এই সময়ের গল্পে সুজাতা রায়
ভয় ভয় গুমোটে একটি সাহসিকতার গল্প
দারুণ গ্রীষ্মের এক সন্ধ্যায় বিয়ে হয়ে আমি বীরভূম থেকে কলকাতায় বৌ হয়ে গেলাম।কটা দিন হইচই এর পর সুনসান সব।বর কর্মসূত্রে বীরভূমে সপ্তাহান্তে আসেন,শাশুড়িমা অকালবিধবা মেয়ের কাছে দূরের লৌহনগরীতে।শ্বশুরবাড়িতে মানুষ বলতে বাবা (শ্বশুর মশাই)আর আমি আর এক চল্লিশ বছরের পুরোনো বৃদ্ধ কর্মসহায়ক জিতেনদা।বাবা প্রতিদিন ভোরে উঠে প্রাতঃভ্রমণ সেরে বাজার নিয়ে ফিরতেন তারপর নটার মধ্যে জলখাবার সেরে তাস নিয়ে বেরিয়ে যেতেন ফিরতে ফিরতে বেলা একটা।জিতেনদা এরমধ্যে তার বরাদ্দ কাজ সেরে দশটার মধ্যে পাড়া চড়তে কেটে পড়তো – এরপর গোটা বাড়িতে আমি একা।রান্নাবান্না সেরে স্নান করে পুজো দিয়ে রোজ পড়তে বসতাম আসন্ন পার্ট ওয়ান (বি.এ) পরীক্ষা।এমন ই একদিন পড়ছি,বেলা বারোটা হবে হঠাৎ কেমন একটা মাটিতে লাঠিরবাড়ি মারার আওয়াজ,প্রথমে একবার কিছুক্ষণ পর আবার এবার ঘনঘন,জানলা খুলে আশেপাশে কিছু দেখতে পেলাম না,বাড়িতেও কেউ নেই,কেমন ভয়ভয় করে উঠলো,জানলা বন্ধ করতেই মনে হলো ঠিক জানলার নিচেই কিছু হচ্ছে,অতো নিচে তো মানুষ হবে না,যাক মানুষ যখন না তখন ভয়ের কিচ্ছু নেই,দরজা খুলে বেরিয়ে বাগানে গিয়ে দেখি ঘরের জল বেরোনো জালি বসানো ছোট্ট ফুটোর বাইরের দিক দিয়ে একটা সাপ মাথা ঢুকিয়ে ঢুকতে গেছে,জালির জন্য ঢুকতে পারছে না আবার সরু ফুটো বলে ব্যাকগিয়ার মেরে বেরোতেও পারছেনা ছটফট করছে আর লম্বা লেজ মাটিতে আছাড় খাচ্ছে আর সেই আওয়াজ ই আমি পেয়েছি।নিস্তব্ধ গরমের দুপুর আশেপাশের সব দরজা জানলা বন্ধ আর আমি কাউকে চিনি ও না,অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম তারপর ঘর থেকে একটা চটের বস্তা এনে তারমধ্যে হাত দুটো ভোরে সাপের লেজটা ধরে একটানে বের করেই পাশের ফাঁকা প্লটে ছুঁড়ে এক ছুট্টে ঘরে।বাপরে! ভয় নেই নাকি!এখন সে যদি আবার থ্যাঙ্কু বলতে আসে?