• Uncategorized
  • 0

গল্পবাজে মানবেশ মিদ্দার

মূর্তি পাহাড়ী

আমাকে বাদ দিয়ে আমার আদ্দার মানে ঠাকুরদার আরোও দুটি বিষয়ের প্রতি প্রবল ভালোবাসা ছিলো। এক, বন-জঙ্গল গাছপালা, এতো সবাই জানে আর দ্বিতীয় হলো তবলা। বেনারস ঘরাণার স্রষ্টা পন্ডিত রামসহায়জীর কোনো এক ছাত্রের কাছে নাকি তিনি দীর্ঘ দশ-এগারো বছর তবলার পাঠ নিয়েছিলেন। আর আমার এই আদ্দার ঠাকুরদাদা কর্ষণ দেব ছিলেন নাকি মস্ত বাঁশি বাদক। এই দুই ঠাকুরদাদার দুটো মিউজিকাল গুণ আমি স্বয়ং ছুঁয়ে রেখেছি, মানে ছুঁয়েই রেখেছি, ধরে রাখিনি। মাঝে মাঝে তাংকিটি-কিটিতাং করি আবার কখনো বেসুরে কিংবা অসুরে পু-পু-ফু-ফু করি। এবার আসল গল্পে আসা যাক। আমার বয়স তখন চৌদ্দ কিংবা পনেরো। সাতদিন পরে গরমের ছুটি পড়বে স্কুলে, বেশ আনন্দ হচ্ছে, দেখি আদ্দা কোথায় বেড়াতে নিয়ে যায় এবার … ।

আজ সকাল বেলায় আদ্দার তবলার আওয়াজে ঘুম ভাঙলো আমার। আদ্দা যেনো এই চার, পাঁচদিন একটু বেশিই তবলার রিয়াজ করছে। কোনো রকমে চোখে, মুখে একটু জল দিয়ে, কুলকুচি করে ছুট্টে চলে গেলাম আদ্দার ঘরে। আমি আদ্দার ঘরে ঢুকতেই তবলা থামিয়ে আদ্দা আমায় বললো।
… এসো দাদু ভাই, বাঁশিটা একটু ধরো দেখি, তোমার সাথে অনেকদিন বাজাইনি।

… না আদ্দা, আজ থাক, আগে বলো কোথায় বেড়াতে যাবো এবার।

… যাবো যাবো! তবে এখনো জানিনা জায়গাটা ঠিক কোথায়। এবার আমরা আমাদের গাড়িতেই যাবো। আসলে যেখানে যাবো সেই জায়গাটাই তো চিনিনা দাদুভাই। একটা রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে এবার দুজন মিলে, বুঝলে তো। কাউকে জানানো চলবে না কিন্তু।

… আচ্ছা আদ্দা, জঙ্গলের কোনো রহস্য নাকি?

… এখন থাক, পরে বলবো। আচ্ছা বলোতো, দেয়ালে টানানো ওই ছবিটা কার?

আমি বললাম, ও তো তোমার ঠাকুরদার একটা বাঁশি বাজানো ছবি। কোনো এক বিখ্যাত আর্টিস্ট নাকি এঁকে দিয়েছিলেন। এসব তো তোমার কাছেই শোনা। আদ্দার ইঙ্গিতে আমি খাটের উপর উঠে দেয়াল থেকে ছবিটা নামিয়ে এনে দিলাম তার হাতে। ছবিটা হাতে নিয়ে, ছবির পা ছুঁয়ে নমস্কার করে বলতে শুরু করলো আমার আদ্দা।

… দাদুভাই, আমার ঠাকুমা অজানা অসুখে হঠাৎ মারা যাওয়ার পর, ঠাকুরদাদার আর সংসারের প্রতি টান ছিলোনা। এক মাত্র ছেলে আর মেয়েকে বিয়ে দিয়ে, তাদের উপর সংসারের দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে, জৈন ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করে, সন্ন্যাস নিয়ে আর আজীবনের সঙ্গী গোটা কতক বাঁশি নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলো আমার ঠাকুরদা। তখন বয়স ওই পঞ্চাশ কি পঞ্চান্ন হবে হয়তো। আমি খুব কেঁদে ছিলাম, ঠাকুরদা আর ফিরবে না শুনে। ঠাকুরদা বাঁশি বাজাতো, আমি সাথে তবলা। কেমন ছবির মতো মনে পড়ে দিন গুলো। যাইহোক চলে যাওয়ার প্রায় চৌদ্দ বছর পর লোক মুখে খবর এলো ঠাকুরদা নাকি পরেশনাথ পাহাড়ের কাছে মধুবনে একটা জৈন আশ্রমে আছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, আদ্দা, পরেশনাথ পাহাড়ে, মানে বিহারের মধ্যে তাইনা? (আর তোমাদের বলে রাখি, তখন ঝাড়খন্ড হয়নি।)

