কাচের বাড়ি
মধুব্রতীকে প্রথম দেখেছিলাম ও পাড়ার মোড়ে। চাকভাঙা মধুরঙের শাড়িতে ওর ফরসা রঙে মিশেছিল স্বর্ণচাঁপার লালিত্য। ওকে ঘিরেই আমার প্রথম কবিতা লেখা, চাঁদের সাথে মিতালী, হাওয়ার কাছে আবদার। হ্যাঁ, সবটাই অবশ্য ওকে না জানিয়ে। জানিয়ে দেবার সাহস ছিল না। মধুব্রতীর তরফেও জানার আগ্রহ দেখিনি কোনোদিন। সে অনাগ্রহ এতটাই যে, তাকে আপাতদৃষ্টিতে অবজ্ঞা বলে ভ্রম হতে পারে। তবু আমার মনে মনে স্থির বিশ্বাস ছিল যে মধুব্রতী ও আমার মধ্যে কোথাও এমন কিছু আছে, যা না থাকলে এই পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকা অর্থহীন। হয়ত অনাবশ্যকও বটে।
সেই মধুব্রতীর সাথে আমার রোজ সাক্ষাৎ হত স্কুলে যাওয়া আসার সময়। লুকিয়ে লুকিয়ে। কালাচ সাপের মত হিলহিলে বেণী দুলিয়ে নীল পেড়ে সাদা কাপড় পরে কেমন মরালীর মত হাঁটতে হাঁটতে গেট পেরিয়ে সে ঢুকে যেত বালিকা বিদ্যালয়ের ভিতরে। আমি তখন বছর আঠারো কিংবা খুব জোর বছর কুড়ি হব। একেবারে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। বাবার পেনসনের পয়সা বাঁচিয়ে কিনে দেওয়া একটা সস্তার সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল আর বুক পকেটে গোটা পঞ্চাশেক টাকা এই ছিল আমার স্বপ্ন দেখার জুড়ি গাড়ি। রাত গভীর হলে কতবার আমি আর মধুব্রতী এই জুড়ি গাড়ি চড়ে হারিয়ে গেছি জ্যোৎস্নায় মাখামাখি কলোনির মাঠে। হাতে হাত রেখে তুলে নিয়েছি হাজার হাজার চন্দ্রকণা। মধুব্রতী এও কখনো জানতে পারে নি।
এক এক দিন ঝমঝমে বর্ষা অথবা কনকনে শীতের বিকেলে আমি প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে ওর স্কুলের সামনে দিয়ে হেঁটে গেছি লক্ষ বার। হয়ত অপাঙ্গে চেয়ে দেখেছে কখনও। আর তখনই ঠিক তখনই ডুবতে ডুবতেও আবার ভেসে উঠেছি আমি। আসলে আমাদের মত সাধারণ মানুষের ওই ভেসে ওঠাটুকুই সার। এ আমি জানতাম। তাই মধুব্রতী ছিল আমার দেবী। আর তার দর্শন আমার মোক্ষ। সে মোক্ষের মোহ এতটাই যে মায়ের মৃত্যুর দিন যখন মধুব্রতী নেহাতই সৌজন্য রক্ষার খাতিরে চাপা গলায় যখন বলে উঠেছিল –” ভেঙে পড়ো না ব্রত দা। কাকুকে তো তোমাকেই সামলাতে হবে”, মৃত্যুশোক ভুলে আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম আমাকে সামলানোর জন্য এবার বোধহয় দেবী নামবেন মর্ত্যে। বলা বাহুল্য সে ভাবনার কুহক আমার উপর ছেয়ে ছিল বহুদিন পর্যন্ত।
আমার সাধারণ বাবার সাথে জীবন নিয়ে প্রায়ই কিছু অসাধারণ আলোচনা হত আমার। ঠিক আলোচনা নয়। বাবা একটানা বলে যেতেন। আমি শুনে যেতাম হাঁ করে। আদর্শবাদী এবং চূড়ান্ত মধ্যবিত্ত বাবার আটপৌরে, সাদামাটা স্বপ্নগুলো সেই থেকেই যেন তাঁর চোখের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল আমার দু-চোখে। বড় হবার স্বপ্ন! এই টিন দেওয়া কোঠা বাড়িটার জায়গায় একটা মোটামুটি দোতলা পাকা বাড়ি, বেশ বড় একটা উঠোন, একপাশে ধানের গোলা, দু-তিন বিঘা দো ফসলী জমি..এইটুকুই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চেয়ে এসেছিলেন বাবা। আমার চাওয়াটিও ভিন্ন ছিল না। বাড়তি বলতে চাইতাম শুধু একটি তুলসীমঞ্চ এবং তার নীচে সিঁদুরে রঙের কাপড় পরে, মাথায় আঁচল দিয়ে জ্বলন্ত প্রদীপ হাতে যেন অনাদিকাল হতে দাঁড়িয়ে থাকে আমার মানসপ্রতিমা..মধুব্রতী!
