• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় মন্দিরা ঘোষ

গোলাপ

রোজ রোজ অজানা পিঁপড়ের দল এসে  মধু চুরি করে। যত্ন,পরিচর্যা,  আকাশ সমান দেওয়াল,আঁটোসাটো দরজা,তবু বদলালো না চেনা রাস্তার ছক। আসছেই–লোভীর দল; ছড়িয়ে পড়ছে ডালে পাতায়।
‘জীবনের সবটুকু নিঃশেষ  করেও’–উঠোনে বেড়ে ওঠা গোলাপ ফুলের গাছের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়েছিল রমেশ । -জলন্ত বিড়ির ছ্যাঁকায় সম্বিৎ  এল হঠাৎ ।
সারাদিনের রিকশা টানার ক্লান্তি শিরদাঁড়া  ছুঁয়ে যায়।শেষ খৈনির স্বাদ  কষ বেয়ে চিবুক ছুঁলে রুক্ষ হাত দিয়ে সজোরে  ঘষে নেয় মুখ।
ক্ষয়ধরা বুকে অনেক যত্নে গোলাপের গন্ধটুকু বাঁচিয়ে নিজের শ্বাস সচল রেখেছে।ওইটুকুই তো সুখ,তাতে পোকা ধরলে বাঁচার শর্তটিই মুছে যায়।
প্রতিদিনের রোজগার থেকে সে অল্প কিছু  সরিয়ে রাখে গোলাপের জন্য।সওয়ারী  কম হলে কোনো কোনো দিন রাতে উপোস  থাকে তবু ইচ্ছেপুরণের   টাকায় হাত দেয় না।সাধ্যমত সব চেষ্টায় করে যাতে গোলাপকে একটা সাজানো  সংসার দিতে পারে, খুশি দিতে পারে।
-এসব ভাবতে ভাবতে তামাটে  কাঠামোটি  নিয়ে উঠে দাঁড়ায় রমেশ।আধ খাওয়া বিড়ির ধোঁয়া তাকে আরো অধৈর্য  করে তোলে।এখন তার গোলাপের কাছে যাবার সময় নয়…তবু্ও গোলাপের জন্য হঠাৎ  বুকের ভেতরটা মোচড়  দিয়ে ওঠে।তলপেটে সামান্য ব্যথা টের পাচ্ছে কদিন থেকে।শখ করে দু একদিন নেশা করার অভ্যেসটাও ছাড়তে হবে।গোলাপকে কথা দিয়েছে সে।
আর গোলাপের কাছেও আদায় করে নিয়েছে সে, রমেশ ছাড়া আর কারোর কথা যেন মনে না আনে কখনো।
অস্বস্তি  নিয়েই অসময়ে গোলাপের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায় আজ।পুরোনো  বাড়ি।মাথায় টিনের চাল।এবড়োখেবড়ো  মেঝের ইঁটে পায়ের কড়ার ব্যথাটা জানান দিচ্ছে।প্লাস্টিকের  চটির সোল ফুটো হয়ে গ্যাছে কদিনই হল।প্রতিদিনই আসা যাওয়ার পথে ফুটপাতের  রঙ বেরঙের চটিগুলি রমেশকে টানে।যেদিন একটু বেশি আমদানি হবে,কিনে ফেলবে একজোড়া চটি  -দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চকিতে  এইসব কথা মনে উঁকি দিয়ে চলে যায়।
 স্যাঁতসেঁতে  অন্ধকার ঘরে পাঁচ ওয়াটের হলুদ বালব জ্বলছে।কানে আসে গোলাপের উচ্ছ্বল হাসির শব্দ।দরজার ফাঁক থেকে নজরে আসে তক্তার ওপর গোলাপের ভারী শরীরে নগ্নতার আলো খেলা করছে।
ঘেন্নায় মুখ ঘুরিয়ে নেয় রমেশ।
‘বেইমান শালী!’
জলন্ত আধ খাওয়া বিড়িটি ছুঁড়ে দেয় রমেশ।  পোড়া বিড়ির আগুনে পুড়তে থাকে গোলাপের ঘর… …
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।