… হুমম দাদু ভাই, পাহাড়টা জি,টি রোডের ডানদিক বরাবর একবারে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে যেনো। বরাকর থেকে পঞ্চাশ-ষাট কিলোমিটার হবে বোধ হয়। তবে মধুবন জায়গাটা ঠিক পাহাড়ের উল্টো পিঠে পড়ছে। জি,টি রোড ছেড়ে ডান দিকে কাঁকুরে রাস্তা ধরে প্রায় ষোলো কিলোমিটার বন জঙ্গল পেরিয়ে সেই মধুবন। একবারে পাহাড়ের কোলে। এই পাহাড়েই নাকি তেইশ জন জৈন তীর্থঙ্কর সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেছিলেন। এই পাহাড়টাই জৈনদের সর্ববৃহৎ তীর্থস্থান। এক হাজার তিনশত ছেষট্টি মিটার উচ্চ এই পাহাড়ের শীর্ষদেশে তাদের সাধনার স্থান ছিলো আর পাদদেশে মধুবন গ্রাম। ভীষণ মনোরম জায়গা।

… আদ্দা, তারপর কি হলো বলো, তোমরা গেলে সেখানে?

… হুম, খবর পাওয়ার ছয় মাস পরে আমি আর আমার বাবা মানে তোমার পোঠাকুরদা অনেক কষ্টে সেখানে উপস্থিত হলাম। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা তো খুব খারাপ ছিলো। শেষ পর্যন্ত দেখা হলো ঠাকুরদার সাথে, কয়েক দিন থাকলামও। মন ভরে গেলো পাহাড়ি পরিবেশের সজীব শান্ত শোভা দেখে। চারদিকটা সবুজ জঙ্গলে ঘেরা। শ্বেতাম্বর, দিগম্বর জৈন সাধকদের আনাগোনা সব সময়। গোটা এলাকার সমস্ত মানুষ নিরামিষাশী। একটা অদ্ভুত শান্ত মনোরম পরিবেশ। আর এ সবের মাঝে ঠাকুরদাকে একবারে মুনি-ঋষিদের মতো দেখতে লাগছে। সাদা পোশাক, মুন্ডিত মস্তক তবে মাথার চুল ও দাড়ি গোঁফের যে আভাস দেখা যাচ্ছে তাতে বুঝতে পারলাম সব পেকে একবারে সাদা হয়ে গেছে। ফেরবার সময় খুব মন খারাপ করছিলো তখন ঠাকুরদা এসে এই ছবিটাই আমার হাতে দিয়েছিলো। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আমি যত্নে এটাকে বাঁধিয়ে দেয়ালে টানিয়ে রেখেছি।

আমি বললাম, তারপর কি হলো তোমার ঠাকুরদার?

… তারও অনেকদিন পর ওখান থেকে একটা চিঠি এসেছিলো, ঠাকুরদার নিজের হাতে লেখা। চিঠি পড়ে জানা গেলো মধুবন থেকে ঠাকুরদা মূর্তিপাহাড়ী নামে কোনো এক জায়গায় চলে গেছে।

আমরা দুজনে এ বছর ওই মূর্তিপাহাড়ী জায়গাটা খুঁজতে যাবো আর এই মানুষটার শেষ জীবনের রহস্যটা খুঁজে বের করবো।

আমি তো ভীষণ আনন্দে আদ্দাকে জড়িয়ে ধরলাম। এমন বন, জঙ্গল, পাহাড়, নদী চষে বেড়াতে ভীষণ মজা লাগে আমার। তার সাথে এমন একটা প্রাচীন অনুসন্ধানের গন্ধ। সব কিছু মিলে মিশে মনের মধ্যে একটা সিনেমা চলতে লাগলো যেনো। পরেশনাথ পাহাড়, কোল দিয়ে আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে; মধুবন, আমরা হেঁটে পাহাড়ে উঠছি; তীর্থঙ্করদের সাধন স্থল, নীরবে আমরা বসে আছি চুপ চাপ। আবার গাড়ি ছুটছে, মূর্তিপাহাড়ী, ছোট্টো পাহাড়ী গ্রাম, উফফ … ! কি যে মজা হবে না। আমি মনে মনে সব যেনো দেখতে পেলাম একবারে স্পষ্ট।

