দেবসম্ভব
রাস্তার উল্টোপাশেই বাড়িটা।সিমেন্টেড পিলারের সাথে লোহার মাঝারি গেট।বাকিটুকু আড়ালের জন্য মুলিবাঁশের বেড়ার ব্যাবস্থা।গেটের ডানপাশের বেড়ার নীচে অভুক্ত কুকুরদলের বেশ কদিনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বড় একখানা হা মুখ তৈরী হয়েছে।কুকুরদের যাতায়াত অবাধ হয়েছে।খাবার পায় কিনা জানার ইচ্ছা ছিল ।
ঝগড়া লেগেই আছে। কুকুর আর প্রায়ই বাড়িওয়ালা আর একরত্তি শিশুওয়ালা বৌটার।আমার অনুমান মদ্যপানজনিত কোন কারণ।আমার আগ্রহ নেই থেকেও ব্যাপারটা থেকে সরে থাকতে পারিনি কারণ এতটা দুরে ঘরে বসেও অকথ্য গালিগালাজ আর বিশাল ডাঁশা দিয়ে বৌপেটানোর আওয়াজ কর্ণগত হয়।মারের পর বৌটার ত্রাহি চিৎকার,পালটা গালিবর্ষণ চলে।
ওদের পাশের বাড়িটার মহিলামহল ততক্ষণে দোতালার গ্রীল থেকে গার্হস্থ হিংসার লাইভ সম্প্রসারণটা বাধ্য ছাত্রীর মত নিষ্পলক চেটে খায়।ভয়ে আমার বুক শুকিয়ে আসে,বুক ঢড়পড়ানি চলতে থাকে। ওদের এই বিষয়ক একাগ্রতার পালসরেট চড়চড়িয়ে জম্পেশ চচ্চরিটা পরে আবার অন্যের পাতে ঢালার কাজে লাগবে।
সপ্তাহে দুতিনবার ব্যাপারটা ঘটেই।পাড়াটায় সবার এ ঘটনায় নো রিএকশন মোড দেখে আমিও সিলেবাস বুঝে গেছি।শুধু বুকের তলে শুয়ে থাকা ক্লুকপুকটা আমার জিনা হারাম করে দিয়েছে।প্রত্যেকবার এই বিপদের সময় আমার পুতুল পুতুল মেয়েটা আমার দিকে কৌতুহলের চোখে তাকালে আমি চোখ লুকানোর ভান করি।উত্তর দেওয়ার মত প্রস্তুতি থাকে না ওর ভয়ংকর বাউন্সারগুলোর।
প্রতিদিন ঠাকুরকে ফুল জল দিতে গিয়ে বলি ঠাকুর কেসটা দেখো।এসব কতদিন নেওয়া যায়।ভাড়ার বাসা আমার।দুপয়সা রোজগার করি খেটেখুটে। সত্যি বলতে মুরোদ নেই আমার এসব আটকানোর।আমি পয়সাওয়ালা নই,নেতা মাতব্বর নই,সাংবাদিক নই।শুনেছি এনজিও সংস্থারা এসব আটকায়।সিনেমাতে এসবের বিরুদ্ধে হিরোরা যখন এক সে বড়কর এক রাস্তা বের করে এসব আটকায় আমারও বুকে আগুন ধরে যায়। ভাবি এইবার কিছু করবো।কিন্তু তারপরেই ব্যাপারটা দাঁড়ায়,করবোটা কি।বস্তুত আমি এক নীতিকথা দীক্ষিত সভ্রমশঙ্কিত দু পায়া জীব।হজমশক্তি কম বলে সর্দির ধাঁত থাকা সত্ত্বেও কনকনে শীতের রাতে রুটি পর্যন্ত চিবোতে পারিনা।ভাত খেয়ে সর্দিকাশির ডাক্তার দেখাই। শুধু যেদিন দেখলাম একবছরের বাচ্চা কোলে বউটা লোকটাকে ভক্তিগদগদ দৃষ্টিতে কাজে বেরোতে দেখছে আমার বিশ্বাস জন্মালো ভগবান আছে।