“আমায় টিউশন পড়াবে ব্রত দা?”..
হেমন্তের এক বিষণ্ণ বিকেলে এমনি করে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এক বসন্ত এসে দাঁড়িয়েছিল আমার সামনে। জোরে ব্রেক কষে সাইকেল থামিয়ে প্রায় তুতলে যাওয়া কণ্ঠকে কোনোমতে সামলে নিয়ে বলেছিলাম –“আমি?”
মাখনের মত পেলব মসৃণ হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে শ্যাম্পু করা ফুরফুরে অবাধ্য চুলগুলোকে কান ও কপালের দু পাশে ঠেলে দিতে দিতে চাপা হেসে মধুব্রতী বলেছিল–
“হ্যাঁ তুমিই। মা বলে দিয়েছেন সপ্তাহে চারদিন, পাঁচশো টাকা মাইনে। রাজি থাকলে কাল সকালে এসো আমাদের বাড়ি।”
রাজি?? আমার কাছে এ তো মেঘ না চাইতেই জল! হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকুনিকে কোনোরকমে থামিয়ে ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলেই ভঙভঙে সাইকেলটায় চেপে একদমে বাড়িতে ঢুকে নিজের হাতে সজোরে চিমটি কেটে দেখলাম আদৌ বেঁচে আছি তো? নাকি যা ঘটল তা সবটাই স্বপ্ন! কোথা থেকে দমকা হাওয়া এসে বলে গেল–“সব সত্যি ব্রত.. কোথাও এতটুকু ফাঁকি নেই..ভয় নেই, পুড়বি না..”
কিন্তু মধুব্রতী যে পোড়াতেই চেয়েছিল। ওর রূপের আগুনে, তীব্র কটাক্ষের ঝলসানিতে ক্রমশঃ পতঙ্গের মত পুড়ে যাচ্ছিলাম আমি। আমার ফেরার উপায় ছিল না। ততদিনে আমি মনে মনে ছুঁয়ে ফেলেছি ওর আঙুল-কপাল-ঠোঁট-গ্রীবা-উন্মুক্ত বক্ষদের। গণিতের জটিল সমাধান কষতে কষতে ও এক এক সময় ঘেমেনেয়ে অস্থির হয়ে উঠত। আর ওর ঘর্মাক্ত ও ঈষৎ আরক্ত মুখ দেখে আমার একুশ বছরের শরীরটার প্রতিটি রোমকূপে আগুন ধরে যেত। মধুব্রতী এসব টের পেত বেশ। উপভোগও যে করত না এমন কথাও জোর দিয়ে বলতে পারি না। দুরন্ত পাহাড়ী ঝোরার দুর্নিবার টানে একটি ছোট্ট নুড়ি যেমন গড়িয়ে যায়, গড়াতে গড়াতে ভাঙতে ভাঙতে আমারও অবস্থা ঠিক তেমনই হচ্ছিল। আমি ক্রমে ক্রমে ভুলে যাচ্ছিলাম আমার অস্তিত্ব, পরিচয়, পরিবার, প্রৌঢ় বাবা আর আমার মৃতা মা’র মুখ। এক অপার্থিব জালক যে বেঁধে ফেলছে আমায়, সেদিন পর্যন্ত আমি তা বুঝিনি। কে জানে হয়তো বুঝতে চাইও নি।
–“রোজ রোজ হাঁ করে কী এত দেখো বলতো?”