* * * * *

আমাদের গাড়িটা ছুটে চলেছে জি,টি রোড ধরে, ডানদিক বরাবর কাছে দূরে ছোটো বড়ো পাহাড়, কোনোটা ধূসর , কোনোটা সবুজ, দুপুরের রোদে পুড়ে যাচ্ছে চারদিক। ছোটনাগপুর মালভূমির প্রান্তদেশ গুলো ভীষণ রুক্ষ, জনমানবহীন প্রায়। দূরে রুক্ষ রোদ্দুরের কম্পন। একটা কম্পিত তীব্র আলোর স্রোত বয়ে যাচ্ছে মাঠের উপর দিয়ে, গাছপালার উপর দিয়ে, পাহাড়ের উপর দিয়ে, রাস্তার উপর দিয়ে। গাড়ির কাঁচ নামানোর উপায় নেই, গরম হাওয়ার তাত ঝলসে দিচ্ছে মুখ। তোপচাঁচি পেরিয়ে রাস্তার ডানদিক বরাবর গা এলিয়ে দিয়েছে পরেশনাথ পাহাড়। দুপুরের রোদের কম্পন তার সবুজ গা জুড়ে। আমি একবারেই নীরব হয়ে গেছি, আদ্দাও চুপচাপ ড্রাইভ করছে। পাহাড় আমার ভীষণ ভালো লাগে। দেখলেই বুকের মধ্যে কেমন হয়। কোন সুদূর অতীতের আদিম গন্ধ যেনো পাহাড়ের গা থেকে চুঁইয়ে আসে আমার ঘ্রাণে। শিলার গভীর থেকে অব্যক্ত অতীত যেনো কথা বলতে চায়। আমাকে একাকী নির্জন গভীর অন্দরে টেনে নিয়ে গিয়ে শুনিয়ে দিতে চায় লাখ বছরের জমে থাকা উত্থান-পতনের গল্প। ভিতরটা মুচড়ে ওঠে কোনো এক অনুপোলব্ধ অনুভূতির ছোঁয়াচ পেয়ে। আমাদের গাড়ি জি,টি রোড ছেড়ে ডান দিকের কাঁচা রাস্তা ধরেছে। এ পথটা কোথাও জঙ্গলের মধ্য দিয়ে, কোথাও শুকনো ঘাসবনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে। কোথাও কোথাও ছোটো ছোটো গ্রাম। পাকা ঘরবাড়ি বলে কিছু তেমন নেই, গরীব মানুষের বসবাস। মালভূমি অঞ্চলের জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ছুটে চলা এই রাস্তা কি সুন্দর! কোথাও চড়াই কোথাও উৎরাই। কোথায় টিলা বা পাহাড়ের চূড়া দিয়ে ছুটে চলেছে, আবার কোথাও দুটো পাহাড়ের খাঁজ দিয়ে এঁকে বেঁকে এগিয়ে চলেছে। দুপুর দুটো নাগাদ আমরা এসে পৌঁছালাম মধুবনে।

মধুবনের একটা জৈন মন্দিরেই দুপুরের নিরামিষ আহার সম্পন্ন হলো আমাদের। অদ্ভুত ব্যাপার হলো এই পুরো এলাকাটাই নিরামিষাশী কোন সুদূর অতীত থেকে কেউ জানেনা; জৈন প্রভাবেই হবে হয়তো। তবে মূর্তিপাহাড়ী জায়গাটার অনুসন্ধান কেউ ঠিকঠাক দিতে পারলো না। একজন জৈন সাধক, দেখে মনে হয় বয়সটা একশ ছুঁই ছুঁই। তিনি আদ্দার ঠাকুরদাদার ছবি দেখে চিনতে পারলেন এবং তিনিই মুর্তিপাহাড়ী গ্রামের হদিস দিলেন। মধুবন থেকে উত্তরে আরোও দশ কিমি গেলে মুরতপুরী নামে একটা গ্রাম আছে। ওই গ্রাম থেকে দেড় কিমি দক্ষিণে মূর্তিপাহাড়ী নামক সেই জায়গা। একটা ছোট পাহাড় আর তার পাদদেশে একটা ছোটো গ্রাম ছিলো বহুকাল আগে। তবে এখন নাকি ওই গ্রামটা একটু দূরে সরে গেছে। সে রাতটা আমাদের মধুবনেই কাটলো। পরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়লাম আদ্দা আর আমি। পরেশনাথ পাহাড়টা ঘুরে দেখা হলোনা।

