অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় উমা বন্দ্যোপাধ্যায়
by
·
Published
· Updated
চিরন্তন
( ১ )
একটা পথ নেমে আসছে পাহাড়ের গা বেয়ে। পথটা যেন পথ নয়। ঘন চুলের মাঝে সাদা সিঁথির মতন। সে পথে দেবলীনা। এলো চুলে বাহারি অর্কিড। দু’দিকে সবুজ সবুজ। পাহাড়ি ময়নার শিস। ওরা প্রেম জানে। এ পাহাড় ওর আজন্ম চেনা। অচেনা ছিল কেবল দেবার্পনের গেরস্থালি। অচেনা কেবল তার ভালোবাসাবাসি খেলা । মিথ্যে ভান – লোভ – পাথুরে বেঁচে থাকা।প্রেমপর্বে ভালোবাসার অঙ্গীকার দিয়েছিল।আসলে দিল মিথ্যে বন্ধন আর অন্ধকার চার দেয়াল । দেবলীনা পাহাড় ভালোবাসে। ঝর্ণা, পাহাড়ি নদী,পাখির গান । দেবার্পণ কর্পোরেট দুনিয়ার দাস। ছকের ঘুঁটির জীবন । বাড়তি আবেগের ধার ধারে না । দেবলীনা একরাশ অভিমান বুকে এই পাহাড়ি কনভেন্টের চাকরিতে এখন ।
( ২ )
“আমি আজই একবার ওখানে যেতে চাই” – দেবার্পণ বলল নিজেকেই একলা ঘরে – যেন স্বপ্নের ঘোরে জেগে উঠে – শেষ রাতে । এক প্লাবন – কী জলশব্দ – ভেঙে পড়া গাছগাছালি – তান্ডবে তছনছ বনানী । এখানেও ঘরময় বিপর্যয়ের চিহ্ন । কাল রাতের ঝড় – উল্টে যাওয়া ফুলদানি – মাটিতে শোওয়া ফটোফ্রেমে ওদের যুগল হাসি । যুঁইএর সুগন্ধ আবার কোথা থেকে আসে! এমন কেন! অজানা ভয় গলার কাছে কাঠ হয়ে রইলো দেবার্পণের ।
সকালের খবরে দার্জ্জিলিং পাহাড়ে ক্লাউড বার্স্ট । অতর্কিতে ভেসে গেছে লেপচাজগতের কাছে এক গোটা বসতি। দেবার্পণ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পথে নামে ।দেবলীনা – দেবলীনা – কি অনর্থক এই অভিমান , জেদ , অহং !
( ৩ )
পাহাড়চূড়ায় গীর্জা থেকে আকুল ঘন্টাধ্বনি ভেসে আসে । দেবার্পণ ঠিক পাহাড়ের নীচে কালো রাস্তায় । তারপরেই পায়েচলা পথ উঠে গেছে ঘুরে ঘুরে । পাহাড়ের একাংশ নিরাভরণ। শ্মশানের মত তান্ডবের সাক্ষী হয়ে আছে – জলপ্লাবিত, তছনছ হয়ে যাওয়া এত যত্নের আবাসগুলি । দেবার্পণের চোখ জ্বালা করে ।হাওয়ার শব্দ – মেঘের আনাগোনা । চোখ তোলে দেবার্পণ । কুয়াশার ওড়নার আড়ালে এক পাথুরে পথ । বাসা-ভাঙা পাখিদের আর্ত কান্না – সারি সারি সবুজ গাছের শব সে পথে – সেই পথ বেয়েই আলতো পায়ে – যেন বাতাস কেটে -ঐ তো দেবলীনা – খোলা চুলে বাহারি অর্কিড…….