–“ককই.. কককিছু না তো..”
–“কিছু না? সত্যি করে বলো..”
এক পা এক পা করে আমার দিকে এগিয়ে আসছিল মধুব্রতী। ওর গাঢ় গলার স্বরে ডিসেম্বরের হাড়কাঁপানি শীতেও রীতিমত ঘামছিলাম আমি; ওর উষ্ণ নিঃশ্বাসে হৃদস্পন্দন দ্রুততর হচ্ছিল; দু তিনদিনের না কামানো দাড়ি ভরা গালে নিজের নরম ঠোঁট ঘষতে ঘষতে একসময় সমস্ত সংযম হারিয়ে মধুব্রতী বলে উঠেছিল —
“আমায় নিয়ে পালিয়ে যেতে পারো না ব্রত দা? বলো না.. পারো না?”
দু হাতের ঘেরাটোপের ভিতর ওর পাখির মত শরীরটাকে নিজের বুকের মাঝে পিষে ফেলতে ফেলতে আমিও বলে উঠেছিলাম
“পারি মধু..সমস্ত চাওয়া পাওয়ার দলিল দস্তাবেজ থেকে দূরে.. বহুদূরে.. কোনো এক শীতল বনানীর কোলে, বিরাট এক পর্বতের সানুদেশে, উদ্দাম নদীর তীরে তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারি আমি..আমিই পারি..আমাকে যে পারতেই হয় মধু… সেই আবহমান কাল ধরে..”
–“ছেলেটাকে বাঁচাও সনাতন দা। ও যে পাগল হয়ে যাচ্ছে। “
–” কী করব সমর? তোর বৌদির রোগটা যে এইভাবে শিকড় ছড়িয়েছে ব্রতর মধ্যে, আমি যে বুঝতে পারি নি রে।”
বলতে বলতে গলা বুজে এল বাবার। চকচকে লাল রঙের সিমেন্টের টানা বারান্দায় দু হাতে মাথা চেপে ধরে বসে আছে আমার বাবা, পাশে শুকনো মুখে বড় দা। বাবার ভাঙাচোরা শীর্ণ শরীরটার পাশে বসে সামনের বাড়ির সমরকাকু বলে যাচ্ছিলেন কথাগুলো।
হ্যাঁ, আমারই সম্পর্কে। আমি নাকি ধীরে ধীরে পাগল হয়ে যাচ্ছি। আজ সাতদিন হল সবাই মিলে আমাকে আটকে রেখেছে উত্তর দিকের এই কোঠাঘরটায়। হাতে পায়ে শেকল বেঁধে। দুধের সরের মত নরম জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে আকাশ-মাটি-চরাচর! সন্ধ্যাতারায় ফুটে উঠছে আমার মায়ের মুখ..একে একে! এমন মায়াবী রাতেই তো মধুব্রতী পাগল হয়ে উঠত আমার কাছে আসার জন্য। জগৎ সংসার সবকিছু ভুলে পরস্পরের সঙ্গে মিশে যেতাম আমরা! কত অনাবিল, কত স্বর্গীয়, কত মোহময় সেই মুহূর্ত!
ভাবনায় ছেদ পড়ল। সমরকাকু আবার শুরু করেছেন–
“কুমুদ, মা তুই এবার জামাইকে খবর দে। কলকাতায় তো এসবের চিকিৎসার জন্য কত বড় বড় ডাক্তার আছে শুনেছি। ব্রতকে না হয় একবার সেখানেই দেখিয়ে আন।”
কুমুদ আমার দিদি। সমরকাকুর কথায় ডুকরে কেঁদে উঠল ও; ঘর থেকে আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম। সমরকাকুর ওপর প্রথমটায় ভীষণ রাগ হলেও এখন খুব জোর হাসি পাচ্ছে আমার। লোকটা বলে কি না রোজ বিকেলে আমি পোড়ো বাড়িটার দোতলায় কোণের ঘরে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিই। কী যে করি কেউ জানে না। সাতদিন আগে ঐ ঘর থেকেই না কি আমাকে বিধ্বস্ত অবস্থায় তুলে এনেছিল ক্লাবের ছেলেরা। তারপর থেকে আমি কাউকে বোঝাতেই পারছি না যে ওখানে মধুব্রতী আছে। আমার মধুব্রতী..আমার দোসর..আমার প্রাণের মধু..আমার একান্ত ব্যক্তিগত সত্ত্বাটি।
আজ জামাইবাবু এলেন, সেই সুদূর কেরল থেকে। জামাইবাবুর কোয়ার্টারটি বড় সুন্দর। ছবিতে দেখেছি। যতদূর চোখ যায় সারি সারি নারকেল গাছ, ঠিক যেন একটা ছবি। মধুব্রতীকেও দেখিয়েছিলাম। ও প্রায়ই বলত–
“এমন একটা জায়গায় আমায় নিয়ে যাবে ব্রত দা?”
ওর নরম গালে অনেকক্ষণ ধরে চুমো আঁকতাম আমি। আদুরে বিড়ালের মত ও আমার গা ঘেঁষে বসে থাকতে ভালবাসত। বসেই থাকত.. বসেই থাকত..
উফফ! এরা কি এক মুহূর্ত শান্তিতে থাকতে দেবে না আমায়? মধুর কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পুরোপুরি। এবার ওর ভাবনাকেও ছুঁড়ে ফেলে দিতে বাধ্য করবে নাকি? কী ভেবেছে টা কি এরা? পালা করে একবার দিদি, একবার বড় দা, একবার জামাইবাবু এসে সেই একই কথা নানা রকম ভাবে বুঝিয়ে চলেছে আমাকে। মধুব্রতী নাকি সবটাই আমার কল্পনা। মধুব্রতী বলে আসলে কেউ নেই। আমি ওদের বলেছি এ সব ভুল। কলেজ থেকে ফেরার পথে কয়েকটা জানোয়ার ওর ফুলের মত শরীরটাকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছিল। পাগলের মত ছুটে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। ততক্ষণে সব শেষ। এ সমস্ত আমার চোখের সামনে ঘটা ঘটনা। ওরা বিশ্বাস করে না। না করুক। তার মানে তো এই নয় যে মধু ছিল না। আমি জানি ও আছে। আমার সবটুকু জুড়ে ও থেকে যাবে চিরকাল। বাবাকে কতবার বলেছি এই বুক চাপড়ে চাপড়ে কান্না অসহ্য লাগছে আমার। মাঝে মাঝে ভাবছি সব ভেঙেচুরে তছনছ করে দিই। পারছি না শুধু মধুর কথা ভেবে। এসব করলে ও কষ্ট পায়, আর ওর কষ্টে আমিও।
