রোজ রোজ অজানা পিঁপড়ের দল এসে মধু চুরি করে। যত্ন,পরিচর্যা, আকাশ সমান দেওয়াল,আঁটোসাটো দরজা,তবু বদলালো না চেনা রাস্তার ছক। আসছেই–লোভীর দল; ছড়িয়ে পড়ছে ডালে পাতায়।
ক্ষয়ধরা বুকে অনেক যত্নে গোলাপের গন্ধটুকু বাঁচিয়ে নিজের শ্বাস সচল রেখেছে।ওইটুকুই তো সুখ,তাতে পোকা ধরলে বাঁচার শর্তটিই মুছে যায়।
প্রতিদিনের রোজগার থেকে সে অল্প কিছু সরিয়ে রাখে গোলাপের জন্য।সওয়ারী কম হলে কোনো কোনো দিন রাতে উপোস থাকে তবু ইচ্ছেপুরণের টাকায় হাত দেয় না।সাধ্যমত সব চেষ্টায় করে যাতে গোলাপকে একটা সাজানো সংসার দিতে পারে, খুশি দিতে পারে।
-এসব ভাবতে ভাবতে তামাটে কাঠামোটি নিয়ে উঠে দাঁড়ায় রমেশ।আধ খাওয়া বিড়ির ধোঁয়া তাকে আরো অধৈর্য করে তোলে।এখন তার গোলাপের কাছে যাবার সময় নয়…তবু্ও গোলাপের জন্য হঠাৎ বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে।তলপেটে সামান্য ব্যথা টের পাচ্ছে কদিন থেকে।শখ করে দু একদিন নেশা করার অভ্যেসটাও ছাড়তে হবে।গোলাপকে কথা দিয়েছে সে।
আর গোলাপের কাছেও আদায় করে নিয়েছে সে, রমেশ ছাড়া আর কারোর কথা যেন মনে না আনে কখনো।
অস্বস্তি নিয়েই অসময়ে গোলাপের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায় আজ।পুরোনো বাড়ি।মাথায় টিনের চাল।এবড়োখেবড়ো মেঝের ইঁটে পায়ের কড়ার ব্যথাটা জানান দিচ্ছে।প্লাস্টিকের চটির সোল ফুটো হয়ে গ্যাছে কদিনই হল।প্রতিদিনই আসা যাওয়ার পথে ফুটপাতের রঙ বেরঙের চটিগুলি রমেশকে টানে।যেদিন একটু বেশি আমদানি হবে,কিনে ফেলবে একজোড়া চটি -দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চকিতে এইসব কথা মনে উঁকি দিয়ে চলে যায়।
স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরে পাঁচ ওয়াটের হলুদ বালব জ্বলছে।কানে আসে গোলাপের উচ্ছ্বল হাসির শব্দ।দরজার ফাঁক থেকে নজরে আসে তক্তার ওপর গোলাপের ভারী শরীরে নগ্নতার আলো খেলা করছে।