• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় রজতকান্তি সিংহচৌধুরী

সেদিন চৈত্র মাস

(এক)

বসন্ত ফুরোতে আর বড় জোর চোদ্দ দিন বাকি। এখন চৈত্র মাস। আজ উনিশে চৈত্র, চোদ্দ শো ছাব্বিশ।  দোসরা এপ্রিল, দু হাজার কুড়ি ।
উৎসনীর, তোমার সঙ্গে আমার শেষ দেখা ঠিক এক মাস আগে। দোসরা মার্চ, দু হাজার কুড়ি । আঠেরোই ফাল্গুন, চোদ্দ শো ছাব্বিশ। ভাবা যায়!
তখন ফাল্গুনের দিন। অচেনাকে চিনে নেবার লগ্ন এসেছিল এই সুলগ্নারও আনখশিরে। সকল বন্ধনহীন হয়ে উঠেছিল আঠেরোই ফাল্গুন।
আর আমি? তোমার সুলগ্না, যাকে তুমি ‘গন্ধরাজ’ বলে ডাকতে, আমার মুখ ঢাকা পাতাখানি সন্তর্পণে সরিয়ে নিয়েছিলাম সেদিন।…
আজ একবার ডাকো সেই নামে? বলো, ‘গন্ধরাজ’!
উৎসনীর, সেদিন তুমি আমাকে সজল করেছিলে। চুমুর স্রোতে ভাসতে ভাসতে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। ফিরে গিয়েছিলাম আমার ফেলে আসা কিশোরীবেলায়। উত্তর তিরিশের আমার এই অচিরপ্রভ উপত্যকায় নির্জলা এই ধূসর শহরে এই কর্মব্যস্ত বন্দিশালায় বয়সের ব্যবধি পার হয়ে তুমি হয়ে উঠেছিলে  আমার নবীন ফাল্গুন দিন।
কপালে, গালে, দুই ঠোঁটে। তারপর তুমি চুমু দিয়েছিলে আমার দুই চোখে, যেখানে, তুমি বলো, সাঁতার দেওয়া যায়। জ্বলদগ্নি জারুল ফুলের মতো ফুটে উঠেছিল আমার সুষুপ্ত যৌবন। বেগুনি, গোলাপির আভামাখা।
তুমি আর আমি এক হয়েছিলাম, খোলা আকাশ আমার!

(দুই)

সেই শেষ। আজ  দোসরা এপ্রিল, দু হাজার বিশ। উনিশে চৈত্র, চোদ্দ শো ছাব্বিশ ।গোটা পৃথিবী আজ করোনার সন্ত্রাসে গৃহবন্দি। দুনিয়াটা জুড়ে মৃত্যু উপত্যকা। কেউ কারু ছায়া ডিঙোয় না। লক ডাউন।
উৎসনীর আমার, আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে আজ পাঠিয়েছ  তোমার গন্ধরাজের প্রিয় গান, ‘তোমায় হৃদমাঝারে রাখব ছেড়ে দেব না’!
তবু ছেড়ে যেতে হয়! মিলনোৎকাঙ্ক্ষায় উন্মত্ত বাঘিনীর মতো গরগর করতে থাকে এই নারীশরীর। তুমি কি শুনতে পাও সে-গর্জন, আমার উদার আকাশ? নাকি, এ শুধু ঘরবন্দি আমারই একার বেদনা?
আমাদের দেখা হবে করোনা-পেরুনো কোনো ভোরে। একদিন এক হব। ততদিন দম ধরে যদি বেঁচে থাকি আমি গন্ধরাজ, তুমি উদার আকাশ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *