Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমার উমা || 26য় রাজশ্রী বন্দোপাধ্যায়

maro news
T3 || আমার উমা || 26য় রাজশ্রী বন্দোপাধ্যায়

তবে কথাগুলো নিয়ে আপনিও একটু ভাববেন৷

আজ ষষ্ঠী৷ দেবীর বোধন৷ উৎসবের জাঁকজমক নিয়ে আমরা বহু বিরূপ মন্তব্য করি৷ কেন এত আড়ম্বর কেন এত অর্থ ব্যয়! বহু মানুষ চাঁদা দিতে চান না৷ হ্যাঁ এখানে আমারও আপত্তি আছে৷ যে যার সামর্থ্য মত চাঁদা দেবেন, জোরাজোরি করে টাকা আদায় সত্যিই দন্ডনীয় অপরাধ৷ তবে যদি বলেন এই জাঁকজমক আড়ম্বর শুধুই অর্থের অপব্যয় তাহলে বলল না, এত সহজ হিসেবটা নয়! আমার সীমিত জ্ঞান এবং মানস চক্ষে যেটুকু ধরা পড়েছে সেটুকু ভাগ করে নিচ্ছি মাত্র৷ যারা মণ্ডপ বানাচ্ছেন তারা বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে আসছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষ বন্যাতে যাদের ঘর ভেসে যায়, তারা দু'মুঠো খাবারের জন্য প্রতিমা গড়ে ও থিমের মণ্ডপ তৈরি করেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পটশিল্পীদের আয়ের সংস্থান হয়। বাঁকুড়া ও দুই বর্ধমানের ডোকরা শিল্পীদের মোটা টাকা আসে। হাওড়ার জরি শিল্পীরা প্রচণ্ড লাভের মুখ দেখে৷ কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা সুখে বেঁচে থাকার সুযোগ পায়। চন্দননগরের লাইট ব্যবসায়ীদের রোজগার হয়। হুগলিতে যারা পাটের কাজ করে ও শন থেকে যারা প্রতিমার জন্য চুল তৈরি করে তাদের মুখে হাসি ফোটে। রাজ্যের বহু জেলাতে ফুল চাষ হয়, সেই ফুল পুজোর কাজে লাগে। ফলে ফুল ব্যবসায়ীদেরও রোজগার হয়। ডেকোরেটার্সদের মণ্ডপসজ্জার জন্যও অর্থ উপার্জন হয়।   যে সব চাষীরা বাঁশ চাষ করেন তারাও রোজগারের সুযোগ পায়। পুজোতে ঘট, কলাপাতা রাখার পাত্র, মাটির প্রদীপ, সরা ব্যবহৃত হয় যা কুমোররা তৈরি করে ভালো রোজগারের সুযোগ পায়৷ পুজোতে আমরা সকলে নতুন নতুন জামাকাপড় কিনতে দোকানে ভিড় করি। সকলে নতুন জামাকাপড় কেনাকাটা করার ফলে তাঁতি, দোকানদারদের লাভ হয়। পুজোতে আজকাল ছেলেমেয়েদের নানারকম ভাবে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পুজো স্পেশাল ফ্যাশনের একটা ট্রেন্ড এসেছে। যার জন্য তারা পার্লার, সেলুনে ভিড় জমায়, এতে নাপিত, বিউটিশিয়ান, প্রফেশনাল হেয়ার স্টাইলিস্ট, মেকআপ ম্যানদের রোজগার হয়। অনেক মানুষ পুজোর আগে বাড়িতে নতুন করে চুনকাম করে, অনেক মণ্ডপেও রঙ করা হয়, এতে রঙ ব্যবায়ীদেরও রোজগার হয়। কুটিরশিল্প থেকে শুরু করে হস্তশিল্প, গহনা শিল্প প্রত্যেক খাতে অসংখ্য রোজগার হয়। দুর্গাপুজোতে ফার্স্টফুডের দোকান থেকে মিষ্টান্ন দোকানগুলোতে ভিড় জমে যায়। খাবার দোকান থেকে হোটেলগুলোতে প্রচুর টাকা আসে। এছাড়াও দুর্গাপুজোর জন্য বিভিন্ন কোম্পানি লক্ষ লক্ষ টাকা স্পনসর করে পাড়ার পুজোর জন্য। ফিল্ম থেকে শুরু করে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি আমজনতার জন্য প্রচুর পরিমাণে নিত্যনতুন গান ও সিনেমা বানায়। এই মরসুম মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ও সিনেমার জন্যও একটা রমরমা সময়। মিউজিক ও সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও লাভবান হয় পাবলিশিং হাউস ও প্রিন্টিং হাউসগুলো। প্রিন্টিং হাউস থেকে পুজোর ব্যানার, কার্ড, বিভিন্ন সংঘ ও পুজো কমিটির ম্যাগাজিন ছাপানো হয়। পাবলিশিং কোম্পানিগুলো পুজো সংখ্যার জন্য পত্রিকা প্রকাশ করে যা কেনার জন্য বই দোকানগুলোতে পাঠকদের ভিড় জমে যায়। আবার দুর্গাপূজাতে বাংলার প্রত্যেক স্থানে লোকগান, ব্যালে, কীর্তন, কবি গান, সুফি গান, নাটক, বাউল, যাত্রাপালা, নৃত্যানুষ্ঠান, ম্যাজিক শো, ছৌ নাচ, মূকাভিনয়, সঙ্গীতানুষ্ঠান, যোগব্যায়াম, গল্প পাঠ ও শ্রুতিনাটক ও অর্কেস্ট্রার আসর বসে৷ যে কারণে সব রকমের সৃজনশীল মানুষ, পেশাগত শিল্পী ও স্থানীয় শিল্পীরা মনোরঞ্জনের ব্যাপক সুযোগ পেয়ে থাকেন৷ শুধু তাই নয়, দুর্গাপুজোতে দীনদুঃখী মানুষদের বস্ত্র বিতরণ করা হয়, নর-নারায়ণের সেবা করে গরীব মানুষদের খাওয়ানো হয়। কোথাও কোথাও আবার দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের বই-খাতা বিতরণ করা হয়। এককথায় বলতে গেলে দুর্গাপুজোর মতো প্রত্যেকটা উৎসব গরীব-আর্তপীড়িত মানুষদের মুখে অনেকটাই হাসি নিয়ে আসে। উৎসবকে কেন্দ্র করে মানুষের একটা মিলনক্ষেত্র তৈরি হয় যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ এক হয়ে আনন্দযজ্ঞে মেতে ওঠে। সকলের জন্যই উৎসব হয়ে ওঠে মিলন উৎসব৷ তাই এই জাঁকজমক আড়ম্বর শুধুই অর্থের অপব্যয় এমন ভাবাটা কতটা যুক্তিযুক্ত, সেটা বোধহয় পুনর্বিচার করার সময় এবার এসে গেছে, তাই না !
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register