Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৩৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৩৪)

কেমিক্যাল বিভ্রাট

না, তাঁর এখন কোনও ক্লাস নেই। দ্বিতীয় পিরিয়ডটা অফ। তাই খুব ধীরেসুস্থে তিনি পাতা ওলটাতে লাগলেন। দেখলেন, না। সব জায়গায় এক নিয়ম মানা হয়নি। তার মানে, শিক্ষা দফতর থেকে নামের এই পৃথকীকরণের কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। তাই যে ক্লার্ক যে-ভাবে পেরেছেন, পদবির ভিন্নতা দেখে নিজের মতো করে একই নামের ছাত্রছাত্রীদের আলাদা করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন। কেউ পৃথক করেছেন নামের পাশে ‘১’, ‘২’, ‘৩’ সংখ্যা বসিয়ে। কেউ করেছেন ‘ছোট’, ‘বড়’, মেজো’ লিখে। আবার কেউ করেছেন নামের পাশে সেই ছাত্র বা ছাত্রীর বাবা কিংবা মায়ের নাম লিখে। এটা দেখে একেবারে চমকে উঠলেন জবালা। তাঁর মনে হল, তা হলে কি আমরা অতীতে ফিরে যাচ্ছি! আগে তো এই রকমই ছিল। কারও কোনও পদবি-টদবি ছিল না। বেদ, পুরাণ, জাতক বা কথাসরিতের পাতা তন্নতন্ন করে খুঁজলেও সেখানে কারও কোনও পদবির টিকি দেখা যাবে না। আসলে, আগে ছেলেমেয়েদের নামকরণের সময় লোকে শুধু নামটাই রাখত। এবং সেটা দু’অক্ষর, তিন অক্ষর, চার অক্ষর, পাঁচ অক্ষর, এমনকী কখনও সখনও তারও বেশি সংখ্যক অক্ষর দিয়ে। বড় সংখ্যার নাম হলে উচ্চারণের সময় সেটা দুটো বা তিনটে শব্দের মতো শোনাত। কিন্তু অন্যদের থেকে আলাদা করার জন্য নিজের ছেলেমেয়েদের নাম আর কত বড় রাখা যায়! ফলে জনসংখ্যা যখন বাড়তে শুরু করল, তখন কে, কবে, কার নাম কী রেখেছে সে সব খোঁজখবর নিয়ে সেই নাম বাদ দিয়ে অন্য রকম নাম রাখার প্রচেষ্টা করা হলেও সব সময় তা সফল হত না। ক’দিন পরে আচমকা আবিষ্কার হত, আরে, এই নামটা অমুকের দিদির ছেলের না! কিংবা তমুকের দেওরের মেয়ের না! তখন এর হাত থেকে বাঁচার জন্য তাঁদের মতো তাঁদের ছেলেমেয়েদের যাতে কোনও অসুবিধেয় পড়তে না হয়, সে জন্য পরে কেউ কেউ অন্যদের থেকে আলাদা করার জন্য নিজেদের নামের পাশে তিনি কোন জায়গার লোক, বা তাঁর জীবিকা কী, অথবা তাঁর শিক্ষাদীক্ষা কতখানি, কিংবা তিনি কার সন্তান— এ সবের যে কোনও একটা উল্লেখ করতে লাগলেন। যেমন, যিনি ঘোশাল গ্রামে থাকতেন, তিনি তাঁর নামের পাশে লিখতে শুরু করলেন ‘ঘোষাল’। মুকটি গ্রামের লোকেরা তাঁদের নামের সঙ্গে জুড়ে দিতে লাগলেন ‘মুখটি’। নামের পাশে কেউ কেউ লিখে দিতে লাগলেন তাঁর জীবিকা। ফলে নামের সঙ্গে জুড়ে যেতে লাগল উকিল, স্বর্ণকার, মালাকার, ঘটক, কবিরাজ-এর মতো সব শব্দ। তখন যাঁরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াতেন, তাঁদের বলা হত— উপাধ্যায়। এটা ছিল অত্যন্ত সম্মানজনক একটি পদ। ফলে তাঁরা নামের পাশে ‘উপাধ্যায়’ লেখা শুরু করলেন। আগের প্রজন্মে যাঁরা নামের সঙ্গে অন্য কিছু লিখতেন, তাঁদের পরিবারের কেউ উপাধ্যায় হওয়ার পরে তাঁরা অনেকেই, তাঁরা যে ওই সম্মানিত ব্যাক্তিরই উত্তরসূরি, তা জাহির করতে চাইলেন। অথচ এত দিন ধরে বহন করে আসা পদবিটাও হুট করে এক ঝটকায় ঝেড়ে ফেলে দিতে পারতেন না। ফলে আগে ব্যবহৃত শব্দের সঙ্গে তাঁরা এই উপাধ্যায় যোগ করে নতুন একটি শব্দ তৈরি করে নিতে লাগলেন। মুখটিরা যেমন উপাধ্যায় যুক্ত করে মুখোপাধ্যায় হলেন, তেমনি চট্ট গ্রামের চট্টোরা উপাধ্যায় যোগ করে হয়ে গেলেন চট্টোপাধ্যায়।

ক্রমশ

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register