Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৩৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৩৫)

কেমিক্যাল বিভ্রাট

বিশেষ কোনও কাজের জন্য গ্রাম সমাজে তখন নানা রকম সম্মানজনক উপাধি দেওয়ার প্রচলন ছিল। যেমন গুণাকর, রায়, সরকার, চৌধুরী, মণ্ডল। পরে দেখা গেল, এগুলিও কেউ কেউ তাঁদের নামের পাশে বসাতে শুরু করেছেন। শুধু তাই-ই নয়, যে যে-পোষ্যকে ভালবাসতেন, নিজের নামের পাশে তাদের নামও যোগ করে দিতে লাগলেন অনেকে। ফলে বহু নামের পাশে দেখা যেতে লাগল সিংহ, হাতি, নাগ, বাঘ, কোয়েল, হংস-র মতো জীবজন্তুদের নাম। কেউ কেউ আবার নিজের নামের পাশে বসাতে শুরু করলেন বাবা বা মায়ের নাম। কিংবা লিখে দিতে লাগলেন তাঁরা কার ছেলে। যেমন, উদ্দালক আরুণি। উদ্দালক তাঁর নাম। আর আরুণি মানে অরুণের ছেলে। অর্থাৎ বাবার পরিচয় দেওয়া হয়েছে এখানে। ঠিক সেই একই রকম ভাবে মায়ের ছেলে হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন সত্যকাম জাবালি। সত্যকাম তাঁর নাম। আর জাবালি মানে জবালার ছেলে। তখন বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাতে গেলে কিংবা ওই ধরনের কোনও কাজের ক্ষেত্রে এখনকার মতো অভিভাবক হিসেবে শুধু মায়ের নাম লিখলেই হত না। সব জায়গায় বাবার নাম দরকার হত। সুতরাং সে সময় ছেলেদের পদবিকেই গুরুত্ব দেওয়া হত। মেয়েদের পদবি নিয়ে খুব একটা মাথা না ঘামানোর আর একটা কারণ ছিল, বিয়ের পরেই তাঁরা স্বামীর পদবি ব্যবহার করতেন। ফলে ওটা অত গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। যদিও সেই সময় বহু মেয়েই অন্য পদবির কাউকে বিয়ে করলেও বাবার পদবি ছাড়তেন না। তাতে সুবিধের চেয়ে অসুবিধেই হচ্ছিল বেশি। রঙ্গিনীর বাবার পদবি মজুমদার হলেও তিনি যদি পুরকায়স্তকে বিয়ে করতেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর নাম হয়ে যেত, রঙ্গিনী মজুমদার পুরকায়স্ত। আবার তাঁর মেয়ে নবীনা মজুমদার পুরকায়স্ত যদি তাঁরই মতো দুটো পদবিধারী কোনও গঙ্গোপাধ্যায় চক্রবর্তী পদবির কাউকে বিয়ে করতেন, তা হলে তাঁর নাম হয়ে যেত নবীনা মজুমদার পুরকায়স্ত গঙ্গোপাধ্যায় চক্রবর্তী। এই ভাবে পরের প্রজন্মগুলিতে চারটে থেকে আটটা, আটটা থেকে ষোলোটা, ষোলোটা থেকে বত্রিশটা, এবং এই ভাবে বাড়তে বাড়তে এক-একজনের পদবির সংখ্যা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াত বলা মুশকিল। ফলে কয়েক জন মেয়ে ওটা শুরু করলেও অঙ্কুরেই তা বিনাশ হয়ে গিয়েছিল। তবে হ্যাঁ, নামের পাশে যে যেটাই লিখুন না কেন, কেউ একবার কিছু লিখতে শুরু করলেই হল, তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও নিজেদের নামের পাশে সেটাই লিখতে শুরু করে দিত। ফলে সে কোন বংশের সন্তান, তা ওটাই জানিয়ে দিতে লাগল। আর এ ভাবেই শুরু হয়ে গেল নামের সঙ্গে সঙ্গে তার শিকড়ের পরিচয়ও। আর সেটা প্রথম শুরু হয়েছিল আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ, চিনে। যদিও পরবর্তিকালে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে, উচ্চারণ দোষে, স্থান ভেদে, এমনকী দুই পদবিধারীর বিবাহের পরে ওই দুই পদবির সংমিশ্রণে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে অপভ্রংশ হতে হতে এমন এক-একটা শব্দের সৃষ্টি হতে লাগল, যার মূল খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register