বাড়ি ফিরে দেখি শ্রেয়ান সবে ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজছে। আমি ঢুকতেই আমার ওপর চড়াও হল। “অর্কদা আমার বাইক কোথায়? কি করে পাব? এখনও ইনস্টলমেন্টের টাকাই শোধ হয়নি”। আমি হাত দেখিয়ে আশ্বাস দিয়ে বললাম, “আজি পাবি। সেই ব্যাবস্থাই করে এলাম”। আবার জিজ্ঞাসা করল “কোথায় গেছিলে বলত সাত সকালে?” আমি ঘটনাগুলো সব বললাম। সব শুনে আবার বলল, “আরও কটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে, জিজ্ঞাসা করব?” বলেই আমার সম্মতির অপেক্ষা না করেই শ্রেয়ান প্রশ্নবাণগুলো একে একে নিক্ষেপ করতে শুরু করল- “রামদাকে কে মারল? রামদা আদৌ মরেছে কি? আমরা কাল বাইক ছেড়ে পালালাম কেন? ট্যাক্সি করে দমদম এয়ারপোর্টই বা গেলাম কেন? আবার ওখানে নেমে বাড়ি ফিরলাম দুটো ট্যাক্সি চেঞ্জ করে কেন? আমি ওকে পেপারটা এগিয়ে দিলাম, যেখানে ছোট্ট করে আইস গার্ডেনে গুলিবদ্ধ হয়ে স্থানীয় দুস্কৃতির খুনের বিবরণ দেওয়া আছে। ওর পড়া শেষ হলে বললাম, “যাতে কেউ আমাদের ট্রেস করতে না পারে, তাই আমরা ঘুরে ঘুরে বাড়ি ফিরলাম”। শ্রেয়ান বলল, “ধুর! কেমন যেন সব গুলিয়ে যাচ্ছে। আমার মাথায় আড় কিছু ঢুকছে না। তোমার পৌরানিক বান্ধবি পারবে তো বাইকটা ফেরত পাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিতে?” আমি হেসে ওকে সম্মতি জানালাম। বাল্মীকি গরম গরম কফি আর ডিম টোস্ট নিয়ে ঘরে ঢুকল। গন্ধে খিদে কয়েকগুণ বেড়ে গেল। আসলে আর্যমার সঙ্গে কফি ছাড়া আর কিছুই খাইনি। আজ যোগ ব্যায়ামটাও করা হল না। পরপর চারদিন মিস হল। অফিসে আজও যাব না। একটা মেল করে দিন দশেকের ছুটি নিয়ে নিতে হবে। অলরেডি চারদিন কামাই হয়েই গেছে।
ফোনটা বেজে উঠল। ল্যান্ড লাইনের কল। আমি উঠে গিয়ে ধরলাম। ও প্রান্ত থেকে একটা মিষ্টি গলায় প্রশ্ন ভেসে এল “শ্রেয়ান আছে?” আমি শ্রেয়ানকে ইশারা করে ফোনটা দিলাম। শ্রেয়ান স্বমহিমায় আরাম্ভ করল, “গুড মর্নিং হানি, তোমার কথায় ভাবছিলাম। না গো আজ আমার একটা ক্যাম্পাসিং আছে। নো ডার্লিং, আজকে আর দেখা হবে না। তুমিই তো বল আগে কেরিয়ার। আই উইল কল ইউ ব্যাক। সত্যি, অন গড। থ্যাংক ইউ সুইট হার্ট”। ফোনটা রেখেই আমাকে কৈফিয়ৎ দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল, “রনিতা, আজ ডেট ছিল, কাটিয়ে দিলাম”। আমি জিজ্ঞাসা করলাম “সত্যি তোর ক্যাম্পাসিং আছে নাকি রে?” শ্রেয়ান একটু নোংরা হেসে একটা গাল পেড়ে বলল, “ধুস ওই সব আমার জন্য নাকি! চাকরি করার জন্য শ্রেয়ান রায় জন্মায়নি। আসলে বাইকটা না থাকলে ইনসিকিওরড ফিল করি। তাছাড়া একটা ইয়াং ছেলের আজকের যুগে বাইক না থাকলে প্রেমটাই কেমন ম্যাড়মেড়ে হয়ে যায়।। প্রেমিকার হাত ধরে পেনপেনিয়ে লেকের ধারে ঘুরে বেড়াব নাকি? তাই ওকে কাটিয়ে দিলাম”। আমি বললাম, “ফাঁসবি একদিন তুই”। শ্রেয়ান উদ্গ্রীব হয়ে বলল, “কালকের কেসটাতে ফাঁসব না তো বস? বাইকটা তো আমার নামে। যদি আমার নামে মার্ডার চার্জ আনে?” আমি বললাম, “আমি তো স্রেফ সাইড কাটিয়ে বেরিয়ে যাব। আমি না ফাঁসলেই হল”। শ্রেয়ান মোক্ষম এক ঘুসি বাগাল আমার হাতে।