• Uncategorized
  • 0

অনুবাদ কবিতায় প্রভাত মুখোপাধ্যায়

কবি ও প্রাবন্ধিক । কবিতার বই--আটটি। প্রবন্ধের বই -দুটি। প্রথমটির বিষয় --কলকাতা। এবং দ্বিতীয়টি --দেশভাগ । কবিতাযাপন দীর্ঘ কয়েক দশক ব্যাপী। তবে, গত পনেরো বছর ধরে নিত্য,নিয়মিত,নির্বাধ ।
১৯৪২-এর গ্রীষ্মে(পোল্যান্ডের)ত্রেবলিঙ্কা নামের এক গ্রামাঞ্চলে নিয়ে গিয়ে তিন লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করা হয়। কবি ওয়াদিশ্লাভ শেঙ্খেল বেঘোরে প্রাণ হারানো সেইসব মানুষদের জন্য এক অনবদ্য কবিতা সংকলন প্রকাশ করেছিলেন। নৃশংসভাবে মেরে ফেলা ছাড়াও ইহুদিদের সাহিত্যকর্মকেও ধ্বংস করে দেয় গেস্টাপোবাহিনী। তাই, শেঙ্খেলের কবিতা ও গদ্যের সামান্য কিছু অংশই উদ্ধার করা গেছে। ওয়ারশ পাব্লিশিং ইন্সটিউট থেকে (১৯৭৭) ‘যা পড়ছি আমি মৃতদের জন্য’ শিরোনামে তাঁর একটি  বই প্রকাশ করা হয়েছিল। এন্ড্রু এম. কাবোসের ইংরাজি অনুবাদের সূত্রে একটি ছত্রের বঙ্গানুবাদ করেছি এইরকমঃ —
“দেশাত্মবোধক একটি সোভিয়েত নাটক, যার নামটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, দিনকয়েক হল সেটি আমার মনের মধ্যে সমানে খচখচ করছে। সাদা চামড়ার লোকগুলোর কাছে আত্মসমর্পণ করবে না কিছুতেই,এমন জেদের বশবর্তী হয়ে এক সাবমেরিনের নাবিকেরা আক্রমণকারী সমেত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সাবমেরিনটিকে সমুদ্রের তলদেশে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল।ওই ষোলোজন নাবিক সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করে ব্যর্থ হয়। শেষ দৃশ্যটা ছিল কিছুটা এইরকমঃ অক্সিজেন নেই মোটে। কয়েকজনের শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড় হয়েছে। ছয়…দশ…পনেরো…ষোলো  নম্বর ব্যক্তিটি ঠিক করল যে সে ওই নাবিকদের খতম হয়ে যাবার তথ্যগুলো সংগ্রহে রেখে দেবে…
সে একটুও বাড়িয়ে বলেনি…কী এমন বড়ো ব্যাপার যে কয়েক মিলিয়ন লোকের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন মারা গেল … যে বিরাট কারণের জন্য তারা প্রাণ উৎসর্গ করেছে, সেই ঘটনার
অনুপাতে সামান্য কয়েকজনের মৃত্যু তো নিতান্তই নগণ্য! মাত্র ষোলোজন! বিশাল ক্ষতি হল কি? কোনোক্রমে শেষ শক্তিটুকু জড়ো করে নিজস্ব সমাধির ইস্পাতগাত্রে আঁচড় কাটে ২০,০০,০০,০০০ –
১৬… দুশো মিলিয়ন জনসংখ্যা থেকে গুরুত্বহীন ষোলজন মানুষের নাম ছেঁটে দিল। তারপর সব শেষ। এইটুকুই ইতিহাসের সারাংশ হয়ে থেকে যায়—সংখ্যা, সংখ্যাতত্ব”।
অধ্যাপনার খাতিরে প্রখ্যাত কাশ্মীরি-আমেরিকান কবি আগা শাহিদ আলি আমেরিকার আমহার্স্ট অঞ্চলে থাকতেন। এমিলি ডিকিন্সনের কবিতায় ব্যবহৃত আমহার্স্ট ও কাশ্মীরের যোগসূত্রটি হয়তো দীর্ঘদিন যাবৎ আমেরিকা–প্রবাসী কবিকে আবেগমথিত করে তুলেছিল । স্মৃতি-ভারাক্রান্ত ‘আমহার্স্ট টু কাশ্মীর’ কবিতার প্রথম ছত্র দুটিতে নস্টালজিয়ার প্রকোপ ফুটে উঠেছে এইভাবেঃ
‘ফোন বেজে উঠল—এখানে,আমহার্স্টেঃ ‘তোমার ঠাকুমা মৃত্যুশয্যায়। বন্যার জল-নিকাশি খালের পাশে যে ব্রিজ, সেই মাহজুর সেতুর পাশেই আমাদের গ্রাম।’
 ‘ওই নামে কোনো গ্রামই নেই।’
‘খুব বিশ্রীভাবে পড়ে গেছেন উনি।কার্ফু লাগু হয়েছে এখানে সর্বত্র। ওঁনাকে নিয়ে আসার কোনো রাস্তাই নজরে পড়ছে না। পথঘাটের চারিদিকেই জমজমাট ভয়। পড়োশিরাও মৃত।’
এমন কোনো গ্রাম ওখানে কস্মিনকালেও ছিল না।’
ওঁনার মায়ের দিক থেকে ধরলে আমরা তোমার আত্মীয় হই। হয়তো আমাদের কথা তুমি শুনেও থাকবে। একসময় ব্যবসাপত্তরও ছিল আমাদের। কলকাতার রাজপুত্তুরদের আমরা সিল্কের কার্পেট বিক্রি করেছি। এখন তো আমরা গরিব, সেই জন্যেই আমাদের মনে রাখারও আর কোনই যুক্তি নেই।

