• Uncategorized
  • 0

শিকড়ের সন্ধানেতে আজ “ইলোরার কৈলাসনাথ মন্দির” – লিখেছেন প্রাপ্তি সেনগুপ্ত

১. মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ শহর থেকে ৩০ কি.মি. দূরে চরনন্দ্রী পাহাড়ের অভ্যন্তরে একটি একক বৃহৎ প্রস্তরখন্ডকে খোদাই করে ইলোরার কৈলাসনাথ মন্দির নির্মিত হয়েছিল।

২. ইলোরা–কে ভেলুরা অথবা এলুরা বলা হয়, প্রাচীন এলাপুরা শব্দ থেকে এসেছে ইলোরা নামটি। বর্ষাকালের প্রচণ্ড বৃষ্টিতে যখন পাহাড়ের ঝর্ণাগুলোতে প্রচণ্ড বেগে স্রোতধারা নামে আর প্রকৃতি ভরে উঠে সবুজে, তখন ইলোরা হয়ে উঠে অপরূপ স্বর্গীয় সৌন্দর্যময়। এই সময়টাতেই পর্যটকদের ভীড় সবচেয়ে বেশি হয় এখানে।

৩. এই গুহাগুলোতে আঁকা ছবিগুলো এখনও পর্যন্ত রয়ে যাওয়া প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরীতির সর্বোত্তম শৈল্পিক নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। অজন্তা, ইলোরা পশ্চিমঘাটের সমতল ভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রাচীন আগ্নেয়গিরি কর্মকান্ডের ফলে দাক্ষিণাত্য এলাকায় বিভিন্ন স্তরে গঠিত, যা ডেকান ট্র্যাপ নামে পরিচিত।

৪. ইলোরার এই অঞ্চলে সারিবদ্ধ কতকগুলি গুহা দেখা যায় । সেই গুহাগুলিতে পাথর কেটে কেটে তৈরি হ​য়েছে একাধিক হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন মন্দির।সেই গুহাগুলির ১৬ নম্বর গুহায় অবস্থিত কৈলাসনাথ মন্দির। এখন ইলোরায় ৩৪টি গুহা দর্শনার্থীদের জন্য খোলা।

৫. রাষ্ট্রকূট রাজা প্রথম কৃষ্ণের আমলে এই কৈলাসনাথ মন্দির নির্মিত হয়। তিনি শুধু একজন সফল সমরনায়ক ও বিজেতা ছিলেন না।তিনি ছিলেন শিল্পস্থাপত্যের সমঝদার ও পৃষ্ঠপোষক।

৬. তিনি নিষ্ঠাবান শৈবোপাসক ছিলেন। তাঁর উদ্যোগে ইলোরার একপ্রাস্তরিক মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল।

৭. প্রথমে নির্মাতার নাম অনুসারে এই মন্দিরের নাম হয় কৃষ্ণেশ্বর বা কাণহেশ্বর মন্দির। পরে এটি কৈলাস মন্দির নামে পরিচিত হয়।

৮. ইলোরাকে বলা যায় মানুষের শৈল্পিক সৃষ্টির এক অসাধারণ উদাহরণ। পাথর কেটে তৈরি করা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থাপনাগুলোর একটি এটি। গঙ্গা যমুনা সরস্বতীকে উৎসর্গ করা হয়েছে এই মন্দির।রামায়ণ,মহাভারতের কাহিনী উৎকীর্ণ করা আছে এই মন্দিরের গায়ে।

৯. পঞ্চম থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যে এই ধর্মীয় স্থাপত্যগুলি নির্মিত হয়েছিল। এখানে বৌদ্ধ ধর্মের বারোটি, হিন্দু ধর্মের সতেরোটি এবং জৈনদের পাঁচটি মন্দির রয়েছে। সব ধর্মের উপাসনালয়ের এই পাশাপাশি অবস্থান প্রাচীন ভারতের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার উদাহরণ।

১০. গুহাগুলো ছিল ভিক্ষু এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের আশ্রম।মন্দিরগুলো ব্যবহৃত হতো উপাসনালয় হিসেবে। তীর্থযাত্রীদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হত গুহাগুলো।

১১. কাল পরম্পরা রক্ষা করে এগুলো সাজানো হয়েছে। সর্বাপেক্ষা বিস্ময়কর গুহাটির নাম ‘কৈলাসনাথ মন্দির’। ২৯ মিটার দীর্ঘ ও ৫০ মিটার প্রস্থ।

১২. এটি পাহাড় থেকে বেরিয়ে আসা একটি মাত্র পাথর কেটে নির্মিত। এই গুহায় বহু হিন্দু দেবতা এবং পৌরাণিক মূর্তি খোদাই করা আছে। খোদিত মূর্তিগুলোর মধ্য দিয়ে অনুপম শিল্প সৌন্দর্য ও বলিষ্ঠ স্থাপত্য কর্মের এক অসাধারণ নিদর্শন পাওয়া যায়।

 

১৩. মন্দিরটির মধ্যে একটি খোলা মন্ডপ ও চাতাল আছ।

১৪. মন্দিরটি কাঞ্চীপুরমের কৈলাসনাথ মন্দিরের অনুকরণে নির্মিত। মন্দিরের কোথাও রাজা কৃষ্ণের নাম উৎকীর্ণ করা হয়নি।এতে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ বিনয় ও প্রচারবিমুখতাই প্রকাশ পেয়েছে।

১৫. ঐতিহাসিক স্মিথ কৈলাসনাথ মন্দিরকে ‘গর্বের বস্তু’ বলে উল্লেখ করেছেন। শিল্প বিশেষজ্ঞ পার্শি ব্রাউনের মতে, এই মন্দিরটি কেবলমাত্র শিল্পের ক্ষেত্রে একটি বিশাল কাজই নয় – প্রস্তর স্থাপত্যের ক্ষেত্রে এটি অদ্বিতীয়।

(ছবি সংগৃহীত)
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।