোখে তাকিয়ে রইল অনন্যার দিকে !
“ মা বলে ডেকেছিলাম তোমার মা কে । তুমি নেই কাছে । একজন কে তো দায়িত্ব নিতে হবে । অবশ্য আমরা এখন সেপারেশনে আছি । অতএব তুমি যদি না চাও… ”
পৃথিবী তে সবচেয়ে কঠিন কাজ ক্ষমা চাওয়া । দূরত্ব বেড়ে গেলে ক্ষমা চাওয়া আরও কঠিন হয়ে যায় । কঠিন হলেও সে কাজ আজ করতে হবে শ্লোককে ।
“ একটু ওপরে আসবে অনু ! ”
“ তুমি যাও , আমি মা এর সাথে একটিবার দেখা করে আসছি ! “
শ্লোক বারান্দায় পায়চারি করছে অস্থির ভাবে । সেপারেশন টা কি সত্যি খুব দরকার ছিল ! অনন্যাকে তো ভালোবাসে শ্লোক । ওর জন্য কি এতটুকু স্যাক্রিফাইস করা যেত না !
“ কি বলবে বল ! ” শ্লোক পেছনে তাকিয়ে দেখে অনন্যা দাঁড়িয়ে আছে । অনেক কথা বলবার ছিল , অনেক ভাবে বলবার ছিল । কিন্তু যেটা সত্য তা প্রায়শই আমরা খুব সহজ ভাবে প্রকাশ করতে পারি না।
“ আমি তোমার সাথে বাঁচতে চাই অনু । ” অনন্যা হাসল ।
“ আমরা তো আলোচনার সব পর্যায় পেরিয়ে এসেছি শ্লোক । তোমার আর আমার জীবন থেকে চাহিদা আলাদা ।আমি মধ্যবিত্ত ই ভালো আছি ! অর্থের পেছনে বরং তুমি ছোট ! ” আগে যখন অনন্যার সাথে কথা কাটাকাটি হত তখন শ্লোক মাঝেই মাঝেই অনন্যার ভাবনা চিন্তাকে “ মিডলক্লাস মানসিকতা ” বলে তাচ্ছিল্য করত । আঘাত গুলো এখনো ভোলেনি অনন্যা ।
“ আমি আর ছুটতে চাই না অনু । অনেক হয়েছে । তোমার সাথে থাকতে চাই । মা এর সাথে থাকতে চাই । তুমি তো চাকরি করছ । আমি এখানে কিছু একটা ঠিক করে নেব । এতদিনের এক্সপেরিয়েন্স এর তো একটা দাম আছে বল ! আমি আর ফিরব না অনু । ”
“ আজ হয়ত তোমার ইমোশনাল ব্রেকডাউন হয়েছে । কাল আবার সব ঠিক হয়ে যাবে । ”
“ কত মেসেজ তোমাকে পাঠিয়েছি , দেখেছ । গত এক বছর ধরে প্রতিদিন তোমাকে মিস করেছি ।আমি মন তৈরি করে নিয়েছি । আমি শিলিগুড়িতেই থাকব ! ”
“ তুমি ফিরে যাও শ্লোক । আমরা সেপারেশনে রয়েছি । ডিভোর্স তো করছি না । এভাবেই চলুক ! “
অভিমানের উত্তর হয় না । সময় দিয়ে সেটাকে তরলায়িত করতে হয় ।
“ ঠিক আছে ! একটা কথা বল তো ! আমাকে ভালোবাসো ! এখনো ! ”
অনন্যা কোন সরাসরি উত্তর দিল না । শুধু বলল ,
“ মা দুজন কে একসাথে দেখলে খুশী হবে । একবার যাবে মা এর ঘরে ! “

৪।

এখন রাত প্রায় এগারোটা । সারাদিনের ক্লান্তি জমে রয়েছে শরীরে । সোফায় শরীর টা এলিয়ে দিল শ্লোক ।
“ বৌদিমণি এটা আপনাকে দিতে বলেছে ! ” প্রমীলা একটা প্যাকেট এগিয়ে দিল শ্লোকের দিকে ।
একটা প্যাকেট । শ্লোক তাড়াহুড়ো করে প্যাকেট টা খুলল । প্যাকেটের মধ্যে একটা বাধানো ছবি ।শ্লোক আর অনন্যার বিয়ের একটা ছবি । নিচে লেখা
“ শুভ জন্মদিন ! “
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।