২.

শ্রীনগরে ফোনটা নামিয়ে রেখেই দৌড়ে গেলাম আমাদের বাগানের একপাশে রৌদ্রময় ওঁর কুটিরের দিকে। বহুকাল আগে মৃত সিকান্দার যে আরশিটি ঝাড়পোঁছ করে রাখত, সেটি ছাড়া বাড়িটার আর সবকিছুরই দখল নিয়েছে সেনাবাহিনী,নিজেদের নোংরা আপিস বানিয়েছে; ধুলো সর্বত্র, পুরোনো টেলিফোনে, স্যাঁতসেঁতে ফাইলগুলোয়, ভাঙ্গা চেয়ার-টেবিলে, ধুলোয় ধুলোময় চারপাশ।
তাঁর বসার ঘরে একজন কেরানি টাইপ করে। ওকে ডিকটেশন দিতে থাকা কর্নেল ঘুরে তাকালেন। আমার হারানো বন্ধু –ভির। শ্রীনগর শহর তো তারও বটে। সে নিশ্চয় এই শহরকে ঝলসে দেওয়ার আদেশ দিতে পারে না। না, ইনি তবে ভির নন। অন্য কেউ; তারই মতোন স্নেহার্দ্র হাসি ভরা মুখ– সেই মুখ যা ঘুমের মধ্যেও দেশকে রক্ষা করে।
কিংবা পুড়িয়ে ধ্বস্ত করে।
‘আমার ঠাম্মি খুব অসুস্থ। প্লিজ, আমার সঙ্গে কাউকে আসতে দাও। প্লিজ, তোমার জিপে চেপে আমার সঙ্গী হিসেবে কাউকে তো অন্তত গ্রামে যেতে দাও। প্লিইইইইজ…

রাক্ষুসে ভূত

ভারভারা রাও
মড়াটাকে লক-আপ থেকে টেনে-হিঁচড়ে
কাঁধের ওপর চাপিয়ে আমি হাঁটছিলাম
আমার মৃত্যুর ব্যাপারে বলব তোমাকে
মৃতদেহটি বলল—
এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি
হত্যা ছিল – সেটা বলো
একে তো মৃতদেহ, তার ওপর গরাদে থাকাকালীন
বাক্যময় ; বল্লামও – তবে তো এটি হত্যাই হবে
সত্যবচন শুনে পুলকিত হল বটে
জীবন্ত মানুষের সোচ্চার হওয়াও একটি অপরাধ
মড়াটি তাই ফেরার হল
দেখা দিল আরেক জেলখানায়
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *