বন্ধুত্বের সম্পর্ক ধর্মের বেড়াজাল ভেঙে দুটি পৃথক সম্প্রদায়ের তরুণ তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে অরুণ ও খুশবুর মধ্যে । ওরা খুব ভালো বন্ধু স্কুল জীবন থেকেই। দুজনের মধ্যে মানসিকতার অদ্ভুত সাদৃশ্য মেলে। যেকোনো পরিস্থিতিতে দুজনে পাশাপাশি থেকে সমস্যার সমাধান করে। অরুণ চ্যাটার্জী সুদর্শন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। খুশবু পারভিন আম্মু আব্বুর ভালোবাসার সঙ্গী, একমাত্র মেয়ে বাবার সেলাই দোকান আছে।
বন্ধুত্বের সম্পর্ক প্রেমের রূপ নেবে তা ওদের দুজনের মধ্যে কেউ প্রথমে বোঝে ওঠেনি। অরুণের বাড়ি দুর্গাপুজোয় খুশবুর উপস্থিতি অরুণের বাড়ির সদস্যদের আনন্দ দেয়। তেমনি ঈদের অনুষ্ঠানে অরুণ খুশবুর বাড়ি গিয়ে বিরিয়ানি, সেমাই ইত্যাদি মহানন্দে খায়। দুই বন্ধু মনুষ্যত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। জাতপাত ধর্মের প্রাচীর ওদের আটকাতে পারেনা।
হঠাৎ একদিন বিপর্যয় নেমে আসে। রমজানের মাসে খুশবু গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডাক্তারি পরীক্ষায় জানা যায় ওর দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। যত শীঘ্র সম্ভব একজন কিডনি ডোনার লাগবে, না হলে খুশবু কে বাঁচানো যাবে না, ডাক্তার জানায়। খুশবুর আব্বু-আম্মির মাথায় আসমান ভেঙে পড়ে। ডোনারের খোঁজ চলে কিন্তু সেভাবে কাউকে পাওয়া যায় না। খুশবু এবং অরুণের ব্লাড গ্রুপ মিল ছিল ওরা দুজনে অনেকবার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ক্যাম্পে বা থালাসেমিয়া পেশেন্ট কে রক্ত দান করেছে।
অরুণের ওর ১ টি কিডনি খুশবু কে দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারবাবু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান কিডনি ম্যাচ করছে। তৎক্ষণাৎ অরুণ বাবা মার অনুমতি নিয়ে খুশবু কে না জানিয়ে একটি কিডনি দিয়ে খুশবু কে বাঁচায়। যেদিন অপারেশন হয় তারপরের দিন ঈদ। হসপিটালের বেডে খুশবুর জ্ঞান ফিরেছে। ও জানতে চায় কে তাকে কিডনি দিয়ে প্রাণ বাঁচালো? খুশবুর আব্বু আম্মি ছোট্ট এক টুকরো কাগজ খুশবুর হাতে দেয়। তাতে লেখা “তোর জন্য আমার ছোট্ট উপহার, আজকে ঈদ ,তাই ঈদী দিলাম। হাতের লেখা চিনতে কোন অসুবিধা হয় না। আজ প্রথম অরুণের ভালোবাসাকে অনুভব করে । খুশবুর চোখ থেকে মুক্তোর মত কিছু চকচক করতে থাকে…