হাত পায়ের শেকলগুলো কেটে বসে যাচ্ছে এবার। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। রাতের দিকে জ্বর আসছে ভীষণ। ভয় পাচ্ছি না। মধু আছে তো। জলপটি দিয়ে দিয়ে আরাম দিচ্ছে আমাকে। ওর কষ্ট হচ্ছে ভেবে আমি বারণ করেছিলাম কয়েকবার। এখন আর বাধা দিই না। করুক, ওর প্রাণে যা চায়। ভালবাসলে মানুষ এসব কষ্ট স্বেচ্ছায় সহ্য করে। আপশোশ! আমার মধুকে কেউ চিনল না..একটি দিনের জন্যও না।
কিন্তু আজ থেকে আমি আর মধুর কথা ভাববো না। মধু বলেছে ওকে ভুলে যেতে। বাবার কষ্ট নাকি ও আর দেখতে পারছে না। আমাকে এবার ভালো হয়ে যেতে হবে,..সুস্থ হয়ে যেতে হবে.. যেতেই হবে।
এক বছর পেরোতে আর একদিন বাকি। এই একটা বছর ধরে কলকাতার ডাক্তারেরা কী অক্লান্ত পরিশ্রমটাই না করেছেন আমাকে সুস্থ করার জন্য। কাল আমার ছুটি। দীর্ঘ বারোটা মাস হাসপাতালে কাটানোর পর কাল বাড়ি যাব আমি। মধুকে এখন আর তেমন মনে পড়ে না। সন্ধ্যার দিকটা বেশ ফুরফুরে লাগে এখন। হাসপাতালের টপ ফ্লোরের পিছন দিকটার এই বারান্দায় তেমন একটা কেউ আসে না। রেলিঙের ফাঁক গলে এখানেই একটা লম্বা টানা কার্ণিশের উপর এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি আমি, ব্রত দত্ত, কেরানী সনাতন দত্তের কনিষ্ঠ সন্তান। দ্বাদশীর ভাঙা ভাঙা জ্যোৎস্নায় ধুয়ে যাচ্ছে হাসপাতালের লাগোয়া মাঠ, বাগান, পুকুর। আবেশে আমার চোখ বন্ধ হয়ে এল। আহ্! কী শান্তি! চাঁপাফুলের গন্ধে ভারী হয়ে আছে জায়গাটা। বড় মিষ্টি গন্ধ!
–“ব্রত দা..”
না, চমকাইনি। এই তো সেই কাঙ্খিত ডাক, যার জন্য দীর্ঘ বারোটা মাস অপেক্ষা করেছি আমি। আমি জানি মধুব্রতী এসেছে। ওর লম্বা লম্বা কালো চুলের গোছা প্রবল হাওয়ায় উড়ে এসে পড়ছে আমার চোখে মুখে। আমার ডানহাতে জড়িয়ে নিয়েছি ওর পদ্মের পাপড়ির মত নরম অথচ ভীষণ ভীষণ ঠান্ডা একটা হাত, হ্যাঁচকা টানে ও এসে পড়েছে আমার বুকের মাঝে, অভিমানী ঠোঁটের তিরতির কাঁপন আমি থামিয়ে দিচ্ছি নিজের দুই ঠোঁট দিয়ে, তীব্র সুখের দমকে কেঁপে কেঁপে উঠে ও অস্ফুটে বলে উঠছে–
“এসো এসো এসো ব্রত দা.. আর কত অপেক্ষা করাবে আমায়?..চলে এসোওওওও..”
আমার বন্ধ দু চোখের পাতার ভিতর থেকে ক্রমশ মুছে যাচ্ছে বাবা-দিদি-বড়দার মুখ, আমাদের বাড়ি, ভাঙা সাইকেল, বাবার পাকা বাড়ির স্বপ্ন, বুক পকেটের পঞ্চাশ টাকা…মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে আমাকে ফেরাবার জন্য সবার সব চেষ্টা, এক তিল এক তিল করে ভেঙে যাচ্ছে আমার সংযম, আমি চারতলার কার্ণিশ থেকে মধুব্রতীর হাত ধরে শরীর ভাসিয়ে দিচ্ছি হাওয়ায়.. মিলিয়ে যাচ্ছি..তলিয়ে যাচ্ছি অতল জগতের গভীরে..চিরকালের মত, সেই যেখানে বহু দিন ধরে একলাটি হয়ে আছে আমার প্রাণ..আমার দোসর..আমার প্রিয়া..আমার মধুব্রতী।।