• Uncategorized
  • 0

গল্পে অতনু দে

ছোট খাট ক্রাইসিস

“আহা – এতো চঞ্চল হলে চলবে নাকি? তুমি একটা দায়িত্বপূর্ণ পজিশনে আছো…”, তিনি বললেন। যে ছেলেটির সঙ্গে স্কাইপকল চলছে, সে তার বাড়ির সোফাতে বসে আছে, স্পষ্টতই অস্বস্তিতে। ছেলেবলাটা অবশ্য ঠিক নয়, লোক।অনেকদিন ধরেই সিনিয়ার পজিশনে আছে।
“কিন্তু স্যার – এই যে এতোগুলো মেজর ক্রাইসিস…”
“আঃ” বলে উঠলেন উনি।“ক্রাইসিস হচ্ছে জীবনের তথা সভ্যতার অঙ্গও ,মাইফ্রেন্ড। এই ক্রাইসিস গুলোকে বাড়তে দিতেই হবে।এর থেকেই উঠে আসবে এই সমস্যার সমাধান। তুমি তো জানো এসব, তাইনা? “
ছেলেটা – মানে লোকটা একটু মাথা চুল কোলো। তারপর একটু কিন্তু কিন্তু গলায় বলল “কয়েকটা জায়গার অবস্থা কিন্তু খুবই সঙ্গীন, স্যার। চীনের অবস্থা তো জানেন, তাছাড়া আমাদের আলজিরিয়ার অপারেশনও… কিছু করা উচিত নয় কি? একেবারেই কিছু না করাটা…”
“আরে বাবা – ক্রাইসিস লিডস টুকন ফ্লিক্ট। তার থেকে উঠে আসে সমাধান। এবং সেই সমাধান আসে ওদের মধ্যে থেকেই।ফ্রম দ্য টিম। বাইরে থেকে আমরা সব সমাধান করেদিলে ওদের স্পুন-ফিড করে দেওয়া হবে, যেটা ঠিক নয়।তাই, অনেক সময় কিছু না করাটাই ম্যানেজমেন্টের কাজ। অতি নিবিষ্ট ভাবে পর্যবেক্ষণ। ব্যাস – ওই অব্দি। ব্যালেন্সটা রাখতে হয়, বুঝলে–এ অতি সুক্ষ কন্ট্রোলের খেলা। বুঝলে?”
“আচ্ছা…”
“যাও, যাও – আমার জগিং এর সময় হয়ে গেল। “ট্যাবলেটের স্ক্রিনে টোকা মেরে স্কাইপকলটা কেটে দিলেন তিনি।
একটু বাদে ইলিফট থেকে নামলেন উনি। টি-শার্ট আর শর্টস পরে, হাতে ট্যাবলেট।
ক দিন ধরে বড্ডোই অনিয়ম হয়েছে।একটুও হাঁটা চলা নয়, ওই ট্যাব নিয়ে খালি খুট আর খাট। এভাবে আর কদ্দিন চলতে পারে! আজ কেব্রিস্কওয়াক একে বারে মাস্ট।
প্রথম রাউন্ডটা বেশ ভালো স্পিডে নিলেন তিনি। আঃ, শরীরটা বেশ ঝর ঝরে লাগছে দেখছি।দ্বিতীয় রাউন্ডটাও শেষ করতে সময় লাগলো না। তবে এবার কপালে অল্প অল্প ঘাম জমেছে। টি-শার্টে ঘামের ছোপ ছোপ।
নাঃ – এক কাপ কফি এবার খাওয়া যেতেই পারে। বিশেষত ব্যারিস্তাটা যখন ঠিক রাস্তার ওপারেই।কফি অর্ডার দিয়ে সেখানকার সোফায় বসে পা দুটো টান টান করে ছড়িয়ে দিয়ে ট্যাবটা খুললেন। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের মেসেজ, নোটিফিকেশন ইত্যাদি।পাগল করে দেবে দেখছি। না, না – এসব কিচ্ছু নয়। ব্যালেন্স রাখতে হবে ভাই। এখন শুধু একটু কফি খেতে খেতে রিল্যাক্স করা।
তবে একেবারে কিছুই করবেন না, তাতো হয় না।ছোট খাটো দুচারটে ইস্যুতে একটু কিছু করাই যায়।দোনো মোনো করতে করতে উনি একটু আধটু টোকা মারতে থাকলেন এদিকে সেদিকে।
“হেইই” করে চেঁচিয়ে উঠে পাপ্পু সজোরে ব্রেকটা মারলো।আর তাতেই উত্তরপ্রদেশের হাই ওয়ে ধরে ধাঁধাঁ করে ধেয়ে আসছে দৈত্যের মতো বাসটার সামনে এসে পড়া বাচ্চাটা বেঁচে গেল একটুর জন্যে।
জলপাইগুড়ির সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারবাবু একটু অবাক হয়েই জুনিয়ার ডাক্তারকে বললেন “কালরাত্রে যে ওষুধটা দিয়ে গেছিলাম, সেটায় দারুণ কাজ হলতো দেখছি। আমিতো ভাবলাম মাল্টিপল ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট ডিজিজ, কাজ করবেনা।বেঁচে গেল বোধ হয় এবারের মতো।“
অঙ্কেফেল করা সুমতি আজ ক্লাসে আচমকা তিনটে অঙ্ক ঠিক করে ফেললো। শিখামিস বললেন “বাঃ – এইতো তুই পারছিস! দেখলি – একটু চেষ্টা করলেই পারবি।“ তাই শুনে তো সুমতি একেবারে ডগ মগ।
আরওই লাজুক, ভিতুর ডিম, ক্যাবলা ছেলেটা সাহস করেও ইরে-ব্যান আর লাল লিপস্টিকের মেয়েটাকে একটা কাশ্মীরি কাঠের জুয়েল বক্স দিয়েই ফেলল। তাতে অবশ্য জুয়েল কিছু নেই। আছে একটা টেবিল টেনিস বল আর একটা ছোট্ট কার্ড।কার্ডটায় লেখা আছে “বলটা কিন্তু এখন তোমার কোর্টে।“ভীষণ স্মার্ট মেয়েটার অ্যানা-হ্যাথওয়ে হাসিতে আর চোখেতে তখন চিকির-মিকির লজ্জা।
হেডফোন বের করাই ছিল। সেটা তড়িঘড়ি ট্যাবে গুঁজে ভিডিওটা অন করে দিলেন ঈশ্বর। তারপর মুখে সামান্য হাসি মেখে ব্যাপারটা অতি নিবিষ্ট ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বসলেন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।