* * * * **

মুরতপুরী গ্রামটা বড় সুন্দর। ছোট্টো গ্রাম, অদূরেই মূর্তিপাহাড় দেখা যায়। ফাঁকা ফাঁকা ছোটো বড়ো শাল, শিশু গাছের ছায়ায় ছোটো ছোটো ঘর, ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু কৃষ্ণচড়া, পলাশ আর ফ্রুশ গাছ। এমন গ্রামে মোটরের আনাগোনা যে খুব কম, সেটা বুঝতে পারা যায়। খালি গায়ে উলঙ্গ বাচ্চারা একটু দূরে দাঁড়িয়ে। মেয়েরা, ছেলেরাও সবিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে আমাদের গাড়িটা। সবার পরনেই মলিন পোশাক। একটা বাচ্চা ছেলেকে আদ্দা কিছু একটা জিজ্ঞেস করতেই সে আঙ্গুল তুলে একটু দূরে একটা বাড়ি দেখিয়ে দিলো। আমরা সেই বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম। বাড়ির মধ্যের পরিবেশ দেখে বোঝা যায় এরাই এই গ্রামের মাথা। যাই হোক গৃহকর্তার নাম রামু পাঁড়ে। বেশ বয়স্ক ভদ্র মানুষ, কর্মঠ শক্ত পোক্ত খাঁটি চেহারা। তাঁর কাছে আমাদের অভিপ্রায় জানাতেই তিনি বিস্মিত হয়ে গেলেন। আমাদের বললেন, ওই পাহাড়ে যারা যায় তাদের অধিকাংশই আর ফিরে আসেনা। কেবল মাত্র এই গ্রামের মানুষ গুলো ছাড়া। মনে খারাপ মতলব নিয়ে গেলে তো তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তাছাড়া আমরা আর ওই পাহাড়ের দিকে কাউকে যেতে দিই না এখন, কেবল মাত্র সাধু-সন্ত মানুষ ছাড়া। ওই পাহাড়ই আমাদের গ্রামকে আগলে বাঁচিয়ে রেখেছে। সে সব অনেক অলৌকিক গল্প। অনেক বহিরাগত মানুষ ক্ষতি করতে চেয়েছে আমাদের, ওই পাহাড়ই আমাদের বাঁচিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমার আদ্দা সমস্ত খুলে বললো এবং কর্ষণ দেবের সেই ছবিটা দেখালো। এবার রাজু পাঁড়ে ভীষণ বিস্মিত হলেন, অনেকক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন আমাদের দিকে তারপর আদ্দার পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন। আমি তো হতবাক, হঠাৎ কি হলো ব্যাপারটা। তিনি বললেন আপনারা নিশ্চয় যাবেন ওই পাহাড়ে, তবে গ্রামের রীতি অনুসারে একটা পরীক্ষা আপনাদের দিতে হবে আজ সন্ধ্যায়, তারপর ওই পাহাড়ে আপনারা যেতে পারবেন। আজ আমার বাড়িতেই আপনাদের থাকতে হবে।

দুপুরটা ভীষণ আদর, যত্ন, খাতির, আপ্যায়নের মধ্যে কেটে গেলো। এমন যত্ন-আত্তি আমাদের কল্পনাতীত ছিলো। ভীষণ পরিপাটি নিরামিষ আহার। শুনলাম সবই ওই পাহাড়ি জমির শাকসবজি: কিছুটা গ্রামবাসীরা লাগায়, কিছুটা পাহাড়ে এমনিই জন্মায়।

এই গ্রামেই আছে একটা ছোট্টো জৈন মন্দির, সাথে ছোট্টো স্কুল। এই মন্দিরে প্রত্যহ সকাল সন্ধ্যা মাঙ্গলিক ধ্যান, পূজা অর্চনা হয়। দুপুরে গ্রামের ছেলে মেয়েরা পাড়াশুনা করে। এই জৈন মন্দিরে আছে পার্শ্বনাথস্বামীর একটা মূর্তি। এই মন্দিরেই গোধূলির মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে আমাদের যেকোনো একটা সাধনার পরিচয় রাখতে হবে এবং উত্তীর্ণ হতে হবে পরীক্ষায়। তাহলেই ওই পাহাড়ে যাওয়ার ছাড়পত্র পাওয়া যাবে। কিন্তু পরীক্ষায় পাস ফেল কিভাবে নির্ধারণ হবে, সে ব্যাপারটা একবারে গোপনীয়। আদ্দার একবারে নিজস্ব একটা ছোট্টো তবলার বিশেষ সেট আছে, যেটা সব সময় তার সাথেই থাকে; বিশেষ বলার কারণ হলো আদ্দা একটা কাঠের ডুগি মানে বাঁয়া তৈরী করিয়েছিলো। বাঁয়া মাটির কিংবা তামারই হয়ে থাকে। এই কাঠের ডুগি আমি আগে কোথাও দেখিনি। আমিও একটা আড়বাঁশি নিয়ে এসেছি। এই বাঁশি আর তবলাতেই আমরা সাধনার পরীক্ষা দেবো ঠিক করলাম।

গোধূলীর মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান শেষ হলো, এবার আমাদের পালা। আমি বাঁশি নিয়ে বসলাম, আদ্দা তবলায়। আমি প্রণাম করে বাঁশিতে ধরলাম মিশ্রখাম্বাজ রাগে সেই বিখ্যাত ভজন, “বৈষ্ণব জন তো তেনে কহিয়ে যে … “। নিজেই ডুবে গেলাম ভজনে, নিজের অজান্তেই। এমন পরিবেশে কোনো দিন আমি বাঁশি বাজাইনি। যখন ভজন শেষ করলাম তখন আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চরাচর। সবাই একবারে নীরব। একটা দুটো পাখি নেমে এসেছে মন্দিরের উঠানে, তারাও চুপি চুপি শুনছিলো যেনো। এরপর আদ্দার পালা। এমন সুন্দর জ্যোৎস্না ঝরা সন্ধ্যায় আমি ইমন রাগে একটু আলাপ করে তিনতালের একটা বিলম্বিত মুখ ধরলাম। শুরু হলো আদ্দার তবলা বাদন। প্রথমে পেশকার, তারপর কায়দা, রেলা, গৎ, মুখড়া এই ভাবে এগিয়ে চলতে থাকলো তবলা বাদন। আমি বিমোহিত হয়ে গেলাম, এমন তবলা বাদন আমি জীবনে শুনিনি, এমনকি আমার আদ্দা যে এতো উচ্চমানের বাদক আমি জানতাম না। আদ্দার দুই চোখ কখনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কখনোবা অর্ধনিমিলিত। ধ্যানমগ্ন বাদক যেনো ছন্দ-জাদু-রাজ্যের অতল গহিনে ডুবে গেছে। সমস্ত বাহ্যজ্ঞান যেনো লোপ পেয়েছে আদ্দার। আমার ইমনের গৎ তখন দ্রুত লয়ে চলছে, আদ্দার চোখ বন্ধ, কোনো ভ্রুক্ষেপ মাত্র নেই। মাঝে মাঝে তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হচ্ছে তবলার বিভিন্ন বোলবাণী বিচিত্র লয়ে, বিচিত্র ছন্দে। সবাই একবারে নীরব। কয়েকটা কুকুর চুপ করে বিস্মিত চোখে সেই বাজনা শুনছে। কোথা থেকে যেনো দশ বারোটা পাখি নেমে এসেছে উঠানে। টুকরা, মুখড়ার ছন্দে তারাও নেচে উঠছে মাঝে মাঝে। একটা ছোট্টো সুন্দর অচেনা পাখি ধীরে ধীরে উড়ে এসে আদ্দার কাঁধে বসলো একটু সময় তারপর আমার কাঁধে একটু বসেই উড়ে চলে গেলো উঠানের দশ-বারোটা পাখির দলে। আদ্দা এবার চোখ খুলে একটা লম্বা চক্রদার তিহাই বাজিয়ে বাজনা শেষ করলেন। কয়েক মিনিট সবাই একবারে নিস্তব্ধ। পাখিরা একে একে উড়ে চলে গেলো পাশের গাছে নিজেদের বাসায়। মন্দিরের জৈন ভিক্ষু এবং রামু পাঁড়ে দুজনেই বললেন, আপনারা মূর্তিপাহাড়ী যাওয়ার উপযুক্ত মানুষ। কাল সকালে স্নান করে ওই পাহাড়ে যেতে পারেন, ও পাহাড় বড়ো পবিত্র। আদ্দা জিজ্ঞাসা করলেন, পরীক্ষায় পাশ নাকি ফেল, কিছুই তো বুঝলাম না, কি করেই বা উত্তীর্ণ হলাম? উত্তর দিলো রামু পাঁড়ে, কাল পাহাড় ঘুরে আসুন তারপর সব ইতিহাস শোনাবো আপনাদের।

* * * * *

আদ্দা আর আমি সকালে স্নান সেরে পাহাড়ের পাদদেশে এসে উপস্থিত হয়েছি। এই সকালেই রোদ্দুরে বেশ তাত। একটা সরু রাস্তা এঁকে বেঁকে ঘুরে ঘুরে পাহাড়ে উঠে গেছে। ফাঁকা ফাঁকা ছোটো, বড়ো, মাঝারি গাছে পাহাড়টাকে ছায়াময় করে রেখেছে। তেমন বেশি কিছু ঝোপ জঙ্গল নেই। কেউ যেনো বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রেখেছে গোটা জঙ্গল। শাল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, শিশু, সোনাঝুরি, কিছু কাজু গাছও দেখলাম, এছাড়া অপরিচিত অনেক গাছ। আদ্দা আমাকে চিনিয়ে দিতে দিতে উঠছে পাহাড়ী রাস্তা ধরে, কি সব বৈজ্ঞানিক নাম বলছে, একটাও আমার কানে ঢুকছে না। আমি দেখছি পাহাড়ের অপরূপ সাজ। একেকটা গাছ কি ভীষণ লম্বা, আর তার ডগ থেকে ঝুলে আছে লম্বা লম্বা মোটা মোটা ভীষণ শক্ত লতা। আমি তো একটা ধরে ঝুলে দোল খেলাম খানিক। একবার তো জোরে দোল খেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে চলে গেলাম। আদ্দা ভীষণ রেগে গেলো, যদি পড়ে যাই। বেশ কিছু মোটা মোটা গাছের গায়ে শেওলা জমেছে, দেখেই বোঝা যায় অনেক দিনের পুরোনো গাছ এগুলো। গাছে গাছে কতো ফুল, কতো ফল। হনুমান ছাড়া কোনো প্রাণী এখনও চোখে পড়েনি। বিভিন্ন রকম কীটপতঙ্গ, প্রজাপতি ইতিউতি উড়ে বেড়াচ্ছে। ঘন্টা দুই ওঠার পর খানিকটা সমতল জায়গায় একটা গাছের ছায়ায় পাথরের উপর দুজন একটু বসলাম। দূরে পাহাড়ের উপরে একটা যেনো কিসের মূর্তি দেখা যাচ্ছে মনে হলো। আমি তাড়াতাড়ি আদ্দার ঝোলা থেকে বায়নাকুলারটা বের করে চোখে লাগিয়ে ভালো করে দেখলাম একটা পাথরের মূর্তি, পেছন ফিরে এক টুকরো পাথরের উপর বসে বাঁশি বাজাচ্ছে যেনো, আদ্দাও দেখলো ভালো করে। আমারা এবার দ্রুত উঠতে লাগলাম চূড়ার দিকে। আরোও প্রায় দেড় ঘন্টা ওঠার পর চুড়ার কাছাকাছি আসতেই একটা একটা করে মূর্তি চোখে পড়তে লাগলো। অবিকল নিখুঁত মানুষের মূর্তি, কালো পাথরের তৈরি। একেকটা মূর্তি একবারে ধ্যানস্থ, একেকটা যেনো কর্মরত। আদ্দা হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন, ওইতো! ওইতো! সেই মূর্তি, বাঁশিতে ধ্যানমগ্ন। আরও একটু এগিয়ে যেতেই স্পষ্ট দেখতে পেলাম, কর্ষণ দেব বাঁশি বাদনরত। কি অদ্ভুত জীবন্ত সেই মূর্তি! বাঁশি বাজাতে বাজাতে যেন তিনি দেহ ছেড়ে কোথাও চলে গেছেন এই মাত্র। এখুনিই যেনো বেজে উঠবে বাঁশিটা আবার। শরীরের মধ্যে একটা বিদ্যুৎ খেলে গেলো মাথা থেকে পা পর্যন্ত। বুকের মধ্যে হৃদপিণ্ডের গতিও বেড়ে গেলো সাথে সাথে। হঠাৎ একটা গরম দমকা বাতাস হুহু করে বয়ে গেল বনের মধ্যে আর তখনই বেজে উঠলো বাঁশিটা। আমি ভীষণ চমকে উঠে আদ্দার দিকে তাকালাম। আদ্দা খুব শান্ত ভাবে বললো ঝোড়ো বাতাসেই বাঁশিটা বেজে উঠেছে, ভয়ের কিছু নেই আর উনি তো আমাদের আত্মীয়। ধীরে ধীরে আশপাশের আরোও অনেক মূর্তি চোখে পড়লো। একজন ডাক্তার যেনো গাছগাছালি বেটে ঔষধ বানাচ্ছেন। একজন কবি যেনো খাতায় কবিতা লিখছেন। একজন শিল্পী পাথরের মূর্তি তৈরি করছেন। একজন সূর্য প্রণাম করছেন। একজন গাছ পুঁতে দিচ্ছেন পাহাড়ে। ছড়িয়ে আছে এমন অনেক অনেক মূর্তি এধার ওধার। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে তলিয়ে গেছি আমি। নিজের শরীরের উপরে যেনো নিজের নিয়ন্ত্রণ নেই। আদ্দাও একবারে নীরব। সব মূর্তি গুলোকে ছাড়িয়ে একবারে উপরে একটা মূর্তিতে এবার চোখে আটকে গেলো আমাদের। একবারের অন্য রকম সেই মূর্তি। এটা যেনো সোনা দিয়ে তৈরি, আর ভীষণ জ্যোতির্ময়। একটা বড়ো বট অসংখ্য ঝুরি নামিয়ে নামিয়ে তাকে ঘিরে রেখেছে। কাউকে যেনো কাছে ঘেঁষতে দিতে চায়না। আমি আর আদ্দা দূর থেকে তার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানালাম দুটো বুনো ফুল ছুঁয়ে। তারপর সেই বংশীবাদনরত মূর্তির পায়ে প্রণাম জানিয়ে ফিরতি পথে পা বাড়ালাম গ্রামের দিকে। সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়েছে। আদ্দার সাথে আমার আর কোনো কথাই হলোনা। দুজনে নীরবে ফিরে এলাম গ্রামে সন্ধ্যার সামান্য আগে।

* * * * *

আমি আর আদ্দা সন্ধ্যায় সেই জৈন মন্দিরে এলাম আগের দিনের মতোই। আজ এই পাহাড়ের ইতিহাস, ওই মূর্তি গুলোর ইতিবৃত্ত জানতে হবে।

পুজোর শেষে সকলে চলে গেলে, রামু পাঁড়ে বলতে শুরু করলেন, আমরা বংশ পরম্পরায় এই গ্রামের এই পাহাড়ের বাসিন্দা। যুগ যুগ ধরে এক বিস্ময়কর ইতিহাস শুনে আসছি আমাদের পূর্বপুরুষ দের কাছ থেকে। এই পাহাড়ে নাকি বিভিন্ন সাধক আজীবন সাধনার শেষে মুক্তির জন্য আসতেন। স্বপ্নে নাকি এই পাহাড়ের সন্ধান পেতেন তাঁরা। ওই সাধকরা তাঁদের প্রিয় সাধনার মধ্যেই দেহ ছেড়ে নির্বাণ লাভ করতেন এই পাহাড়ে আর তাদের দেহ মূর্তিতে রূপান্তরিত হতো।

এই গ্রামে এক অজানা রোগে একটা একটা করে মানুষ মারা যাচ্ছিলো সে বছর। হঠাৎ একদিন এক ডাক্তার এসে উপস্থিত হলেন। পাহাড় থেকে তিনি ঔষধ সংগ্রহ করে এনে এই গ্রামকে রক্ষা করলেন। গ্রামের সবাই তাকে ভগবান বলতে শুরু করলো। তারপর একদিন তিনি ওই পাহাড়ে চলে গেলেন আর আসেননি।

এক সময় এই গ্রামে পড়াশুনার কোনো চল ছিলো না। দুজন ভিনদেশী যুবক এই গ্রামে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁদের একজন এই মন্দরের পার্শ্বনাথস্বামীর এই মূর্তিটি তৈরি করলেন। অন্যজন বিভিন্ন পুস্তক ও ছবির বই তৈরি করলেন শিশুদের পড়ানোর জন্য। ওই দুজনেই এই স্কুল তৈরি করে সকলের শিক্ষার ব্যবস্থা করলেন। তারপর তাঁরাও একদিন ওই পাহাড়ে চলে গিয়েছিলেন। এই সমস্ত মানুষের মূর্তি ওই পাহাড়ে আছে। এরাই আমাদের দেবতা।

আবার কত জন এই পাহাড় থেকে মূর্তি চুরি করতে গিয়ে গড়িয়ে পড়ে মারা গেছেন। তারপর থেকে আমরা আর কাউকে ওই পাহাড়ে যেতে দিইনা। আপনারা সংগীতের সাধক, গত দিন সন্ধ্যায় তবলা বাজানোর মধ্যে আপনাদের গায়ে পাখি এসে বসেছিলো। তা দেখেই আমরা বুঝেছিলাম।

ঠিক মনে নেই, তবে সর্বশেষ ঘটনা এখান থেকে প্রায় পঞ্চাশ কি ষাট বছর আগে ঘটেছিলো বলে শুনেছি বাপ ঠাকুরদার মুখে। টানা দু-বছর কোনো বৃষ্টি নেই। পুরো পাহাড় জমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ মারা গেছে অনাহারে। এমন সময় এই গ্রামে এসে উপস্থিত হলেন একজন সাদা পোশাক পরিহিত সাধক। প্রখর গ্রীষ্মের দুপুরে এসে বসলেন এই মন্দিরের ছায়ায়। তখন এটা ছিলো একটা পাতার কুটীর আর এই বিরাট অশ্বত্থ গাছটাই আগলাতো পার্শ্বনাথস্বামীকে। তিনি এসে সেই ভর দুপুরে বাঁশিতে ধরলেন তান। বাঁশির তানে ভরে উঠলো আকাশ, বাতাস, ওই পাহাড়, জঙ্গল। বিকালে আকাশ কালো করে উঠলো ঝড়, তারপর নামলো প্রবল বৃষ্টি, চারদিক ভেসে গেলো জলে। লোক মুখে শুনেছি তিনি নাকি মেঘরাগ বাজিয়ে ছিলেন বাঁশিতে। তারপর থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সেই বাঁশিতে বাজতো কতো সুর। সেই সুরে সুরে পাহাড় হয়ে উঠলো সবুজ। আবার গ্রাম গড়ে উঠলো ধীরে ধীরে। তারপর তিনিও একদিন চলে গেলেন ওই পাহাড়ে। তারপর যে বছর খরা দেখা দিত, ওই পাহাড়ে বেজে উঠতো বাঁশি। সেই বাঁশির সুরে আকাশ কালো করে নেমে আসতো বৃষ্টি। কখনো কখনো বসন্ত কালেও ওই বাঁশি শোনা যেতো। কি জানি ‘বসন্ত্’ না’কি রাগ-রাগিনীর সুর বাজতো সেই বাঁশিতে। সে বছর সারা পাহাড় কতো কতো রঙীন ফুলে ফুলে সেজে উঠতো। যে সব গাছে কোনোদিনও ফুল ফুটতোনা, সে গাছ গুলোও নাকি সে বছর কচিপাতা, ফুল, ফলে ভরে উঠতো। তোমরা যার ছবি আমায় দেখালে, উনিও আমাদের ওই পাহাড়ের একজন দেবতা। আমাদের কে রক্ষা করেন। এ বছরও একফোটা বৃষ্টি নেই, চারদিক একবারে শুকিয়ে গেছে। কি জানি হয়তো সেই বাঁশি আবারও বেজে উঠবে এ বছর, আবার নামবে বৃষ্টি ওই বাঁশির সুরে।

আমি আর আদ্দা বিস্মিত হয়ে তাঁর এই গল্প শুনছিলাম। কেমন একটা নিবিড় আছন্নতা যেনো ঢেকে রেখেছে আমার মনকে আজ সারাদিন। মন্দিরের সেই সাধক এত সময় নীরব ছিলেন। এবার তিনি বললেন, একটু বাঁশি বাজাও আজ, একটু শুনি চুপচাপ। আদ্দা আমায় বললো, বাজাও দাদু ভাই, মেঘমল্লার বাজাও আজ। আদ্দা তবলার সুর বেঁধে নিলেন। আমি বাঁশিতে আলাপ শুরু করলাম, … ” রে মা … রে সা … ণি ধা নি সা … … মা রে পা …”। কিছুক্ষণ আলাপ বাজিয়ে বিলম্বিত রূপক তালে গৎ-টা ধরে যেই একটু এগিয়েছি, তখনই কানে এলো অন্য এক বাঁশির সুর, যে সুর আমার বাঁশির আওয়াজকে ছাপিয়ে আকাশময় ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। আমি বাঁশি নামিয়ে রাখলাম, পাহাড়ের দিক থেকেই ভেসে আসছে সেই সুর। আদ্দা তবলা বাজিয়েই চলেছে সেই সুরের সাথে। সবাই অবাক বিস্ময়ে একবারে স্থির। কেবল আদ্দার দুটো হাত তবলার উপরে খেলে বেড়াচ্ছে বাঁশির সুরের পিছু পিছু। ধীরে ধীরে সেই বাঁশির সুর যেনো পাহাড় থেকে নেমে আসছে মাটিতে। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। আকাশেও মেঘ জমতে শুরু করেছে, দূরে বিদ্যুতের চমকানি, সাথে আদ্দার তবলার অপূর্ব ছন্দের জাল। একটু পরেই বাঁশির আওয়াজ যেনো আমাদের একবারে কানের পাশেই চলে এলো। বিস্ময়ে চেয়ে দেখি এক জ্যোতির্ময় মূর্তি বাঁশি বাজাত বাজাতে উপস্থিত আমাদের মন্দিরের সম্মুখে। আমরা সবাই বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি তারদিকে। আদ্দার আঙুল গুলো যেনো তার অজান্তেই কোনো অদৃশ্য অলৌকিক শক্তিতে বাজিয়ে চলেছে। তারপর সেই চরম বিস্ময়। টিপটিপিয়ে নামলো বৃষ্টি, ধীরে ধরে বাড়লো হাওয়ার বেগ সাথে মুষলধারে বর্ষণ। চারদিক জলে ভেসে যেতে লাগলো। তার পর কখন বৃষ্টি থামলো, ঝড় থামলো, তবলা থামলো, বাঁশি থামলো কিছুই মনে নেই।

সকালের রোদ্দুর মুখে পড়তেই ঘুম ভাঙলো আমাদের চার জনের। আমাদের সকলের চোখে বিস্ময়। চারদিক একবারে ভিজে রাতের প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে। অশ্বত্থের পাতা থেকে তখনও টপ টপ করে বিন্দু বিন্দু জল পড়ছে। মূর্তিপাহাড় থেকে নেমে আসা শুকনো নালাটা জলে একবারে থইথই। আমরা চারজন মন্দিরের বারান্দাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

এই কি স্বপ্ন, নাকি সত্যি? প্রশ্নটা আজও থেকে গেছে আমার মনে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।